জাতীয় ডেস্ক:
গবেষণা ও নানামুখী কাজের মধ্য দিয়ে ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদক পাওয়া ভাষাবিজ্ঞানী ও গবেষক ড. মনিরুজ্জামান।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ১৯ ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘গবেষণা ও নানামুখী কাজের মাধ্যমে ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। তবে এই আধুনিকায়নের মধ্যে ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখাও দরকার।’
ভাষাতত্ত্বের পুনর্গঠনতত্ত্ব, উপভাষা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা এবং সমাজভাষাতত্ত্বসহ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার ভাষাবিজ্ঞানী ও গবেষক ড. মনিরুজ্জামানকে একুশে পদক দেয়া হয়েছে।
এসময় ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরে ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভাষা একটি জনগোষ্ঠীর স্বকীয়তা, আত্মপরিচয়, আত্মবিকাশের প্রথম ও প্রধান সত্তা। ভাষা একটি জাতির নিত্য বহমান হৃদয় নদী। একে অবাধে চলতে দিতে হবে। এর মধ্য দিয়ে জাতির অস্তিত্ব রক্ষা পাবে। আর এ অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে হবে। ভাষা নিয়ে কাজ করতে হবে। গবেষণা করতে হবে। ভাষাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে হবে। তবেই হাজার বছর ধরে সে ভাষা অহংকার বুকে ধারণ করে টিকে আছে, তা আরও হাজার বছর একাগ্রচিত্তে টিকে থাকবে।’
ভাষা সাহিত্যে আপনার অবদান পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কতটা প্রভাব ফেলবে, জানতে চাইলে বিশিষ্ট এ ভাষাবিজ্ঞানী বলেন, ‘পুরো জীবনটাই আমি ভাষা সাহিত্যে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছি। লোক-সাহিত্যতত্ত্ব এবং সাহিত্যের নানা মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণমূলক কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, এখন দিন দিন ভাষার আধুনিকায়ন হচ্ছে। তবে এই আধুনিকায়ন যেমন দরকার, ভাষাটাকে বাঁচিয়ে রাখাও দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাষার ইতিহাস আমাদের জানতে হবে। ভাষার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে। ভাষার আধুনিকায়নেও ভাষা নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। পরবর্তী প্রজন্মকে ভাষা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হবে।’
সম্মাননায় ভূষিত হওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এমন একটি সম্মান আমি পেয়েছি, যা আমার জন্য অনেক গৌরবের। আমার সঙ্গে আমার পুরো পরিবার এ সম্মানে অনেক খুশি।’ ভাষা নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা অধ্যাপক আবদুল হাই। ভাষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তিনি আমার বাবার নাম বলেছেন। আমার অনুপ্রেরণা আসলে আমার বাবা। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক পেয়েছিলেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমিও দুটো কৃত্বিতই অর্জন করেছি।’
ড. মনিরুজ্জামান একজন সৃষ্টিশীল লেখক (কবি, গল্পকার ও গীতিকার) হিসেবেও সুপরিচিত। সংগঠক ও শিক্ষক হিসেবে তার যেমন সুনাম রয়েছে, গবেষক হিসেবেও তেমনি রয়েছে দেশে ও বিদেশে খ্যাতি এবং সু-পরিচিতি। তার অন্যান্য কাজের মধ্যে অন্যতম ‘বাংলাদেশ ভাষাতত্ত্ব সমিতি’ গঠন এবং বাংলা ভাষায় ভাষাতত্ত্বের পত্রিকা ‘নিসর্গ’ প্রকাশ।
এছাড়া তিনি নিজ গ্রামে কয়েকটি শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন- শিশু ও মাতৃসেবা কেন্দ্ৰ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও গবেষণা পাঠাগার স্থাপন করেছেন। তার মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৭টি। তিনি বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।