= দু’টি পর্যায়ের ৩৩০টি ঘর হস্তান্তর সম্পন্ন
= ২য় পর্যায়ের ১৯৮টির নির্মাণ কাজ চলমান
= সংশ্লিষ্টদের তদারকি অব্যহত, সুষ্ঠভাবে হচ্ছে কাজ
= কাজের মান নিয়ে উপকারভোগীদের সন্তোষ প্রকাশ
= আরও ঘর বরাদ্ধের দাবী উপজেলাবাসীর।
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়ে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ৫ শতাধিক ভূমিহীন গৃহহীন অসহায় পরিবারের মুখে হাঁসি ফুঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় দু’টি পর্যায়ে এ উপজেলায় বরাদ্ধকৃত ঘরের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩৩০টি পরিবারের মাঝে নির্মিত ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকী ১৯৮টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান /প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি সহ অন্যান্যরা নিয়মিত কাজ তদারকি করছেন। কাজের গুণগত মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগী সহ অন্যান্যরা। তবে এ উপজেলায় আরও অনেক ভূমিহীন, গৃহহীন ও সহায় সম্বলহীন অসহায় পরিবার থাকায় আরও কিছু ঘর বরাদ্ধের দাবী জানিয়েছেন গৃহ প্রত্যাশী, জনপ্রতিনিধি সহ এলাকাবাসী। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, উপকারভোগী ও এলাকাবাসী সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
“ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনের পূনর্বাসন” এই লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মুজিববর্ষে “বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দেশের সকল ভুমিহীন ও গৃহহীন মানুষের একটু মাথা গোজার ঠাই তথা বাসস্থান নিশ্চিতকল্পে “মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল ভুমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০” প্রণীত হয়।
বাংলাদেশের ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল মানুষের জন্য জমি, বাসস্থান, প্রশিক্ষণ, ঋণ স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, আয়বর্ধক কার্যক্রম, বিশুদ্ধ খাবার পানির সংস্থান, বিদ্যুৎ সরবরাহ, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপনের সুবিধা প্রদান করে দারিদ্র বিমোচন করাও আশ্রয়ন প্রকল্পের লক্ষ্য।
ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্মূনল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পূনর্বাসন করা, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে গৃহীত এই প্রকল্পের আওতায় আশাশুনি উপজেলায় ঘর পাওয়া (ভূমিহীন গৃহহীন) ৫ শতাধিক পরিবার ইতোমধ্য এর সুফল পেতে শুরু করেছে।
এই প্রকল্পের ঘর নির্মাণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে তখন আশাশুনি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সহ এর সাথে সংশ্লিষ্টদের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে যথাযথভাবেই এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন উপকারভোগী সহ এলাকাবাসী।
আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ খাঁন জানান, আশাশুনি উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়নে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় দু’টি পর্যায়ে সর্বমোট ৫২৮টি ঘর বরাদ্ধ হয়। এর মধ্যে ১ম পর্যায়ে বরাদ্ধ হয় ২৬৮টি ঘর। যার মধ্যে উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নে ১০১টি, বড়দল ইউনিয়নে ৫০টি, আনুলিয়া ইউনিয়নে ২০টি, বুধহাটা ইউনিয়নে ৬৫টি, আশাশুনি সদর ইউনিয়নে ১০টি, শ্রীউলা ইউনিয়নে ৭টি ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ১৫টি।
আর ২য় পর্যায়ে বরাদ্ধ হয় ২৬০ টি ঘর। যার মধ্যে উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নে ৫২ টি, বড়দল ইউনিয়নে ১৫টি, বুধহাটা ইউনিয়নে ৩৩ টি, আশাশুনি সদর ইউনিয়নে ৬৭ টি, শ্রীউলা ইউনিয়নে ৯ টি ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ৩৬টি, কুল্যা ইউনিয়নে ৩৯টি, দরগাহপুর ইউনিয়নে ৫টি এবং কাদাকাটি ইউনিয়নে ৪টি।
তিনি আরও জানান, ১ম পর্যায়ের প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্ধ ছিল ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা এবং ২য় পর্যায়ের ২১০টি ঘরের প্রতিটির জন্য বরাদ্ধ ২ লক্ষ টাকা এবং বাকী ৫০টি ঘরের প্রতিটির জন্য বরাদ্ধ ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। দু’টি পর্যায়ে বরাদ্ধকৃত ৫২৮টি ঘরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষে ইতোমধ্যে ১ম পর্যায়ের ২৬৮টি এবং ২য় পর্যায়ের ৬২টি সহ সর্বমোট ৩৩০টি ঘরের চাবি উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং উপকারভোগীরা এসব ঘরে বসবাসও করছেন। আর ২য় পর্যায়ের বাকী ১৯৮টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান/প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সম্পূর্ন নির্মাণ কাজ শেষে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এসব ঘর সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাওয়া এসব উপকারভোগীদের মাঝে বইছে আনন্দের জোয়ার। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর পেয়ে তারা নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নও দেখছে। ঘরগুলোর নির্মাণ কাঠামো সম্পর্কে তাদের অভিব্যক্তি ছিলো সন্তোষজনক। উপকারভোগীরা বলেন, আমরা ভূমিহীন গৃহহীন মানুষ হিসেবে একসময় ছিন্নমুলের মতো মানবেতর জীবন যাপন করছিলাম। সরকার জমি ও ঘর উপহার দিয়ে আমাদের জীবনে নুতন করে আশার আলো জে¦লেছেন। আগে আমদের ঘর ছিল না, জমি ছিল না, রাস্তার ধারে খুপড়ি ঘরে বসবাস করতাম। এখন আমরা দিন মজুরের কাজ করেও বাড়িতে ফিরে পাকা ঘরে বসবাস করতে পারছি। ঘরগুলা পাকা ও টেকসই হওয়ায় দূর্যোগকালীন সময়েও আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় আমাদের ছেলে মেয়েরা ভালোভাবে লেখা পড়া করতে পারছে। আসলে এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় শোভনালী ইউনিয়নের উপকারভোগী দিনমজুর সুব্রত মন্ডল দম্পত্তির সাথে, সুব্রত মন্ডল বলেন, আমি একজন শ্রমজীবি মানুষ, আগে আমি রাস্তার ঢালে কুঞ্চির বেড়া দেয়া মাটির খুপড়ি ঘরে কোনমতে বসবাস করতাম, তাও নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে থাকি, কষ্টের ভেতরে আছি। তবে আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে নিজের স্থায়ী ঠিাকানা হয়েছে, ভবিষ্যতে নিরাপদে থাকতে পারব, এ রকম ঘর আমি বানাতে পারতাম না। তাই পাকা ঘর পেয়ে আমার খুব আনন্দ লাগছে। তার স্ত্রী আরতি মন্ডল বলেন, আগি মাটির খুপড়ি ঘরে বসবাস করতে ঝড়-বৃষ্টিতে ঝুঁকি ছিল, পাকা ঘরে সেই ঝুঁকি নেই, আমরা সুন্দর ঘর পেয়েছি, ঘরের বরাদ্ধকৃত সবকিছু বুঝে পেয়েছি। যারা ঘর বানাচ্ছে তারা খুব ভাল করে বানাচ্ছে, মিস্ত্রীর লোকজন, কন্ট্রাক্টরের লোকজন এবং উপজেলার স্যারেরা সবসময় দেখাশুনা (তদারকি) করায় ঘরের কাজ ভাল হচ্ছে। এ রকম একটা সুন্দর ঘর পেয়ে আমরা খুবই খুশি।
অপর উপকারভোগী আন্না মন্ডল বলেন, ছেলে আর আমি মিলে দু’জনের সংসার। তবে আমাদের কোন ঘর ছিল না। ঘর না থাকায় ছেলেটাকে বিয়ে দিতে পারছিলাম না। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছি, এবার ছেলেটার একটা বিয়ে দিতে পারবো। ছেলে আর বৌমাকে নিয়ে এই পাকা ঘরে সুখে শান্তিতে থাকতে পারব।
নাজমা খাতুন নামে আশাশুনির এক উপকারভোগী বলেন, ছেলে আর আমি দু’জনের সংসার। আমার নিজের কোন ঘর ছিল না, এখন আমার নিজের বলে একটা পাকা ঘর হয়েছে,আমি খুবই খুশি।
বুধহাটা ইউনিয়নের ভোটার মানিকখালী চরে বসবাসরত নাছিমা খাতুন নামের এক উপকারভোগী বলেন, ঝড়ে আমার ঘর বাড়ি বিধ্বস্থ হয়ে যায়। মাথা গোজার ঠাই ছিল না, প্রথম পার্যায়ে একটি পাকা ঘর পেয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে আবার হাসি ফুটেছে।
এ প্রকল্পের অপর এক উকারভোগী জিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী মারা গেছেন, ছেলে-মেয়ে এবং মা সহ ৪ জনের সংসার, মাত্র আড়াই শতক জমি আছে আমার। এই জমিতে সরকার একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে ঘর পেয়ে আমি খুবই খুশি।
এ উপজেলার অপর এক উকারভোগী আব্দুল মাজেদ মোড়লের স্ত্রী জ্যোৎস্ন খাতুন বলেন, পাকা ঘরে থাকব এটি ছিল স্বপের মতো। আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়ে সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। তাই আমরা তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সমাজসেবক বলেন, আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ঘর পেয়ে ভূমিহীন-গৃহহীনরা উপকৃত হচ্ছে। তবে এ উপজেলায় আরও অনেক পরিবার আছে যাদের ঘরের প্রয়োজন। তাই বরাদ্ধ আরও বাড়ানো দরকার।
এ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পকে জানতে কথা হয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সাথে। তন্মধ্যে আশাশুনি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন বলেন, ২য় পর্যায়ে আমার ইউনিয়নে ৬৭টি ঘর বরাদ্ধ হয়েছে, এখনো কাজ শুরু হয়নি, তবে উপকারভোগী নির্বাচন চূড়ান্ত হয়েছে। উপকারভোগী নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, ভূমিহীন, গৃহহীনরা আবেদন করেছে, নায়েব সেগুলো যাচাই বাছাই করেছে। এরপর কমিটির মাধ্যমে উপকারভোগী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌধুরী এই প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে বলেন, আমার জানা মতে এ ইউনিয়নে ভালোভাবেই ঘর নির্মাণ কাজ হচ্ছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষে উপকারভোগীদেরকে তাদের ঘর বুঝিয়ে দেয়া হবে।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ সিডর, আইলা, আম্ফান, নার্গিস, ফণী, ইয়াস এর তান্ডব আর পাউবো’র বেড়ীবাধঁ ভাঙ্গনে এ উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন প্রতাপনগর এর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতাপনগর ইউনিয়ন দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে থাকায় এখানে আশ্রয়ন ২ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি। দু’টি পর্যায়ে এ ইউনিয়নে মাত্র ৫১টি ঘর বরাদ্ধ হয়েছে। অথচ নদীর বাঁধ ভেঙ্গে এ ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ ভিটে মাটিহীন গৃহহীন নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাছাড়া পূর্ব থেকেই এ ইউনিয়নে অনেক ভূমিহীন গৃহহীন পরিবার আছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এ ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫শ’ পরিবারের জন্য ঘরের বরাদ্ধ দিলে ভালো হয়। এ ইউনিয়নে যথেষ্ঠ খাস জমি আছে, এক রুইয়ারবিল গ্রামেই ২শ’ পরিবারকে পূনর্বাসিত করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আশাশুনি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল ঠিকাদার কাজ করছেন তাদের মধ্যে একটি সাইটের কাজের তদারককারী মোহাম্মাদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত এই প্রকল্পের কাজ শতভাগ মানসম্পন্ন করার জন্য যা যা করার দরকার আমাদের পক্ষ থেকে তাই করা হচ্ছে। যে সকল মিস্ত্রীরা কাজ করছে তাদের কাছ থেকে আমরা নিয়মিত কাজ দেখে নিচ্ছি। গৃহহীন অসহায় পরিবারগুলোর নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত বসবাসের জন্য ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ সুন্দর ও মানসম্পন্ন করার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয়ন ২ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সভাপতি, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী এবং স্ব স্ব ইউপি চেয়ারম্যান সদস্য এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সদস্য সচীব।
আশাশুনি উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে কথা হয় কমিটির সদস্যদের সাথে। সদস্য উপজেলা প্রকৌশলী আকতার হোসেন বলেন, আমরা নিয়মিত কাজ মনিটরিং করছি, সভা করছি, কাজ ভালোই হচ্ছে।
কমিটির অপর সদস্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন সুলতানা বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত এই প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আমরা নিয়মিত কাজ তদারকি করছি। ১ম পর্যায়ের কাজ সম্পাদন শেষে উপকারভোগীদের কাছে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ের কাজও চলমান/প্রক্রিয়াধীন আছে। দু’টি পর্যায়ের কাজ সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আশা করি বাকী কাজ সঠিকভাবে সম্পাদিত হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচীব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ খাঁন বলেন, স্ব স্ব ইউনিয়নের নায়েব এবং জনপ্রতিনিধির সহায়তায় ভূমিহীন-গৃহহীনদের যে তালিকা প্রস্তুত হয়ে থাকে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি তা পর্যবেক্ষণ করে অনুমোদন দিয়ে থাকেন। জমি বুঝে পাওয়ার পর আমরা তা বাস্তবায়ন করছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আমি সহ কমিটির অন্যান্য সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষনিক কাজ মনিটরিং করছেন। ভূমিহীন গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহারের ঘর নির্মাণে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তিনি আরও বলেন, দু’টি পর্যায়ে বরাদ্ধকৃত ৫২৮টি ঘরের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩৩০টি ঘরের চাবি উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং উপকারভোগীরা এসব ঘরে বসবাসও করছেন। বাকী ১৯৮টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান/প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সম্পূর্ন নির্মাণ কাজ শেষে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এসব ঘর সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খাঁন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ন ২ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ এ উপজেলায় অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ১ম পর্যায়ের কাজে কোন অভিযোগ আসেনি, অনিয়ম হয়নি। বর্তমানেও অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কাজ তদারকি করা হচ্ছে। আমি নিজেও মাঠে কাজ তদারকি করে থাকি। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্টরা সব সময় কাজ তদারকি করছি। নির্মানাধীন ঘরগুলোও যথাসময়ে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বরাদ্ধের পর্যাপ্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরও চাহিদা আছে তবে সেভাবে খাস জমি নেই। এটি আমরা পর্যবেক্ষন করছি।
এ প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে জানতে আশাশুনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলার জন্য বলেন।
এভাবে এ উপজেলার আশ্রয়ন ২ প্রকল্প বিষয়ে উপকারভোগী সহ সংশ্লিষ্টরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে বহু মানুষ এই প্রকল্পে সুফল ভোগ করছে। ভূমিহীন গৃহহীনরা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই উপহার পেয়ে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নও দেখছেন। ঘরগুলা পেয়ে ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারগুলো অনেক বেশি উপকৃত হয়েছে এবং আয়বর্ধনমূলক নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের জীবনে স্বচ্ছলতা আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সচেতন মহল।