
সচ্চিদানন্দদেসদয়,আশাশুনি থেকে:
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার এগারটি ইউনিয়নে ভুমিহীনদের নামে জমি বন্ধোবস্ত দেওয়ার নামে চলছে নানা রকমের অর্থবাণিজ্য আর এ সুযোগে ভুমিহীনরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের পাওনা থেকে। অভিযোগকারীরা জানান, বুধহাটা, কুল্যা, বড়দল, শ্রীউলা সহ বাকী ইউনিয়নের সরকারী জায়গা বন্দোবস্তের নামে হাজার হাজার টাকা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন উপসহকারী ভুমিকর্মকর্তা ও তার সহকারী, উপজেলা এসি ল্যান্ড অফিসের দূর্ণিতি পরায়ন কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে চলছে ঘুষ বাণিজ্য ।
যদিও ভূমিহীনদের জন্য এই ভূমি বন্দোবস্তের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে ভূমিহীনরা কেউ এই বন্দোবস্ত পায় না। জমি পায় যারা নির্দিষ্ট অংকের টাকা ব্যয় করতে পারে। যার মাঝে তহশিলদারকে দিতে হয় ১০ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার পর্যন্ত। যার ক্ষমতা বেশী তার জন্য সব।
জানা যায়, এই টাকার ভাগ পায় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও তার সহকারীরা।উপজেলা এসিল্যান্ড অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও জেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
ভূমি বন্দোবস্তের জন্য কয়েক হাজারের মতো বন্দোবস্ত ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। একই বন্দোবস্ত টাকার বিনিময়ে একাধিক জনকে দেওয়ার নজীরও রয়েছে। বাকী গুলোও বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া ভূমি অফিসে অনিয়মের কারণে একজনের দখলভূক্ত জায়গা অন্যজনকে দিয়ে সমস্যা তৈরী করে দুই পক্ষ থেকে আবার টাকা আদায় করছে এমন অভিযোগ রয়েছে। একজনের জন্য দেড় একর এক নথিতে বন্দোবস্তের কথা থাকলেও একেকজন অসংখ্য নথির মাধ্যমে একাধিক জায়গা বন্দোবস্ত নেওয়ার অসংখ্য নজীর রয়েছে। এছাড়াও নিয়ম হলো শুধুমাত্র ফসলী জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার। কিন্তু, ডুবো চর, নদীর চর এমন সব রকম জমি এমনকি নদীর পানিও বন্দোবস্ত দিতে দেখা গেছে।
ভূমি অফিসের দুর্ণীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা ১ টাকার জায়গা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে ক্ষ্যান্ত হচ্ছে না। বরং, ভূমি বন্দোবস্তের সকল কাগজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ১০ টাকা জমির দাখিলার জন্য নিচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকা। যদিও দাখিলা’র জন্য আগের ঘুষের রেইট ছিল ৫০০ টাকা। কিন্তু, বর্তমান আশাশুনির বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমিকর্মকর্তারা অলিখিত রেইট বাড়িয়ে ২০০০ টাকা করেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন তশিলদার বলেন, দালাল দিয়ে জমির বন্দোবস্ত করে ভুক্তভোগিরা। যে দালালের মাধ্যমে জমিটির বন্দোবস্তের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, তাদের কেউ নিতে পারে। আবার সকল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য ইউনিয়ন ভূমিকর্মকর্তা ১০ টাকার জায়গায় ২০০০ টাকা নেওয়ার পর জমি বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সার্ভেয়ার প্রতি দাগের জন্য ২ হাজার থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন।
নিয়ম হলো বন্ধোব্যস্ত জায়গা অবশ্যই চাষ যোগ্য হতে হবে। কিন্তু, সরজমীনে গিয়ে দেখা যায়, কাগজ হাতে আছে কিন্তু জমি পানির নিচে অথবা জমি চাষ যোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে রেহাই পায়নি ওয়াপদার জমিও।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, তিন স্তরে টাকা নেওয়া হলেও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় জায়গাই পানির নিচে। ধান বা মাছ চাষ উপযোগী হওয়ার পূর্বেই বিভিন্ন ধরনের নকশা তৈরী করে তারা জমি বন্দোবস্ত দিচ্ছে। সরকারকে বুঝান হচ্ছে ইতিমধ্যে চর জেগে উঠেছে। বাস্তবে সেখানে কোন চর জাগেনি। এমন অনিয়মের মাধ্যমে প্রশাসনের উর্ধ্ব থেকে নিম্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। তিনি উল্লেখ করেন,প্রথম পর্যায়ে ফরম পূরণ করার সময় কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয় ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা বা দালালদের। পরবর্তীতে সকল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে জেলা পর্যায় থেকে যখন আসে তখন ডিসিআর কাটতে গিয়ে দিতে হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এরপর রেজিষ্ট্রী করতে নেওয়া বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে দেওয়া হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। রেজিষ্ট্রী হওয়ার পর দাখিলার জন্য দিতে হয় ১২ শ’ টাকা। যদিও এক সময় ছিল ৫-৬ শ’ টাকা। কিন্তু বর্তমানে ১২ শ’ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এরপরও আবার সার্ভেয়ারকে দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা চূড়ান্ত ভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। বন্দোবস্ত পাওয়ার পর বুঝানো হয়, খুব শীঘ্রই জায়গাটিতে চর জাগবে। সেই আশায় মানুষ বোকার মতো বন্দোবস্ত নিচ্ছে। কিন্তু তাদের জায়গা আসলে নদীর মধ্যে না কোথায় তারা জানে না। হয়তো চর জেগেছে ১০০ একর। কিন্তু, নকশা তৈরী করার সময় ন্যূন্যতম ৫০০ শত একরের নকশা তৈরী করছে। বন্দোবস্ত নেওয়া গ্রহিতা হিসেবে নেওয়ার আগে কেউ জানে না তাদের জায়গা কোথায় পড়বে। নেওয়ার পর দেখে তাদের জায়গা নদীর মাঝে। অথবা সে জমি অন্য কেউ ভোগ দখল করছে।