
নিজস্ব প্রতিবেদক: কলারোয়ারপূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিবেশি এক যুবকের এলোপাতাড়ি হামলায় এক গৃহবধূসহ কয়েক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে পৌরসভার তুলসীডাঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত গৃহবধূ হালিমা খাতুন তুলসীডাঙ্গা গ্রামের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের স্ত্রী। ওই রাতেই হালিমা খাতুনকে তার পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এছাড়া ওই যুবকের হামলায় আহত অমিত, আরিফ, রুস্তমসহ বাকিরা বিভিন্নভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আহত গৃহবধূর স্বামী নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিবেশি প্রয়াত রবিউল নায়েবের ছেলে আলিফ (২৪) তাদের পরিবারের উপর দীর্ঘদিন নানাভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এর প্রতিবাদ করলে সে (আলিফ) অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, বাড়ির ভিতরে এবং ঘরের চালে ঢিল ছোঁড়া, গাছ কেটে দেওয়া, উচ্চস্বরে গান চালিয়ে শান্তি বিনষ্ট করে বিভিন্নভাবে তাদেরকে কষ্ট দিত। এ সকল ঘটনার ধারাবহিকতায় গতকাল (শনিবার) বিকাল ৪টার দিকে আলিফ আকস্মিকভাবে তাদের বাড়ির ভিতরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং নির্মাণাধীন ঘরের নতুন টিনের চাল ও পাইপ ভাংচুর করে। ইটের আঘাতে তার স্ত্রীর (হালিমা) কপালে জখম সৃষ্টি হয় এমনকি গৃহপালিত ছাগলও তার ছোঁড়া ইটের আঘাতে আহত হয়। আলিফ একের পর এক এভাবে আমাদের উপর অত্যাচার করলেও তার মা ও বোন তাকে নিবৃত্ত করেনি বরং আলিফের মাথার সমস্যা আছে বলে প্রশ্রয় দিয়েছে, বলেন নজরুল। তিনি আরো জানান, এঘটনার পর তার স্ত্রী বাদী হয়ে আলিফ ও তার মায়ের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রয়াত রবিউল নায়েবের পরিবারে বর্তমানে স্ত্রী, এক কন্যা ও একপুত্র বসবাস করেন। এলাকার কারো সাথে তাদের কোন সুসম্পর্ক নেই। তাদের হিং¯্রতা, ঝগড়াটে ও অসামাজিক মনোভাবের কারণে এলাকার অধিকাংশ মানুষ তাদের এড়িয়ে চলে। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশি নজরুল ইসলামের পরিবারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রবিউল নায়েবের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও মেয়র এই বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন এমনকি কলারোয়া থানার অভ্যন্তরেও সালিশ হয়। তারপরও নায়েবের পরিবার শত্রুতা মূলক মনোভাব প্রদর্শন অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় আলিফ গতকাল বিকালে নজরুলের বাড়িতে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে, এঘটনায় নজরুলের স্ত্রী হালিমা আহত হয়। অভিযোগ পেয়ে সন্ধ্যার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিস্তারিত দেখেশুনে সকলকে শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর গভীর রাতে আলিফ আবারো নজরুলের বাড়ির ভিতরে সিরামিকের প্লেট ও কাঁচের মগ ছুঁড়ে মারে। এ ঘটনায় নজরুলের পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলে আলিফ তাদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালিগালাজ করে ও ঘর থেকে লাঠি হাতে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে নজরুলের স্ত্রীসহ তাদের উপর এলোপাতাড়ি হামলা করে। এ সময় প্রতিবেশি ও পথচারিরা হামলাকারি আলিফকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালালে তাদেরকেও সে আক্রমণ করে আহত করে। সুঠামদেহী আলিফকে নিবৃত্ত করতে তারা তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে পুলিশকে খবর দেয়। প্রতিবেশিরা আরো জানান, পুলিশ এসে আলিফকে বন্ধনমুক্ত করে এবং নির্যাতনের শিকার পরিবারের কর্তা নজরুল, তার পিতা শাহ আলম ও ভাই রাসেল এবং স্থানীয় এক কলা ব্যবসায়ি সফর আলিকে স্বাক্ষ্য দেওয়ার কথা বলে থানায় নিয়ে আটকে রাখে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, হামলাকারি আলিফকে তার পরিবারের সদস্যরা মানসিক রোগী বলে দাবি করেছেন। সে বিভিন্ন সময় নিজ বাড়ীতেও ভাংচুর চালায় বলে জানান তারা। এ ঘটনায় রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আলিফের বোন বাদী হয়ে ছয় জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মীর খায়রুল কবীর জানান, হামলাকারী যুবক মানসিকভাবে অসুস্থ্য বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে তাকে নিবৃত্ত করতে রশি দিয়ে বেঁধে মারপিট করাও অন্যায়। আলিফের হামলার শিকার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন অভিযোগ পাননি বলে জানান। তিনি বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় চারজনকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।