
জেল থেকে বেরিয়েই বাড়ীতে ডেকে নিয়ে দু’জনকে হাতুড়িপেটা করে জানান দেয় ‘আমি আংগুর মেম্বর হারিয়ে যাইনি।’ এ হাতুড়িপেটার ঘটনায় আশাশুনি থানায় দেয়া এজাহার ৪ দিন পর বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দিন গত রাতে রেকর্ড করা হয়। এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনায় মামলা রেকর্ড করতে কত দিন সময় লাগে?
মামলা রেকর্ড না হওয়ার মূলে সাতনদীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নতুন তথ্য। খোদ রক্ষক হয়েই ভক্ষকের ভুমিকায় নেমেছেন প্রভাবশালী এক রাজনীতিক। তিনি থানার অফিসার ইনচার্জকে সাফ জানিয়ে দেন আংগুর মেম্বরের নামে মামলা নয়। তার নাম বাদ দিয়ে মামলা রেকর্ড করবেন। এতেই থরো-হরি কম্পন শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তারা মামলা রেকর্ডে গড়িমসি করেছেন। তদন্তের নামে টালবাহানা করেছেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে মোবাইল ফোনে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়েছেন হাতুড়িপেটার শিকার আওয়ামী লীগ নেতা মুসা। বিষয়টি নিয়ে একাধিক পত্র পত্রিকায় খবরও বেরিয়েছে। ইন্টারনেটের সৌভাগ্যে সে খবর ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী।
কিন্তু যে কথা সেই কাজ। নেতার টেলিফোন আমার আংগুর মেম্বরের নামে মামলা যেন না হয়। বড্ড বলতে ইচ্ছে করছে কর্তৃপক্ষ কি ওই নেতার চাকরি করেন, না রাষ্ট্রের চাকরি করেন!
ঘটনা প্রবাহ:
আশাশুনি উপজেলার কূল্যা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন মুসা ও অর্থসম্পাদক রহমত সরদারকে রবিবার (২২ মার্চ) আগরদাড়ী রহিম মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীর ঘেঁষা ইটের সোলিং রাস্তায় মটর সাইকেলের গতিরোধ করে এলোপাতাড়ী হাতুড়িপেটা করে একদল দূবৃত্ত। ২২ শে মার্চ রাত সাড়ে এগারটার সময় এ ঘটনা ঘটে। অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকা মুসা ও রহমতকে তার স্বজনরা এ্যম্বুলেন্স যোগে নিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় রহমত সরদারের ছেলে ইমরান সরদার ২৩শে মার্চ রাত সাড়ে দশটায় আশাশুনি থানায় অফিসার ইনচার্জ আব্দুস সালামের হাতে তার পিতার স্বাক্ষরিত একটি এজাহার জমা দেয়। এজাহারের বর্ণনা, হাতুড়িপেটার শিকার মুসা ও রহমতের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন আদালত থেকে জামিন পেয়ে রাতে কূল্যা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন আংগুর মোবাইল ফোনে মুসা ও রহমতকে তার বাড়ীতে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে দু’জকে হাতুড়িপেটা করে। হাতুড়িপেটার নেতৃত্বদানকারী জাকির হোসেন আংগুর মেম্বরের সহদোর ও বাবলুর রহমান বুধহাটা-কূল্যা ইউনিয়নের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সমাজবিরোধী। বাবলুর রহমানের বিরুদ্ধে আছে ভায়ানক সব অপরাধের অভিযোগ।
মোবাইল ফোনে ডেকে এনে হাতুড়িপেটার মূল পরিকল্পনাকারী আংগুর মেম্বর আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমের অনুসারী হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত। তার দাপটে এলাকার মানুষ থাকে তটস্থ। সম্প্রতি আশাশুনি থানায় তার বিরুদ্ধে আইতলা গ্রামের জনৈক রবিউল ইসলাম একটি মামলা করে। ওই মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে ২০শে মার্চ। দু’দিন হাজতবাস শেষে ২২শে মার্চ রবিবার আংগুর মেম্বর আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে। ওই দিন রাতেই এ হাতুড়ি পেটার ঘটনা ঘটে। রহমত-মুসার অভিযোগ রবিউলের দায়েরকৃত এজাহারে নাম থাকায় আংগুর মেম্বর মোবাইল ফোনে বিলের মৎস খামারের বাসায় তাদের ডেকে নেয়। সেখানে গেলে তাদেরকে আংগুর হুমকি দিয়ে বলে ‘তোরাই আমাকে রবিউলের দেওয়া মামলায় ঢুকাইছিস। তোদেরকে এখন মামলার খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে।’ এ সময় মুসা ও রহমত টাকা দিতেও রাজি হয়। এরপরপরই ২০ মার্চ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
আইতলার রবিউল ইসলামের দায়েরকৃত মামলায় আংগুরকে জেলে পাঠানোর পর এলাকায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মায় অপরাধ করলে আংগুর মেম্বর পার পাবে না। কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই তার উল্টোচিত্র দেখলো মানুষ।
সর্বোপরি বর্তমান পুলিশ সুপার অপরাধীদের ব্যাপারে আপোষহীন। তারপরও কেন মামলা রেকর্ডে গড়িমসি হলো? পত্র পত্রিকার মাধ্যমেও তো পুলিশ সুপার বিষয়টি অবহিত হয়েছেন। তিনি থাকতে কেন আংগুর মেম্বররা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রামরাজত্ব কায়েম করবে? কেন তারা আইনের উর্দ্ধে থাকার সুযোগ পাবে?
আমার পৈত্রিক নিবাস কূল্যা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দাঁদপুর গ্রামে। ৮নং ওয়ার্ডেই আমি ভূমিষ্ট হই। পার্শ্ববর্তী গ্রামেই আংগুর মেম্বরের বসবাস। তার পরিবারের সাথে আমার পরিবারের নিবিড় সম্পর্ক। এরপরও সুযোগ নেই চুপ করে বসে থাকার। কলম আমাকে ধরতেই হলো, ভয়ানক এ অপরাধের বিচার চেয়ে।
হাতুড়ি পেটার নেতৃত্বদানকারী বাবলুর রহমান ইয়াবা ব্যবসায়ী। সে ছিনতাইকারী সিন্ডিকেটের সদস্য। ছিনতাই করার সময় নিজেকে ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া বাবলুর রহমানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সাতক্ষীরা সদর থানায় ৭০ হাজার জাল টাকার মামলা হয়েছে। এ মামলা হওয়ার পরও সে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। এই অপরাধ মাথায় নিয়েই সে আর এক অপরাধে জড়ালো। বাবলুর রহমানও আষ্ফালন করে বলে ‘আমি সাহেব এর লোক। আমার কিসের ভয়?’ অর্থাৎ বাবলুর রহমানও দাবী করে সে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী।
তবে আমি নিরাশ নই। শেষ ভরসাস্থল সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার। অনেক সময় প্রশাসনের মাঠ পর্যায় থেকে তার কাছে আধা সত্য কিম্বা পুরো মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়। তবে তিনি সত্য তথ্য পেলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন না। করেন না কার্পন্যও। কোন চাপ তাকে টলাতে পারেনা। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এ ধুয়াশার জট খুলে পুলিশ সুপার লুটেরাদের রাম রাজত্বের হাত থেকে স্থানীয় সাধারণ জনগনকে রক্ষা করবেন এ প্রত্যাশা ও বিশ্বাস আছে আমাদের।
মন্তব্য প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান
সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক সাতনদী।