
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে বিট অফিসার এস আই রাজীব সরদারের বিরুদ্ধে তার ছত্রছায়ায় বন্দকাটিতে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ গাজীর মাদক সাম্রাজ্য গড়ে উঠার অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ গাজী। তার বিরুদ্ধে ১০ থেকে ১২টি ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক মামলা রয়েছে। ওবায়দুল্লাহ গাজীকে বিভিন্ন সময় সাতক্ষীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিপুল পরিমাণ মাদকসহ আটক করলেও কালিগঞ্জ থানার বিষ্ণুপুর বিট পুলিশের দায়িত্বে থাকা নিয়োজিত অফিসার এস আই রাজীব তাকে আটক তো দূরের কথা তার বিরুদ্ধে কখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর ।
এলাকাবাসীর দাবি মূলত এসআই রাজিবের ছত্রছায়ায় বন্দকাটিতে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ গাজী। তার নিকট থেকে প্রতিমাসে বড় অংঙ্কের মাসোহারা ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকেন বলে এলাকায় বেশ গুঞ্জন রয়েছে এস আই রাজীবের বিরুদ্ধে । যে কারণে এলাকায় কাউকে তোয়াক্কা না করে ওবায়দুল্লা গাজী প্রকাশ্য ইয়াবা- গাঁজা বিক্রি করে আসছেন উপজেলা জুড়ে। তার বিরুদ্ধে ১০-১২ টি মাদক মামলা চলমান রয়েছে। এমনকি ওবায়দুল্লাহ তার লোকজন দিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন মাদকদ্রব্যের বড় একটি নেটওয়ার্ক ও সিন্ডিকেট। দেশের ভিতর ও পার্শ্ববর্তী ভারত সীমান্ত দিয়ে মাদকদ্রব্যের শালা নিয়ে আসেন ওবায়দুল্লাহ। পরে তা বিভিন্ন সময় ওবায়দুল্লাহ তার নিজস্ব লোকদের কাছে ইয়াবা গাঁজা মদ ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে থাকেন।ফলে উপজেলা জুড়ে ১০ থেকে থেকে ২০ টি পয়েন্টে প্রকাশ্যে মাদক বিকিকিনির হাট বসেছে । আর এই মাদকের ছোবলে পড়ে দিনকে দিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে যুব সমাজ। ফলে এলাকায় মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি ডাকাতি ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি মাদকের কড়াল গ্রাসে পড়ে কিশোর তরুণরা মাদকাসক্ত হয়ে ছিনতাই এর মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। ফলে অবনতি হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
কিশোর তরুণরা মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে গড়ে তুলেছে সক্রিয় কিশোর গাং। যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় রাতে চেতনা নাশক স্প্রে ব্যবহার করে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছেন। সম্প্রতি সময়ে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ১০-১৫ টি বাড়িতে চেতনানাশক স্পে ব্যবহার করে ডাকাতির ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে চুরি ডাকাতি ও ছিনতাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ গাজীর হুমকির মুখে পড়েছেন বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। ইউপি চেয়ারম্যান বিভিন্ন স্থানে পথসভা করে এলাকাবাসীকে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। ঠিক এই সময় মাদকের একটি মামলায় ওবায়দুল্লাহ গাজী আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে প্রকাশ্য হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কালিগঞ্জের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ প্রকাশ্য ইয়াবা গাঁজা বিক্রি বিকিকিনি করে থাকেন। এলাকায় একাধিক ব্যক্তি দিয়েও এই মাদক ব্যবসা তিনি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ফলে সুকৌশলে এলাকায় গড়ে তুলেছেন মাদক কেনা বেচার একটি সিন্ডিকেট ।এই মাদকের বিরুদ্ধে আমি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি। যার ফলে আমি সহ আমার লোকজনকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয় আমি কালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ করার সিধান্ত নিয়েছি।
মাদক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগী আকবার কবির জানান, এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবা গাজা বিক্রি হলেও বিট পুলিশের দায়িত্বে থাকা এসআই রাজিবকে কোন দিন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে দিনে রাতে ২৪ ঘন্টা গাঁজা ইয়াবা সহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়ে থাকে। তবে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। প্রতিবাদ করলেই সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ হুমকি দিয়ে থাকেন।
সাতক্ষীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এস আই বিজয় কুমার মজুমদার বলেন, ওবায়দুল্লাহ গাজী আমাদের তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। গত ২০ জুন ওবায়দুল্লাহ গাজীকে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ তাকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। স্থানীয় কালিগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকলে এলাকায় মাদক নির্মূল করা সম্ভব। আমরা জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে সবসময় অভিযান পরিচালনা করা অনেক টাফ ব্যাপার। স্থানীয় কালিগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয়টা গুরুত্ব দিতে হবে।
এবিষয়ে কালিগঞ্জ থানা পুলিশের ( উপ- পরিদর্শক) এস. আই রাজীবের কাছে মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লা গাজীর মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার বিষয়ে তার সাথে যোগসাজস রয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, আমার সাথে কোন মাদক বিক্রেতার সম্পর্ক নেই ।