সচ্চিদানন্দদে সদয়,আশাশুনি প্রতিবেদক: জেলা পরিষদ এর সার্ভেয়ারের সহযোগিতায় অনুমান ৫ লক্ষ টাকার বৃহদাকারের শিশু গাছ কেটে ২/৩ অংশ লোপাট এবং ডাল বিক্রয়ের লক্ষ টাকা আত্মসাতের ঘটনার ১৬ দিন অতিক্রান্ত হলেও কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের বুধহাটা-শোভনালী সড়কের শ্বেতপুর গ্রামের মধ্যে ন্যাজারিন মিশনের কাছে এ ঘটনা ঘটেছে।
কার্পেটিং সড়কের পাশের কাচা অংশ ও স্লোব জুড়ে বৃহৎ আকৃতির দীর্ঘ কালের গাছটি এলাকার মানুষের কাছে কালের স্বাক্ষী হিসাবে বিবেচিত ছিল। গাছের আকৃতি এতটা বৃহৎ ছিল যে এলাকা জুড়ে ছায়া বিতরণ করে আসছিল। গাছের কাছ থেকে অনেকটা দূরে বসবাসকারী মোহাম্মদ ঢালীর পুত্র রেজাউল করিম গাছের কাছে ভবিষ্যতে বাড়ি করবেন যদি কোনদিন গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙ্গে পড়ে তবে তার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এমন ভবিতব্য ক্ষতির কথা তুলে ধরে গাছ কেটে নেওয়ার আবেদন করেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদে। জেলা পরিষদ গাছ কাটার প্রয়োজন অনুভব করলে বিধি মোতাবেক টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রয় করতে পারেন। কিন্তু না টেন্ডার আহবান করা হয়েছে, না কাউকে কেটে নিতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এলাকার অনেকে জানান, তারপরও ধুরন্ধর রেজাউল জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামানের সাথে যোগসাজস করে আর্থিক চুক্তিবদ্ধ হয়ে জন মজুর লাগিয়ে ২০ এপ্রিল করোনা কালীন ছুটির সুযোগ কাজে লাগিয়ে গাছ কাটা শুরু করেন। বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করিয়ে গাছ কাটা হয়।
বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিঃ আ ব ম মোছাদ্দেক জানতে পেরে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে মোবাইলে অভিযোগ করেন। কিন্তু গাছ কাটা বন্ধ হয়নি। বরং আরও দ্রুততার সাথে গাছের ডাল কেটে লক্ষাধিক টাকার ডালপালা বিক্রয় করে দেওয়া হয়। এরপর বৃহৎ বৃক্ষের শাখা ডালগুলো যেগুলো বড় বড় গাছের লগের সাইজের, মূল্যবান লগাকৃতির ডালগুলো ট্রাকে ভরে ঢাকায় চালান করা হয়। গাছের গোড়ার (মুড়ো) মন মন কাঠ বিক্রয় করে দেওয়া হয়। মূল লগটি এতটা বড় যে সেটি সহজে ট্রাকে উঠানো সম্ভব নয়, সেজন্য সেটিসহ কয়েকটি লগ ট্রাকে উঠানোর সুযোগ না থাকায় এবং বিশেষ করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করায় সেগুলো পাচার করা হয়নি। তবে একাধিক সূত্রে জানাগেছে, গাছের ডাল বিক্রয়কৃত লক্ষাধিক টাকা এবং ট্রাকে করে পাচার করা গাছের শাখার লকগুলোর বিক্রয় লব্ধ আরও কয়েক লক্ষ টাকা রেজাউল ও সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামান ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রেজাউল গাছ কাটার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে যে দরখাস্ত করেছিলেন, তাকে ২৯/১২/২০ তাং জেলা পরিষদের কর্মকর্তাগণের রিসিভের স্বাক্ষর স্বারক নম্বর রয়েছে। সবশেষ তারিখ লেখা আছে ১৪/১/২১। অর্থাৎ কয়েকদিন দরখাস্তটি দপ্তরে ঘোরাফেরা করেছে, তবে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। সিদ্ধান্ত না হলেও গোপনে গোপনে আঁতাতের মাধ্যমে গাছ কেটে লোপাটের কর্মযজ্ঞ শুরু করা হয়। যেটি বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে চলে আসে। ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক গাছ কাটা বন্দ না হওয়ায় কয়েকবার তার প্রতিনিধি ঘটনাস্থানে পাঠালে ডাল বিক্রয়ের এক লক্ষ টাকার ৪০ হাজার টাকা গাছ কাটার শ্রমিকদের মজুরি দিয়েছে, বাকী ৬০ হাজার টকা সার্ভেয়ার হাসানকে দিয়েছে বলে রেজাউল তাদের কাছে ব্যক্ত করেন বলে জানাগেছে।
বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান আ ব ম মোছাদ্দেক বলেন, গাছ কাটতে দেখে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে জেলা পরিষদের অনুমতি নিয়ে এবং সার্ভেয়ার হাসান গাছ কাটছে বলেছে বলে তারা জানায়। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে মোবাইলে জানাই। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে গাছ কাটা বন্দ না হওয়ায় আমি আর যোগযোগ করিনি।
সার্ভেয়ার হাসান সাংবাদিকদের জানান, অবৈধ ভাবে গাছ কেটেছে রেজাউল ইসলাম। খবর প্রকাশের পর গাছের যে অংশ ঘটনাস্থলে ছিল সেগুলো জব্দ করে জেলা পরিষদে নেওয়া হয়েছে। রেজাউলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আহসান হাবিবের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে প্রথমদিন তিনি জানিয়েছিলেন, গাছ কাটা কেন, বিনা অনুমতিতে ডাল কাটার সুযোগ নেই। শ্বেতপুরে কোন গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমাদের অজান্তে হয়েছে। আমি লোক পাঠাচ্ছি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
রক্ষক হয়ে ভক্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামান কিভাবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই “গাছ খেকো কর্মী” এর মত লক্ষ লক্ষ টাকার বৃহদাকৃত্রির গাছ দিবালোকে কেটে হজম করার মত নাটক মঞ্চস্থ করার সাহস পেল সেটি সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। গাছ জব্দ করা হয়েছে, এমন সস্তা বক্তব্য সত্যি হাস্যকর, কেননা, গাজ জব্দ করার সাথে সাথে আইনগত কোন পদক্ষেপ কেন নেওয়া হয়নি? এমন প্রশ্ন সামনে আসা স্বাভাবিক নয়কি? গাছা হয়েছে ১৬ দিন পার হয়ে গেছে, পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে ৮ দিন হয়ে গেছে। তার পরও কেন কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ? এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে এলাকাবাসী উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ ও যথাযথ দৃশ্যমান ব্যবস্থা দেখতে আশাবাদী।