
“পুলিশ-র্যাবের সোর্স পরিচয়দানকারী আনারুল নাশকতা মামলার চার্জশীট ভুক্ত আসামী। সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা সহ মুক্তিযোদ্ধাকেও লাঞ্ছিত করেছে সে। মাদক কারবারী সহ মাদকাসক্তদের নিয়ে বাহিনী গড়ে তুলেছে আনারুল। রাত হলেই বসান জুয়ার আসর। আপন সহোদর মতিয়ারের শেল্টারে থাকে আনারুল।”
নিজস্ব প্রতিবেদক: জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে জনগণের উপর খড়গ চালাচ্ছেন নিজে ও নিজের ভাই মিলে। মাকদ সিন্ডিকেট, অবৈধ স্বর্ণ ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা জুয়া খেলা, জমি দখল, লুটপাট সহ হেন অপকর্ম নেই যা তারা করেন না। তাদের অত্যাচারে মুখ খুলতে সাহস পায় না এলাকার মানুষ। তাদের অপকর্মের বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলায় জড়ানো এমনকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে কণ্ঠ রোধ করেন তারা। কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভুল তথ্য দিয়ে এলাকার মানুষদের ধরিয়ে দেওয়ার পর ছাড়িয়ে দেওয়ার বা মামলা নিষ্পত্তি করে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। বলছি আশাশুনি উপজেলার ২নং বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মতিয়ার ও তার ভাই আনারুলের ত্রাশের রাজত্বের কথা। তাদের এসব অপকর্মের সহযোগী হিসাবে কাজ করে আব্দুর রহমান গাজীর পুত্র বাবু, পাইথলী গ্রামের আনার, আনারের পুত্র শফিকুল, শফিকুলের পুত্র শাহিন। র্যাবের সোর্স পরিচয়দানকারী জনৈক নামমুলও তাদের সহযোগী হিসাবে কাজ করে। সরেজমিনে বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান ও জনপ্রতিনিধি সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে এমন ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের মৃত: গোলাপ গাজীর পুত্র মোঃ মতিয়ার ও আনারুল। মৃত গোলাপ গাজীর কোন সহায় সম্পদ না থাকলেও ২০১১ সালে বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বর নির্বাচিত হওয়ার পর কপাল খুলতে শুরু করে মতিয়ারের। মতিয়ার ও তার ভাই আনারুল মিলে এলাকায় গড়ে তোলেন ত্রাশের রাজত্ব। অবৈধ পন্থায় মালিক হয়েছেন অনেক অর্থ বিত্তের। এলাকার মাদকসেবী চক্র তাদের প্রধান সহযোগী। সন্ধ্যা নামলেই তাদের (মতিয়ার-আনারুল) বাগানে বসান জোয়ার আসর। এলাকার এবং বহিরাগত জুয়াড়ীদের নিয়ে রাতভর চলে জুয়া খেলা। জুয়া খেলা ছাড়াও রয়েছে জাল টাকার ব্যবসা। হঠাৎ হঠাৎ মতিয়ার ও আনারুল এলাকা থেকে উধাও হয়ে যান। কথিত আছে সেসময় জাল টাকা আমদানি করতে বাইরে চলে যান তারা। জেলার বাইরে বিভিন্ন হোটেল ও দেশী বিদেশী জাল টাকা চক্রের সাথে তাদের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। জাল টাকার ব্যবসা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় গণধোলাই ও জনগণের তোপের মুখে পড়েছেন মতিয়ার, তার ভাই আনারুল সহ তাদের সহযোগীরা। জাল টাকার ব্যবসা করার কথা বলে মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের জনৈক ভুট্টুর নিকট থেকে হাতিয়ে নেন ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা। শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদের আমলে শোভনালীতে জাল টাকার ব্যবসা করতে যেয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ার পর গণধোলাই খান মতিয়ার। পরে বদর তলায় জাল টাকার ব্যবসা করতে যেয়ে মেম্বর মতিয়ার ও আনারুলের প্রধান সহযোগী রফিকুল ও রেজাউল স্থানীয় জনতার হাতে আটক হন। পরে আনারুল থানা পুলিশের খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে স্থানীয় নারীদের তোপের মুখে পড়েন।
মেম্বর মতিয়ার ও তার ভাই আনারুল গংদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতিবাদকারীদের হয়রানী করান তারা। তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় কুন্দুড়িয়া গ্রামের ফজর আলী সরদারের পুত্র সাহেব আলীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে আনারুল-মতিয়ারের কোন কাজে বাঁধা না দিতে হুমকী দেওয়া হয়। কামালকাটি গ্রামের বিশ্বজিৎকে মতিয়ার ও আনারুলের সহযোগী শফিকুল বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মাদক দিয়ে ষড়যন্ত্র করে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়। এছাড়া পাইথলী গ্রামের দুলাল দেবনাথের পুত্র তাপস দেবনাথকে ধর্ষণের মামলায় ফাসিয়েছেন তারা। দৈনিক সাতনদীর অনুসন্ধানকালে এসব ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবার এমন লোহমর্ষক ঘটনার বর্ণণা দেন।
ইউপি সদস্য মতিয়ার ও তার ভাই আনরুল জামায়াত নেতা হয়েও স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ও শীর্ষ জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় দাপটের সাথে ত্রাশের রাজত্ব পরিচালনা করছেন। ২০১৩ সালে জামায়াতের নাশকতার সময় আনারুলের নেতৃত্বে কামালকাটি গ্রামের আনন্দ পাড়ের বাড়িতে হামলা করেন জামায়াত কর্মীরা। বুধহাটা বাজারে ভাংচুর ও বিভিন্ন গাছপালা কেটে নাশকতা করে তারা। সেসময় পুলিশ বাদী হয়ে আশাশুনি থানায় আনরুল সহ জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা দায়ের করেন। যাহার নং জি,আর ৩০৩/১৩ (ক), আশাশুনি থানার মামলা নং ০২, তারিখ ০৫/১২/২০১৩। যে মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২ নং বুধহাটা ইউনিয়ন পরিদষদের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোছাঃ মমতাজ বেগম বেগম বলেন, “মতিয়ার ও তার ভাই আনারুল জামায়াত-শিবিরের সমর্থক। আনারুলের বিরুদ্ধে আগেও মামলা ছিল। তারা দুই ভাই মিলে এলাকায় জুয়ার আসর বসায় এবং জাল টাকার ব্যবসা করে। এলাকার মাদকসেবীদের তারা শেল্টার দেয়। আমরা এসব কাজে বাধা নিষেধ করলে খুন জখম ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকী দেয়।” একই ভাবে বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন সানা সাতনদীকে বলেন, “ মেম্বর মতিয়ার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে ও তার ভাই আনারুল মিলে এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। মাকদসেবীদের আশ্রয় প্রশ্রয়, জাল টাকার ব্যবসা ও জুয়া খেলার ব্যবসা করে যুব সমাজকে নষ্ঠের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নয়তো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে হয়রানী করছে। এর অবসান হওয়া উচিৎ। এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করেও অভিযুক্ত মেম্বর মতিয়ার মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।