
নিজস্ব প্রতিবেদক : ছিনতাই রাহাজানিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে শতাধিক যুবক। এদের শেল্টারদাতা হলেন প্রভাবশালী রাজনীতিক জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক। ঘটনাটি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত দুই দশক ধরে আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের যুবকরা কম দামে ডলার বিক্রির ফাঁদ পেতে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই রাজাহানিতে জড়িয়েছে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের মহাজনপুর, আইতলা, মাদারবাড়িয়া, দাঁদপুর, গুনাকরকাটি, আগরদাড়ি, কুল্যা গ্রামের শতাধিক যুবক ছিনতাইকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। প্রায় দিনই এই চক্রের একাধিক বাহিনী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন লোকদের এলাকায় এনে অস্ত্রের মুখে টাকা ছিনতাই করে। কুল্যা ইউনিয়নেই অন্তত ৭/৮টি বাহিনী এই অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছে। প্রতিটি বাহিনীর আছে ৮/১০ জনের গ্রুপ। আমেরিকান ডলার, সোনা অল্প টাকায় কিনে রাতারাতি ধনী বনে যাওয়ার আশায় মধ্যম শ্রেণির ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রতারকের খপ্পরে পড়ে কুল্যা ইউনিয়নে আসে। প্রতারকরা মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কন্ঠ পরিবর্তন করে মোবাইলেই কাত করে ফেলে মানুষকে। প্রথমেই প্রস্তাব দেয় তার কাছে হাজার হাজার পিচ ডলার আছে। এটা সে ভারতের এক মাড়োয়ারী কাছ থেকে পেয়েছে। এটা সে বিক্রি করতে চায়। প্রাথমিকভাবে ২/৩টি ৫০-১০০ ডলারের নোটও দিয়ে আস্থায় আনে প্রতারক চক্র।
তারপর লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্নে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নে ছুটে আসে। এরপর কুল্যা ইউনিয়নের বিভিন্ন নির্জন জায়গায় ডেকে নিয়ে আগন্তুকদের কাছে থাকা নগদ টাকা অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করে থাকে প্রতারকরা। সর্বস্ব খুইয়ে দিশেহারা ওইসব ব্যক্তিরা যখন স্থানীয় জনগণের সাহায্যপ্রার্থী হয় তখনই সুযোগ নেয় আরেক শ্রেণির সুযোগ সন্ধানীরা। তারাও ছিনতাইকারীদের সহায়তাকারী। প্রথমেই তারা টাকা উদ্ধারের দায়িত্ব নেয়। পরে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দেয়। এরপরও কেউ থানা পুলিশ করতে গেলে ছিনতাইকারীদের শেল্টার দাতারা এগিয়ে আসে। তারা নানা রকম যুক্তি দেখিয়ে পুলিশকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন থেকে বিরত রাখে। এই শেল্টর দাতাদের মধ্যে স্থানীয় একজন সরকার দলীয় ইউপি সদস্য, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা, জেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা, একজন সাংবাদিক নেতা (কথিত সাংবাদিক)। এই শেল্টার দাতারা ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়ে থাকে।
এছাড়াও স্থানীয় আশাশুনি থানা পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা-সদস্য ওই অপরাধীদের ছিনতাই কাজে উৎসাহিত করে থাকে। তারা ছিনতাইকৃত মোট টাকা থেকে ৩০% কমিশন নেয়। তারা ছিনতাই কাজে জড়িত ৮/১০টি বাহিনীর নিকট থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়ে থাকে। এছাড়াও ছিনতাইয়ের ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে অথচ মামলা হয়নি এমন সব ঘটনার ক্ষেত্রে ছিনতাইকারীদের বাড়ি বাড়ি হাজির হয় কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা। তারা শুরু করে চাঁদাবাজি। মাথা পিছু ৫/১০ হাজার টাকা প্রদানের জন্য অপরাধে জড়িতদের সময় বেঁধে দেয়। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। তবে কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন নজিরও আছে। বাহিনীগুলোর মধ্যে ববিউল ইসলাম শান্ত বাহিনী, জুয়েল-রেজাউল বাহিনী, সালাম-জাকির বাহিনী, রাশি-অজিয়ার খোকন বাহিনী, কামাল-সিরাজ বাহিনী, বাবলু বাহিনী উল্লেখযোগ্য। এর বাইরেও ৫/৭টি বাহিনী রয়েছে। স্থানীয় একজন কৃষকলীগ নেতাও এই ছিনতাই চক্রের শেল্টারদাতা হিসেবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।