মোমিনুর রহমান,দেবহাটা: দেবহাটার ইছামতি নদীতে বাংলাদেশ ও ভারতের স্ব স্ব সীমারেখায় একসাথে দুই বাংলার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছে লাখো ভক্তরা।
মঙ্গলবার বিকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারনী ইছামতি নদীতে দুই বাংলার মানুষের একসাথে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা। তবে প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে দু’দেশের সীমানায় লাখো মানুষের সমাগমের মধ্য দিয়ে উভয় দেশের মানুষের সৌহাদ্য ও সম্প্রীতির সেতৃবন্ধনের সৃষ্টি হলেও, বিজয়া দশমীতে ঘিরে ইছামতির দুপাড়ের মানুষের মধ্যে এবারো হয়নি কাঙ্খিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দুই বাংলার মিলনমেলা।
তবে এপার বাংলা ওপার বাংলার লোকজন এক জায়গায় মিলিত হতে না পারলেও নিজ নিজ সীমানায় মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দূর থেকেও তারা নিজেদের মধ্যে পরষ্পর হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আবেগ ঘন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ইছামতী নদীর বাংলাদেশ ও ভারতের পাড়ে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেও দুপুর পর্যন্ত নদীতে নৌকা ভাসাতে পারেনি দুই বাংলার কেউই। তবে দুপুরের পর থেকে ইছামতি নদীর শুন্যরেখা বজায় রেখে স্ব-স্ব সীমানায় দেবী দুর্গার প্রতিমা নিয়ে ভাসতে শুরু করে দুই বাংলার ভক্তদের সারি সারি নৌকা। তবে কাঙ্খিত দু’দেশের কাঙ্খিত মিলনমেলা না হওয়ায় অনেকটা হতাশা নিয়েই সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে অশ্রুসিক্ত চোখে প্রতিমা বিসর্জন করে বিষন্ন মনে ঘরে ফিরে গেছে দুই বাংলার মানুষ।
উল্লেখ্য, দেশ বিভাগের পর ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী যারা এখনও জীবিত আছেন, তারা জীবন সায়াহ্নে এসেও মাতৃভূমির মাটি একবারের মতো স্পর্শ করার জন্য এই দিনটির অপেক্ষা করে থাকেন। ইতোপুর্বে বিজয়া দশমীতে ইছামতি নদীতে এসে দুই বাংলার মিলনমেলার মধ্য দিয়ে তাই তারা সে সাধ পূর্ণ করতেন। সীমােেন্তর ইছামতী নদীর আন্তর্জাতিক সীমানা মুছে দুই বাংলার মানুষ পারষ্পারিক সৌহাদ্য ও সম্প্রীতিতে কিছুক্ষণের জন্য একাকার হয়ে যেতেন। সেসময় দু’দেশের মানুষের আবেগ আর উচ্ছ্বাসের কাছে হার মানতো সীমান্তের বেড়াজাল। ভারতের কলকাতা থেকেও জাহাজ ভাড়া করে মানুষ আসতো এই মিলনমেলায়। দুপুরের সাথে সাথে নদীগর্ভে ভরে যেত দুই পারের নৌকা, ট্রলার, কার্গো, লঞ্চ এবং জাহাজে। কেউ আসতো স্বপরিবারে, আবার কেউ আসত বন্ধুদের নিয়ে এই মিলনমেলা উপভোগ করার জন্য। প্রতিমা বিসর্জনকালে সীমান্তের ইছামতী নদীতে ভারতের টাকী ও বাংলাদেশের টাউনশ্রীপুর এলাকা পরিণত হতো দুই বাংলার মানুষের এক মিলনমেলায়। তবে গত ৬-৭ বছর ধরে এটির ব্যতিক্রম হয়েছে।
মঙ্গলবার ইছামতি নদীর প্রতিমা বিসর্জনস্থল পরিদর্শন করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন, দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) উজ্জল কুমার মৈত্র, দেবহাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী সহ বিজিবির উদ্ধর্ত্তন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া আফরীন জানান, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেবহাটার ইছামতি নদীতে দুই বাংলার প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠ ও শান্তিপুর্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা জনিত কারনে উভয় দেশীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্ব স্ব সীমারেখার মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন করেছে বাংলাদেশ ও ভারত।