হাফিজুর রহমান : করোনা পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় আম নিয়ে চরম দূঃশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। আম বাগানগুলিতে এখন গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ আমে ভরপুর। ফলন নিয়ে হতাশ না থাকলেও করোনার প্রভাবে বাজারের পরিস্থিতি ভালো থাকবে কি না তা নিয়ে হতাশায় রয়েছে। সাতক্ষীরার আম দেশের গন্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও বিদেশে ভালো সুনাম কুড়ালেও এবার বিদেশি বাজার নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। করোনা ভাইরাসের কারণে লক ডাউনে থাকায় চলতি মৌসুমে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে এ বছর উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ৫’শ আম বাগান নিয়ে ব্যবসায়ী ও চাষীরা আশা জাগিয়েছিল। বর্তমান কালিগঞ্জ উপজেলার আম বাগান গুলোতে নানা জাতের আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। জৈষ্ঠ্য মাসে বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম। আম উপজেলায় মৌসুমী অর্থকারী ফসল হওয়ায় এই আমকে ঘিরেই উপজেলার মানুসের জীবন জীবিকা অনেকাংশ নির্বাহ করে। কিন্তু করোনার কারণে এ অঞ্চলের মানুষের মুখের হাসি যেন মলিন হয়ে গেছে।
কুশুলিয়ার আম ব্যবসায়ী রহমত, পারুল গাছার আব্দুস সামাদ, রবিউল ইষলাম চাঁচাই, আতিয়ার রহমান মেম্বর সহ অধিকাংশ বাগান মালিক ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বছর পর্যাপ্ত আমের বাজার নিয়ে সঙ্কায় রয়েছেন বাগান মালিকরা। আম মৌসুম জুড়ে লেনদেন হয় প্রায় কোটি টাকার মত। এতে উপজেলার অর্থনৈতিক কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়। শীতের শুরুতেই মুকুল আসার আগেই মালিকরা ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীদের নিকট বাগান বিক্রি করে দেয়। এবার বাগান কিনে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। করোনা পরিস্থিতির কারণে চরম দুঃচিন্তায় রয়েছে উপজেলা আম চাষী ব্যবসায়ীরা। মৌসুমে এই সময়টাতে কালিগঞ্জ উপজেলার আম বাজার ও আড়ৎ গুলোতে আম বেচা কেনাকে ঘিরে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য লক্ষ করা গেলেও এবার নেই কোন কর্ম ব্যস্ততা আছে শুধু হতাশা। এতদিন গুটি ঢাকায় পাঠানো হতো শত শত ট্রাক কিন্তু করোনার কারণে গুটি আম ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হয়নি। তারপরেও করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে মে মাসের প্রথম থেকেই কিছু সংখ্যক অসাদু বাগান মালিক ব্যবসায়ী ফড়িয়ারা কাচা আম পেড়ে কার্পোরাইট মিশ্রিত করে প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসনের চোক ফাঁকি দিয়ে ট্রাক ভরে ঢাকায় পাঠাচ্ছে।
গত ৫ মে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক জরুরী সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী মে মাসের ২য় সপ্তার পর হতে গোবিন্দ ভোগ, গোপাল ভোগ আম বাজাররাত করার কথা থাকলেও সে আদেশ অমান্য করে উপজেলা জুড়ে চলছে আম পাচারের মহা উৎসব।
তবে এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন মে মাসের ২য় সপ্তাহ হতে গোপাল ভোগ, গোবিন্দ ভোগ আম পেড়ে বাজার জাত করতে পারবেন। তবে রাইপেন এবং ইকোপেন দিয়ে কম ক্ষতিকারক আম পাকিয়ে তা বাজারজাত করলে ক্ষতি নেই। তবে বিষাক্ত কার্বোরাইট দিয়ে পাকানো আমে মানব দেহের ক্ষতি হতে পারে। যদি কোন ব্যবসায়ী অসৎ উদ্দেশ্যে এসমস্ত অপদ্রব্য প্রয়োগ করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান সব কিছু মিলিয়ে এবার আমের ভালো ফলন আশা করা যাচ্ছে তবে করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা অনেকটা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।