
ই’তিকাফ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ন ইবাদত। ই’তিকাফের মাধ্যমে নিজের সত্তাকে আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে আটকিয়ে রাখা হয় এবং নিজেকে মসজিদ হতে বের হওয়া এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়।
ই’তিকাফের পরিচয়: ই’তিকাফের শাব্দিক অর্থ হলো – অবস্থান করা,কোনো বস্তুুর ওপর স্থায়ী ভাবে থাকা।
শরী’আতের পরিভাষায়- ই’তিকাফের নিয়্যতে পুরুষের ঐ মসজিদে অবস্থান করা যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামা’আতের সাথে আদায় করা হয়।
অথবা কোনো মহিলার নিজ ঘরে নামাযের স্থানে অবস্থান করাকে ই’তিকাফ বলে।
ই’তিকাফের উদ্দেশ্য: দুনিয়ার সবরমক ঝামেেলা থেকে নিজেকে মুুুুক্ত করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একমাত্র তাঁর ইবাদতে মশগুল থাকা।
ই’তিকাফের স্থান: যে মসজিদে নিয়মিতভাবে আযান, ইকামত সহকারে জামা’আতের সাথে নামায আদায় করা হয় সেই মসজিদে ই’তিকাফ করা সহীহ হবে।
★ই’তিকাফের সর্বোত্তম স্থান – মসজিদুল হারাম, এরপর মসজিদে নববী, এরপর মসজিদুল আকসা, এরপর ঐ জুম’আর মসজিদে, যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামা’আতের সাথে আদায় করা হয়। এরপর সে মসজিদে যেখানে মুসল্লির সংখ্যা বেশি।
★ মহিলাগন নিজ ঘরে নামাযের নির্ধারিত জায়গায় ই’তিকাফ করবেন। তবে নামাযের জন্য জায়গা নির্ধারিত না থাকল ই’তিকাফের বসার সময় তা নির্ধারিত করে নিলেও সহীহ হবে।
ই’তিকাফের প্রকারভেদ:
ই’তিকাফ তিন প্রকার:
১. ওয়াজিব ই’তিকাফ: ই’তিকাফ ওয়াজিব হয় মানত করার দ্বারা।অর্থাৎ মানতের ই’তিকাফ ওয়াজিব ই’তিকাফ।
মানত দুই ধরনের হতে পারে।
* এক. সাধারন মানত। যেমন, কেউ বলল,আমি অমুক তারিখে ই’তিকাফ করার মানত করলাম।
* দুই. শর্তের সাথে সম্পর্কিত মানত। যেমন,কেউ বলল, আমার উদ্দেশ্য পূরণ হলে আল্লাহর ওয়াস্তে ই’তিকাফ করব।মানতের ই’তিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য রোযা রাখা শর্ত।
২. সুন্নত ই’তিকাফ: রমাযানের শেষ দশকের ই’তিকাফ। যা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া।
মহল্লাবাসীর কোনো একজন তা আদায় করলে অন্য সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।আর কেউ আদায় না করলে সকলেই সুন্নত তরকের জন্য দায়ী হবে।
৩. নফল ই’তিকাফ: মানতের ই’তিকাফ ও রমাযানের শেষ দশকের ই’তিকাফ ব্যতীত অন্য সময়ের ই’তিকাফ নফল ই’তিকাফের অন্তর্ভুক্ত।
নফল ই’তিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত নয়।সময়ের ব্যাপারেও কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।দিনে বা রাতে যে পরিমাণ সময়ের জন্য ইচ্ছা নিয়্যত করে ই’তিকাফ করা যাবে।
ই’তিকাফের আদব সমূহ:
১. অহেতুক কথা না বলা।যথাসম্ভব পূণ্যের আলোচনায় মশগুল থাকা।
২. উত্তম মসজিদ নির্বাচন করা।যেমনঃমসজিদে হারাম বা জামে মসজিদ ইত্যাদি।
৩. বেশি বেশি করে কুরআন মাজিদ তেলোওয়াত করা।
৪. সহীহ হাদীসের গ্রন্থ সমূহ পাঠ করা।
৫. যিকর করা।
৬. ইলমে দীন শিক্ষা করা।
৭. ইলমে দীন শিক্ষা দেওয়া।
৮. সীরাতুন্নবী সাঃ অধ্যয়ন করা।
৯. শরয়ী আহকামের কিতাবাদি পাঠ করা।
১০. যে সব কথায় গুনাহ নেই এবং সওয়াবও নেই অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা।
ই’তিকাফের শর্তাবলী:
১. নিয়্যত করা।
২. রোযা রাখা, তবে নফল ই’তিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত নয়।
৩. মুসলমান হওয়া, কেননা কোনো অমুসলিম ব্যক্তি ইবাদতের যোগ্যতা রাখেনা।
৪. পুরুষের জন্য এরকম মসজিদ হতে হবে, যেখানে জামা’আতের সাথে নামায আদায় করা হয়।( নফল ই’তিকাফ যে কোনো মসজিদেই হতে পারে)
★ মহিলাগণ নিজেদের ঘরের নামায আদায়ের স্থানে ই’তিকাফ করবে।তারা প্রয়োজন ব্যতীত এ স্থান থেকে বের হবেনা।
৫. আকল বা বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া।
৬. প্রাপ্তবয়স্ক বা বালেগ হওয়া, ই’তিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত নয়।
এজন্য আকল বা বুদ্ধি সম্পন্ন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক- বালিকার ই’তিকাফও সহীহ হয়।যেমনিভাবে তাদের নামায ও রোযা দুরস্ত হয়।
৭. নারী- পুরুষ সকলের গোসল ফরয হয় এমন অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া।
৮. নারীদের হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া।( ফতোওয়ায়ে আলমগীরী)
রমাযানের ই’তিকাফের গুরুত্ব ও ফযীলত:
ই’তিকাফের ফযীলত ও উপকারিতা অপরিসীম। উম্মুল ম’মিনীন হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ” রাসুল সাঃ রমযানের তৃতীয় দশক আগমন করলে সারা রাত জেগে থাকতেন। নিজ পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে রাখতেন। (ইবাদতে) কঠোর পরিশ্রম করতেন। এবং উম্মুল মু’মিনীন থেকে দূরে থাকতেন। “(সহীহ মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,” রাসুল সাঃ প্রত্যেক রমযানে দশদিন ই’তিকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেছন, সে বছর বিশদিন ই’তিকাফ করেছেন। “(সহীহ বুখারী)
হযরত উবাই ইবনে কাব রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,”রাসুল সাঃ রমযানের শেষ দশদিন ই’তিকাফ করতেন। কিন্তু এক বছর তিনি ই’তিকাফ করেননি, সেজন্য তিনি পরের বছর বিশদিন ই’তিকাফ করেছন। “(আবু দাউদ)
হযরত ইবন উমর রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “রাসুল সাঃ যখন ই’তিকাফ করতেন, তখন তাঁর জন্য বিছানা বিছানো হতো।”(ইবনে মাজাহ)
পরিশেষে একথা বলা যায় যে,ই’তিকাফ ইসলামি শরীয়তের একটি ফজিলতময় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আমাদের সকলের ই’তিকাফ সম্পর্কে আরো যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
(লেখক: সহকারী অধ্যাপক, হাজী কেয়ামউদ্দীন মোমোরিয়াল মহিলা কলেজ।