
নিজস্ব প্রতিবেদক: আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি। গতকাল বুধবার বেলা ১২:৪৫ মিনিটে আইনজীবী সমিতির নীচতলায় স্থাপিত আইনজীবী সমিতির আহবায়ক কমিটির নামফলকে কালি দিয়ে ঢেকে দেয় কতিপয় আইনজীবী।
এ ঘটনার জেরে জেলা আইনজীবী সমিতির আহবায়ক অ্যাড. শম্ভু নাথ সিংহ সাতক্ষীরা সদর থানায় অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ঘটনায় আহবায়ক বাদি হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
বিবদমান দু’পক্ষের বিরোধের জেরে অশান্ত হয়ে উঠে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি। ফলে সাতক্ষীরার এমপিদ্বয়, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিশিষ্ট আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ৭ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহবায়ক কমিটির ৭ সদস্যর মধ্যে তিনজন সদস্য নানা কারণে বাদ দেয় আহবায়ক কমিটি। ফলে পুনরায় স্থীতিশীলতা আসে আইনজীবী সমিতিতে।
আগের কমিটিগুলোর নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছা চারিতার অভিযোগে অশান্ত হয়ে উঠে সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতি। সমিতির আয় ও ব্যয় সমান হওয়া, আয় থেকে ব্যয় বেশি হওয়ারও অভিযোগ আছে। সেসব অভিযোগ বার কাউন্সিলের অধীনে বিবেচনাধীন আছে। স্বচ্ছ চরিত্রের আহবায়ক কমিটির সদস্যদের চেষ্টা দীর্ঘ দিন পর জেলা আইনজীবী সমিতির ব্যাংক একাউন্টে মাত্র ১২১ দিনেই যোগ হয় ১কোটি ৯২লক্ষ ৪৬হাজার ৮০০টাকা। ফলে সাধারণ সদস্যবৃন্দ খুশি। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় একটি সাধারণ সভার আয়োজন করে আহবায়ক কমিটি। এ সভার আয়োজনে সম্মতি জানিয়ে ২৭৩জন আইনজীবী স্বাক্ষর করেছেন। আজকের আয়োজিত সাধারণ সভার মূল এজেন্ডা হলো সমিতির সদস্যদের সঞ্চয় তহবিল বৃদ্ধি করা, সঞ্চয় তহবিলে অনিয়মিত কোন সদস্য আছে কিনা তা যাচাই-বাছাইয়ে কমিটি গঠন করা, নিয়মিত সদস্য একই পদে দুই বারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন কিনা তা সিদ্ধান্ত নেওয়া, গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন আয়োজনসহ ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল অডিট করা। আইনজীবীদের দাবি এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে সুষ্ঠ সিদ্ধান্ত আসলে কোন কোন পক্ষ ক্ষতির শিকার হবে। ফলে বুধবার দুপুরে আহবায়ক কমিটির নাম ফলকে কালি লেপন করে আইনজীবী সমিতিকে ধারাবাহিক ভাবে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির আহবায়ক সরকারি কৌশুলি অ্যাড. শম্ভু নাথ সিংহ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সাতনদীকে জানান, সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতিতে বিবদমান দুটি গ্রুপ আছে। একের পর এক অর্থ তছরুপ, টাকা আত্মসাৎ, মারামারি বিভিন্ন গোলযোগের প্রেক্ষিতে মার্চের ২২ তারিখে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে সাতক্ষীরা সদর ২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, তালা-কলারোয়া ০১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ উভয় পক্ষের শতাধিক আইনজীবীর উপস্থিতিতে আমাকে আহবায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে আমি ওই কমিটিতে যথাযথভাবে কার্যক্রম চলাকালীন তিনজন সদস্য বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে আমি তাদের বাদ দেই। এছাড়ও দীর্ঘদিন ধরে সমিতিতে কোন কমিটি কি করেছে আমি তা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, মাননীয় সংসদ সদস্য, সচিব সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি।
সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির আহবায়ক আরও জানান, আমি দায়িত্বে ১২১ দিন থাকা কালে ১কোটি ৯২লক্ষ ৪৬হাজার ৮০০টাকা আমি ব্যাংকে জমা দিয়েছে। এই টাকা বিগত দিনের মত যেন কেউ তছরুফ করতে না পারে সে কারণে আমি বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সাধারণ সভার আয়োজন করি। এই সাধারণ সভা আয়োজনের জন্য ২৭৩জন আইনজীবী সম্মতি জানিয়ে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেছে। এর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন। সাধারণ সভায় কোন অবস্থায় যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আজ (বুধবার) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করি।
বুধবারে দুপুরের অপ্রীতিকর ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আমার সরকারি দায়িত্ব পালন করা কালীন আজ(বুধবার) বেলা ১২:৪৫ মিনিটে আমাদের বারে ডিসবারকৃত সদস্য শাহেদুজ্জামান শাহেদ, আমিনুর রহমান চঞ্জল, সাইদুজ্জামান জিকো, সাইদুর রহমান সাইদসহ আরও কয়েকজন সমিতি ভবনে আহবায়ক কমিটির যে নামফলক ছিলো সেটিতে কালি লেপন করে নাম মুছে দিয়েছে। আমাদের বারের কর্মচারীদের হুমকি ধামকি দিয়েছে। বারের ক্যাশে লাথি মেরেছে। সাধারণ আইনজীবীদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছে। এই বহিঃষ্কৃত সদস্যরা সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির আইন-শৃঙ্খলার অবনতির চেষ্টা করেছে। এরা সবাই বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ধোকা দিয়ে টাকা নিয়েছে। যেগুলো বার কর্তৃপক্ষ আসার পরে তাদের একাধীকবার ডিসবার করা হয়েছে।
একটি দুষ্টচক্রের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এদের গডফাদার আছে। সেই গডফাদার আইনজীবী সমিতিকে কুক্ষিগত করে সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির যে টাকা পয়সা আছে তা লুটপাট করে খাওয়ার কু-অভিপ্রায়ে এসব অসৎ কর্ম দিনের পর দিন করে চলেছে। তিনি আরও জানান আজকের ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। পাশাপাশি আগামী কালকের (বৃহঃস্পতিবার) সাধারণ সভায় সমস্ত আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এসব বিষয় তুলে ধরে এ সমস্যা থেকে সমাধানের চেষ্টা করবো আশা রাখি।