
হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ থেকে:
কাবিখার ৪০ মেট্রিকটন গম উদ্ধারের ঘটনায় দুদকের কর্মকর্তা বাদী হয়ে ৬ জনের নামোল্লেখসহ অনেককে আসামী করে কালিগঞ্জ থানায় আজ বৃহষ্পতিবার মমলা করেছেন। এ ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
শ্যামনগর থেকে পাচার করা সরকারী খাদ্য অধিদপ্তরের কাবিখা প্রকল্পের ৫০টন গম মজুদ করার ঘটনায় কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুর কলোনী এলাকায় মনিমুক্তা রাইস মিলের গুদাম ঘর হতে ৪০ মেট্রিক টন গম ২৭মে উদ্ধার করেছে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ। ঘটনায় সংশ্লিষ্টতায় জড়িত সন্দেহ ভাজন হিসাবে মিল মালিক আব্দুল গফফারের পুত্র মনিরুল ইসলাম ও ম্যানেজার মুকুল হোসেন এবং শ্যামনগর উপজেলার রমজান নগর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য পবিত্র মন্ডল কে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের আজ বৃহস্পতিবার ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হুসেনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কালিগঞ্জ সার্কেলের জামিরুল ইসলামের উপস্থিতিতে বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টা হতে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নে অবস্থিত সুলতানপুর কলোনিতে মনি মুক্তা রাইস মিলের গোডাউন ঘর হইতে এ গম উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় মিল মালিক উপজেলার পূর্ব নলতা সান পুকুর গ্রামের আব্দুল গফফারের পুত্র মনিরুল ইসলাম ও ম্যানেজার আশকারপুর গ্রামের মুকুল কে আটক করে ঐ রাতেই পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। পরে বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়ে শ্যামনগর থানার রমজান নগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য পবিত্র মন্ডল কে পরানপুর তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এব্যাপারে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার সময় সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল ও থানা পরিদর্শন করেন।
একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে শ্যামনগর উপজেলায় ভেঁড়ীবাঁধ সংস্কার সহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করা হয় গম।
এবিষয়ে আব্দুল গফফার সাতনদীকে জানান আমি শ্যামনগরের মোহাম্মাদ আলীর নিকট হইতে ৪৯ টন ২’শ কেজি বিভিন্ন ডিওর গম ক্রয় করি। সমস্ত কাগজ পত্র তার নিকট আছে জানালেও অভিযানের সময় কাগজ পত্র নিয়ে পুলিশের সামনে হাজির না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি কোন কথা বলেননি। থানার ওসি তদন্ত আজিজুর রহমান জানান আটককৃতদের ৫৪ ধারায় জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউপির সদস্য পবিত্র মণ্ডল, মনি-মুক্তা রাইস মিলের ম্যানেজার মুকুল হোসেন ও মালিকের ছেলে মনিরুল ইসলাম। এছাড়াও এজাহারে মোহাম্মদ আলী, আব্দুল গফ্ফার ও মজিদ গাজীর নাম আছে। এজাহারে এই ছয়জন ছাড়াও আরও অনেকে উক্ত ঘটনায় জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুর্নীতির দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত কার্যালয় খুলনা অফিসের উপসহকারী পরিচালক নীলকমল পাল জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি মাটির রাস্তা সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ২৩ মেট্রিক টন ৩০০ কেজি গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের সভাপতি ওই ওয়ার্ড সদস্য কাজ না করে সব গম আত্মসাৎ করেন। পরে তিনি ওই গম কালীগঞ্জের মনি-মুক্তা রাইস মিলের মালিক আবদুল গফফারের কাছে বিক্রি করেন। এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গম উদ্ধার ও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী জানান, শ্যামনগর উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে এসব গম বিভিন্ন প্রকল্প সভাপতিদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো রকমে দায়সারা গোছের কাজ করে সিংহভাগ গম প্রকল্প সভাপতিরা স্থানীয় একটি চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন। বুধবার রাতে ঝড়-বৃষ্টির সুযোগে ইউপি সদস্য পবিত্র মণ্ডল তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা ৪০ মেট্রিক টন গম ভাড়াশিমুলা এলাকার মনি-মুক্তা রাইস মিলের মালিক আবদুল গফফারের কাছে বিক্রি করেন।
দুদক কর্মকর্তা আরও জানান, ওই গুদাম থেকে ৮১৭ বস্তায় প্রায় ৪০ মেট্রিক টন ৮৫০ কেজি গম উদ্ধার করা হয়। বাকি গম কোথা থেকে এসেছে, তা তদন্তে বের হয়ে পড়বে।
শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহীনুর রহসান বলেন, প্রকল্পের সভাপতিরা অনেক সময় শ্রমিকদের টাকা দিয়ে গম নিজেরা কিনে নেন। এ ছাড়া শ্রমিকেরা অনেক সময় গম নিতে অনাগ্রহ দেখানোর কারণে ফড়িয়ারা সেসব গম কিনে নিয়ে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। তবে প্রকৃত ঘটনা কী ঘটেছে, তা তদন্ত না করে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন সমন্বিত কার্যালয় খুলনার উপসহকারী পরিচালক নীলকমল পাল বাদী হয়ে গ্রেপ্তার করা তিনজনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।