
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পরানদহ বাজার সংলগ্ন হরিশপুর গ্রামে পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে পাইপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে বালু উত্তোলন করে জমি ভরাটের ফলে ধ্বসে পড়ছে পাশের জমির মাটি। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামবাসীরা।
গত রবি ও সোমবার সরজমিনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের পরানদহ বাজার সংলগ্ন হরিশপুর গ্রামে যেয়ে দেখা যায় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ছোট ছোট মাছের ঘের। সেখানকার মৃত রহিম বক্সের ছেলে রেজাউল ইসলাম লিজ নিয়ে পরিচালিত তার মাছের ঘের ঘেরের মধ্যে অবস্থিত ছোট একটি গর্ত থেকে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে মাটির গভীর হতে পাইপ দিয়ে বালু উত্তোলন করে রাস্তা সংলগ্ন তার ক্রয়কৃত বারো কাঠা জমিতে বালি ভরাট করছে। পাইপ দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে পাশর্^বর্তী জমি থেকে মাটি ভেঙে তার পুকুরে পড়ছে। ওইসব জমির মালিকরা মারাত্বক আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের জমি গর্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে সেখানে ফসল উৎপাদন ও মাছ চাষ আগামীতে হুমকির মুখে পড়ার আশংকা করছেন।
এদিকে, গত দুইদিন ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে দাঁড়িয়ে বালু তোলার কাজ তদারকি করছেন রেজাউল ইসলামের ছেলে নাজমুল ইসলাম। তার সাথে কথা বললে তিনি মোবাইলে রিং দিয়ে হাতে দিয়ে বলেন আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। এ সময় মোবাইলে কথা বললে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আমি হাবিুবুর রহমান পলাশ বলছি- আমি এই জায়গায় শেয়ারে গরুর খামার করবো। বিষয়টি নিয়ে কিছু লেখার দরকার নেই, আমি আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবো’।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে নাজমুল ইসলামের সাথে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, হাবিবুর রহমান ওরফে পলাশ এলাকার প্রভাবশালী লোক। প্রশাসনের ব্যাপারটা উনি দেখেন। উপরের দিকে তার বিশাল যোগাযোগ আছে। আপনাদের নিউজ করার দরকার নেই। ভাই সব ম্যানেজ করবে। আমার ভাই পলাশ।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত পাশের জমির মালিক হরিশপুর গ্রামের মৃত অধীর সরকারের ছেলে মাখন চন্দ্র সরকার ও জগনাথপুর গ্রামের আবদুর রহমানের সাথে কথা হলে তারা জানান, যেখান থেকে পাইপ দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে তার পাশে তাদেরসহ অন্যান্যদের জমি রয়েছে। এভাবে পাইপ দিদয়ে মাটির নিচ থেকে বালু তোলার সাথে সাথে তার জমির মাটি ভেঙ্গে রেজাউলের জমির গর্তে পড়ে যাচ্ছে। তারা দুইজনসহ অন্যান্য জমির মালিকরা রেজাউল ইসলামকে বিষয়টি প্রথম দিন থেকেই পরিবেশের বিপর্যয় ও তাদের জমির মাটি গর্ত হয়ে যাওয়ায় বালি তুলতে নিষেধ করে আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু রেজাউল তাদেরকে কোনোভাবে পাত্তা দেননি। যে কারণে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। পরে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও বিষয়টি জানালেও সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থাকায় কেউ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারাসহ এলাকাবাসী বিষয়টির প্রতিকার চেয়েছেন।
অভিযুক্ত রেজাউল ইসলাম ও তার ছেলে নাজমুল ইসলামের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার তাদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যো কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগী অথবা এলাকাবাসী কর্তৃক এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তার দপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, স্থানীয় ভ‚মি অফিসের ষ্টাফরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।