
শেখ আরিফুল ইসলাম আশা:
আওয়ামীলীগ নেতা পরিচয়দানকারী প্রতারক সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের মোশারফ হোসেন। তিনি কখনো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর সহকারী পরিচালক, কখনো বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উৎযাপন কমিটির পরিচালক, কখনো বা প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব এর পিএস পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছেন। এছাড়া প্রতারণার কৌশল হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আমলাদের সাথে তার দহরমমহরম রয়েছে এমন কথাও বলে বেড়ান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের মুজিবর রহমানের ছেলে মোশারফ হোসেন ২০০১ সালে আগরদাঁড়ি আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে। মাদ্রাসায় অধ্যয়নের সময় তিনি ছাত্র শিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন । এছাড়া ২০০৪ সালে শিবিরের কোটায় ভর্তি হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে।
তিনি ২০০৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র শিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে জানা যায়। সময়ের সাথে সাথে রাজনীতির পালা বদলে মোশারফ হোসেন ভোল পাল্টে ছাত্র শিবির থেকে আওয়ামীলীগ নেতা বনে যান। সরকার দলীয় কেন্দ্রিয় নেতা, মন্ত্রী, সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা চালিয়ে আসছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে।
স¤প্রতি এই প্রতারক মোশারফ হোসেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটির আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত করে দেয়ার নামে সুপার সহ ১১ জন শিক্ষক ও কর্মচারীর কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন তিনি ও তার পিতা মুজিবর রহমান।
এছাড়া চুপড়িয়া এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোশাররফ হোসেন একজন চিহ্নিত প্রতারক। তিনি মন্ত্রী, সচিব সহ বিভিন্ন সরকারি আমলাদের নাম ভাঙ্গিয়ে চুপড়িয়ার আবু তাছের কে বিদেশে পাঠানোর কথাবলে এক লাখ টাকা ও মাধবকাটির আকলিমা খাতুন কে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দেয়ার নামকরে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এমন প্রতারণার অভিযোগ তার নামে অহরহ রয়েছে। এসব প্রতারণার সহযোগিতা করে আসছেন তার পিতা মুজিবর রহমান ও বোন তাজমুন নাহার। এছাড়া মোশারফ হোসেন এর পিতার নামে ও রয়েছে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ। অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে দীর্ঘদিন জেল ও খেটেছে তিনি।
চুপড়িয়া এলাকার একাধিক ব্যক্তি আরো জানায়, মোশারফ হোসেন এর চাচা মতিউর রহমান মাস্টার জামাতের রোকন। ২০১৩ সালের সহিংস ঘটনার সাথে সরকারি জড়িত ছিলেন তিনি। তার নামে ২০১৩ সালে রাস্তা কাটা, গাছ কাটা, মামুন হত্যা মামলা সহ একাধিক মামলা রয়েছে।
আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম রসুল অভিযোগ করে বলেন, সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের মোশারফ হোসেন ও তার পিতা মজিবর রহমান মাদ্রাসার এমপিওভুক্তি করে দেওয়ার নাম করে আমাদের ১১ জন শিক্ষক কর্মচারীর কাছথেকে ২১ লক্ষ টাকা নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মোশাররফ হোসেন সচিব, অর্থ উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর কথা বলে মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত করতে ৩০ লাখ টাকা দাবি করলে আমার তাকে ২১ লাখ টাকা দিয়েছি। এমপিওভুক্ত করে না দিতে পারায় তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি তালবাহানা শুরু করেন।
একের পর এক দিন নিয়েছে কিন্তু টাকা ফিরিয়ে দেইনি প্রতারক মোশারফ হোসেন। আমরা এই টাকা ফিরে পেতে আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও টাকা ফেরত পাইনি আমরা। মাদ্রাসা সুপার গোলাম রসুল বলেন, আমরা এই ২১ লাখ টাকা ফিরে পেতে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত মোশারফ হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।