
আশাশুনি ব্যুরো: আশাশুনির সন্তান মামুন হোসেন জীবন যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতাকে অতিক্রম করে সফলতার মাল্য গলায় পরতে সক্ষম হয়েছেন। নানা চড়াই উৎরাই মোকাবলা করে মামুন বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন কর্তৃক ১৭তম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে গত ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ এ সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুরের সন্তান মামুন হোসেন। কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে সংসার চালানো পিতা আব্দুল হাকিম মোল্যার ছোট ছেলে মামুন ভবিষ্যতে সহকারী জজের মত ঈর্ষণীয় পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন, এমনটা অনেকেই ভাবতে পারেনি। মামুন শিশু কালে ৬২ নং গদাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। তার শিক্ষকেরা জানান, ছোটবেলা থেকেই মামুনের লেখা পড়ার প্রতি ছিল পরম আগ্রহ। আর্থিক টানাপোড়েনের সংসারে পিতামাতা ছেলেকে জীবন সংগ্রামে যোগ্য করে গড়ে তুলতে সাধ্যমত চেষ্টা করেন। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন গদাইপুর জেহের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা ও পিতামাতার দোয়া নিয়ে ২০১২ সালে তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৯৪ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। এরপরেই তার বাবা-মায়ের মামুনের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আগ্রহ বেড়ে যায়। শুরু হয় তাদের নতুন সংগ্রাম। নানা সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে ছেলেকে ভর্তি করান খান সাহেব কোমর উদ্দীন কলেজে। এই কলেজ থেকে মামুন ২০১৪ সালে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসিতে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।মামুনকে ঘিরে বাড়তে থাকে পরিবারের স্বপ্ন। মামুনের স্কুল কলেজের শিক্ষক, পারিবারিক বন্ধু ও ঘনিষ্টদের পরামর্শে তার বাবা মা সিদ্ধান্ত নেন ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। বাবা মা ও তার বড় ভাইয়ের সীমাহীন ত্যাগে মামুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-২০১৬ সেশনে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএল.বি (অনার্স) ও এলএল.এম (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। এরপর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক আইনজীবী সনদপ্রাপ্ত হন এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকায় অ্যাডভোকেট হিসাবে আইনপেশায় যোগদেন।
মামুন হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে আমি যখন ভর্তি হই তখন থেকেই বাবা, মা এবং একমাত্র ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল মামুন একদিন বিচারক হবে। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। তাদের এই তীব্র ইচ্ছা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম ছাত্রজীবন থেকে আমাকে বিচারক হতে অনুপ্রাণিত করেছে। তবে, পরপর ১৪, ১৫ ও ১৬তম বিজেএস পরীক্ষার ভাইবাতে আমি যখন অকৃতকার্য হতে থাকি তখন মা সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন, বুঝিয়েছেন ও সান্ত্বনা দিয়েছেন। অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে, ১৭তম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে আল্লাহ আমার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আমার এই সাফল্যের জন্য আমার ছাত্রজীবনের সকল শিক্ষক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আমি যেন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দেশমাতৃকার সেবা করতে পারি।