মাসুদুর রহমান মাসুদ: করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের মধ্যে জনসাধারনের চলাচল, হাটবাজার, ব্যবসা কেন্দ্র, শপিংমল খোলা রাখার বিষয়টি সাময়িকভাবে শিথিল করা হয়। কিন্তু বিগত কয়েকদিনে সাতক্ষীরা জেলায় যেভাবে হাট বাজার, বিপনী বিতান আর রাস্তা-ঘাটে জনসমাগম ঘটে তাতে এতোদিনের সামগ্রিক প্রচষ্টা ব্যার্থ হওয়ার উপক্রম হয়। জনসাধারনের অবাধ চলাচলের সামগ্রীক চিত্র দেখে মনে হয় করোনা বিষয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা বা ভয় ভীতি কিছুই নেই। সাতক্ষীরা জেলাকে করোনামুক্ত রাখতে এতাদিন ধরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, স্বেচ্ছাসেবক সহ সচেতন মানুষেরা দিন রাত যে পরিশ্রম করেছে তার যেন কোন মূল্যই নেই একশ্রেনীর মানুষের কাছে। তাই জেলাকে করোনার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে, সাতক্ষীরার জনপদের সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই জনস্বার্থে কয়েকটি বিষয়ে নির্দ্রিষ্ট কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অন্যকথায় বলতে গেলে লকডাউন ঘোষনা করা হলো সাতক্ষীরা জেলাকে। এ লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত, পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু প্রমূখ।
সাতক্ষীরা জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ঐ সভায় গৃহীত সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে এ সকল শর্তারোপ করা হয়েছে বলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মোস্তফা কামাল প্রদত্ত জেলা প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা গেছে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় গৃহীত সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত /বিধি নিষেধ সমূহ নি¤œরুপ:
১। আন্ত:জেলা এবং আন্ত:উপজেলায় জনগণের চলাফেরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জেলার বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জেলার ভেতর থেকে কেউ জেলার বাইরে যেতে পারবেনা। এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় এবং অন্যান্য উপজেলা থেকে জেলা সদরে কেউ আসতে পারবে না।
২। জেলার ভেতরে ঢোকার প্রতিটি পয়েন্টে কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। জেলা অভ্যন্তরে প্রবেশের চারটি পয়েন্টে চেকপোষ্ট স্থাপন করা হবে। চেকপোষ্ট এ পুলিশের পাশাপাশি এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কাজ করবে।
৩। জেলা সীমান্ত দিয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে। যদি কেউ বাহিরে থেকে জেলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক আইনানুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে।
৪। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেলার প্রতিটি বাজারে কাপড়ের দোকান সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
৫। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ১০ টার আগে এবং বিকাল ৪ টার পরে হাট-বাজার, ব্যবসা কেন্দ্র, দোকান-পাট ও শপিংমলগুলো খোলা রাখা যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে দোকানদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ঐ সব দোকান ও শপিংমল সিলগালা করা হবে।
৬। তথ্য গোপন করে করোনা রোগী জেলায় অবস্থান করলে বা প্রবেশ করলে এ তথ্য গোপনকারী এবং আশ্রয় প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জনস্বার্থে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এই আদেশ জারি করা হয়েছে।