এক: সাতক্ষীরায় দু’জন করোনাক্রান্ত। এখানে পিসিআর ল্যাব বসানোর প্রয়োজন নেই। মেডিকেল কলেজ হিসাবে স্বাভাবিক ভাবেই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব বসবে। তবে সেটা এখন নয়, দেশের পরিস্থিতি ভাল হলে। কারন এটি আমদানী করার বিষয় আছে।
দুই: সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্য বিভাগে সরবরাহকৃত সকল মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মান সম্পন্ন। মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মান সম্পন্ন নয় এমন তথ্য কেউ দিয়ে থাকলে তা সঠিক নয়।
গত ২মে শনিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংএ জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদে প্রশ্নের জবাবে উপরোক্ত কথা বলেন।
শনিবার জনপ্রশাসন সচিবের প্রেসব্রিফিং এর খবর শুক্রবার জানতে পেরেই মানষিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম প্রোগ্রামে যাওয়া জন্য। আমি নিজে মেডিকেল সাইন্সের ছাত্র না হলেও কম পড়লে বুঝতে পারি। আমার ঘনিষ্ট বন্ধু ও ছোট ভাই অন্তত ছয়জন মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী পড়ান। পেশাগত কারনে আমার ডাক্তার বন্ধু ও ছোটভাইদের শরনাপন্ন হয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়-আশয় জেনে নেই। শুক্রবার রাতেই সাতক্ষীরায় সরবরাহকৃত মেডিকেল ইকুইপমেন্ট গুলো যে মানসম্পন্ন নয় এ খবরটি পেয়ে গেলাম।
পাশাপাশি করোনা রোগী চিকিৎসার জন্য ঘোষিত সাতক্ষীরা মেডিকেল করেজ হাসপাতালে জরুরী ভাবে পিসিআর ল্যাব বসানো প্রয়োজন তার শতভাগ ব্যাখ্যাও পেলাম। আর এ জন্য ধন্যবাদ জানাই ছোটভাই এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে। যে কিনা মেডিকেল কলেজে ছাত্র-ছাত্রী পড়ায়। পাশাপাশি এক বিশেষজ্ঞ বন্ধু ডাক্তার যিনি কিনা সরকারি একটি হাসপাতালের কর্নধর।
তিনজন বীর করোনা যোদ্ধা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম পরিচয় গোপন রাখলাম কারন তারা আতঙ্কিত। পান থেকে চুন খসলেই বরখস্তাদেশ আসতে পারে। তাদের সাথে আমি বলেছিলাম জনপ্রশাসন সচিবের প্রেস ব্রিফিংয়ে আমি সাতক্ষীরায় মান সম্পন্ন মেডিকেল ইকুইপমেন্ট না থাকা এবং পিসিআর ল্যাব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বসানোর বিষয়ে কথা বলবো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা তাদের বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে আমাকে শানিত করে দেন। যথারীতি জেলা প্রশাসক ঘোষিত সময় অনুসারে দুপুর একটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষের বারান্দায় হাজির। কিন্তু তখনও জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা করোনা কমিটির বিশেষ সভা চলছে। সেখানে উপস্থিত আছেন জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। বারান্দায় চলাফেরা করছি সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে। এর মধ্যে কালেক্টরেট এর একাধিক অফিসার ও কয়েকজন কলিগ রুমের ভিতরে বসে সময় পাস করার জন্য বলেন। সবাইকে বল্লাম রুমের ভিতরে একসঙ্গে অনেকে বসা নিরাপদ নয়। দুপুর একটার প্রোগ্রাম তিনটা বাজলো। কোন খবর পাচ্ছিনা। তবুও কষ্ট নেই। শরীরের মধ্যে একটা উত্তেজনা। মানসম্পন্ন মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও পিসিআর ল্যাব নিয়ে কথা বলবো।
অবশেষে ৩.১০ মিনিটে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সন্ধান পেলাম। জনপ্রশাসন সচিব, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক প্রেসব্রিফিংয়ে হাজির। কৌশল ছিল আমি প্রথমেই কথা বলবো। অনুমতি নিয়ে শুরু করলাম। বলেও ফেললাম গড় গড় করে। সচিব সাহেব থামাতে চাইলেন। সুযোগ না দিয়ে বল্লাম মাত্র ২০ সেকেন্ড বলবো। যথারীতি বল্লাম সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগে সরবরাহ করা মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য সামগ্রী মান সম্পন্ন নয়। সচিব শেখ ইউসুফ হারুন জানতে চাইলেন এ তথ্য আপনাকে কে দিয়েছেন? বল্লাম আমিতো সোর্স ডিসক্লোজ করতে পারিনা। তিনি থমকে গিয়ে বলেন, যিনি আপনাকে বলেছেন তিনি সঠিক বলেননি। কথা না বাড়িয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাবের কথা বল্লাম।
উত্তর দিতে গিয়ে সচিব মহোদয় বলেন, এখানে দু’জন করেনা রোগী। এখানে পিসিআর ল্যাব প্রয়োজন নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব বসবে স্বাভাবিক নিয়মে। আমি দ্বিতীয় দফায়ও আশাহত হলাম, কিন্তু কথা বাড়ালাম না।
কথা শুরুর সময় বলেছিলাম আপনি সাতক্ষীরার মানুষ বিষয়গুলো দেখতে পারেন। আমি আশাহত হলাম, কিন্ত হতবাক হইনি। সচিব শেখ ইউসুফ হারুন এর বাড়ী আশাশুনি উপজেলার দর্গাপুর ইউনিয়নে। সাতক্ষীরার মানুষের একটা বদনাম আছে চেয়ার পেলে নিজ জেলার নাম ভুলে যান।
বেশ কয়েকদিন আগে অনলাইনে নিউজ পড়লাম সাতক্ষীরা সদর এমপি আশ্বস্ত করেছেন যে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব বসার বিষয়ে তিনি কাজ করছেন। তালা-কলারোয়া সংসদ সদস্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন পিসিআর ল্যাব এর জন্য তিনি চিঠি চালাচালি করেছেন। এমনকি পত্রের একটা কপিও দেখলাম ফেসবুকের ওয়ালে।
দু’জন সংসদ সদস্যের চেষ্টার খবরে ভরসা পেলাম। সাতক্ষীরার সংসদ সদস্যদেরকে বলবো, আপনারা পিসিআর ল্যাব বসানোর সিদ্ধান্তে অবিচল থাকুন। আমলাদের প্রেসক্রিপশন থেকে বেরিয়ে আসুন। সাবেক সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর আ ফ ম রুহুল হক এমপি’র সাথে কথা বলুন। প্রয়োজনে চারজন সংসদ সদস্য ঐক্যবদ্ধ হোন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করুন। দেখবেন ৭২ ঘন্টার মধ্যে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপিত হবে।
তবে গত ২/৩ দিন ধরে গুঞ্জন শুনছিলাম আমলারা চাচ্ছেনা পিসিআর ল্যাব বসুক। সচিবের প্রেসব্রিফিং এর পর মনে হচ্ছে কোথাও একটা ষড়যন্ত্রের জাল বুনা হয়েছে। আর সে কারনেই পিসিআর ল্যাব আসছে না সাতক্ষীরায়। সচিব মহোদয়কে কিছু কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-
১। ‘হু’ বলেছে পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা। অর্থাৎ যত পরীক্ষা বাড়বে ততো রোগীর সংখ্যা বাড়বে এবং সংক্রমন কমবে।
২। সাতক্ষীরায় একাধিক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের নমুনা পাঠানো হয়নি। বিতর্ক সৃষ্টি হবে এজন্য নাম বল্লাম না।
৩। প্রবাসের অসংখ্য মানুষ, শ্রমজীবী হাজার হাজার মানুষ নারায়নগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাতক্ষীরায় এসেছেন। ফলে যে কোন সময় পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
৪। সাতক্ষীরার মানুষ সচেতন কম। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার র্নিঘুম প্রচেষ্টার পরও হাট-বাজার ভরে যাচ্ছে মানুষে।
ফলে পরিবেশ বলে দিচ্ছে আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি। আর এ জন্য জরুরী পিসিআর ল্যাব ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মানসম্পন্ন ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন। প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। খোদা না করুন পরিস্থিতির অবনতি হলে দায় কিন্তু কমবেশী আপনার ওপর বর্তাবে।