কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার;
খানজিয়া রঘুনাথপুরে ইজারা নিয়ে সুইলপুর ও চকগোবিন্দ থেকে বালু উত্তোলন;
আহাদুর রহমান জনি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ইছামতি নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে কুদ্দুস নামের এক ইজারাদার। উপজেলা খানজিয়া রঘুনাথপুর মৌজার ইছামতি নদীর বালুচরে বালুমহাল ইজারা নিয়ে সুইলপুর ও চকগোবিন্দ থেকে বালু তুলছে সে। ফলে ভাঙনের মুখে পড়েছে ওই এলাকার বেড়িবাঁধ। ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে জেগে ওঠা ১৫০ একর চরের ১৪০ একর।
ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখতে ক্লিক করুন
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন বালুমহাল হিসাবে ঘোষণা করতে হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়িত্ব সম্পন্ন করে জানায় ইছামতি নদীর ১ নং খতিয়ানের ১দাগ, ২৩দাগ ও ১০২৩ দাগের মোট ২০ একর জমি বালু মহালের জন্য ইজারাদেয়ার যোগ্য। এর মধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সুইলপুর বালুমহাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে চকগোবিন্দ মৌজার ১০ একর জমি ঘোষণাযোগ্য বা প্রস্তাবিদ বালু মহাল হিসেবে জানানো হয়। কিন্তু এসব জায়গা থেকে এখনও বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়নি। চলতি বছরের মার্চ মাসে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত খানজিয়া রঘুনাথপুর মৌজার ইছামতি বালুচরের ১৫ একর জমি ভ্যাট, ট্যাক্স সহ ৭১ লক্ষ টাকায় ইজারা নেয় বসন্তপুরের আব্দুল কুদ্দস। কিন্তু তিনি ইজারার উল্লেখিত স্থান থেকে বালু না তুলে সদ্য ঘোষিথ বালু মহাল সুইলপুর ও প্রস্তাবিত চকগোবিন্দ ডুবোচরের বালু তুলছেন।
তার এ কাজে ঢাল হয়ে আছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান নাজমুল। ফলে সরকার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। পরবর্তীতে সহসাই এ জায়গা ইজারা নেবে না কোন ব্যক্তি। কারণ ইতোমধ্যেই প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি ট্রলারে করে বালু তোলা হচ্ছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুর কুদ্দস সাতনদীকে জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে করা ওই সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি খানজিয়ার যে জায়গা ইজারা নিয়েছি সেখান থেকেই বালু তুলছি। বালুটা একটু চিকন হলেও এ ক্ষতি আমি মেনে নিয়েছি। তবে ইজারাল্লোখিত জমি ছাড়া অন্য জমি থেকে বালু তোলার অভিযোগটি সম্প‚র্ন মিথ্যা।’ অন্যদিকে চেয়ারম্যান নাজমুলের সাথে যোগাযোগর চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে অপরিকল্পিত বালু তোলায় ভাঙনের মুখে পড়েছে ইছামতি নদীর বেড়ি বাঁধ। ফলে নদীর আশেপাশে বসবাসকারীরা আতঙ্কে দিনযাপন করছে। ইতোমধ্যেই নদী গর্ভের চরে জন্ম নেওয়া ১৫০ একর বনভ‚মি বিলীন হয়েছে।
স্থানীয় আব্দুল সেলিম পাড় জানান, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে আমরা ভাঙনের মুখে পড়ছি। এদিকে যে জায়গায় বালু তোলা হচ্ছে এসব জায়গা আমাদের জানা মতে বালু তুলতে সরকারের নিষেধ আছে।’ নদীর মাঝে গড়ে ওঠা বনভ‚মি নিয়ে সেলিম বলেন, ‘এই বনটি প্রায় ১০-১৫ বছরের পুরোনো। আমি নিজে হাতে করে অনেকগুলো কেওড়া সহ নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়েছিলাম। সেসব বড় বড় গাছ পুরোটাই ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন যে আকারে দেখেছেন এর চেয়ে দশগুন বড় ছিলো বনটি। আমাদের এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু চেয়ারম্যান নিজেই এখন বালু বেচে খায়। আমাদের কথা আমলে নেয় না।’
সাতনদীকে আরেক বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় কাদের নামের এক ব্যক্তি বালু তুলছে। যেভাবে পারছে নদীর যে জায়গা থেকে পারছে বালু তুলছে। বাঁধের কয়েক জায়গায় ইতোমধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। সামনে বর্ষ আসছে। তখন নদীর ¯্রােত বেশি থাকবে। ভাঙনও বাড়বে।’
দমদমার বাসিন্দা আব্দুল হান্নন সাতনদীকে বলেন, ‘আমার ২০ বিঘা ঘের ছিলো। সেটি নদীগর্ভে বিলীন হতে হতে আর মাত্র ১২ কাটা অবশিষ্ট আছে। নদীর গতিপথ ঘুরে যাওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে। আর অপরিকল্পিত বালু তোলার কারণে নদীর গতিপথ ঘুরে যাচ্ছে।’
ইছামতির মৎসজীবী বলেন, ‘নদীর গতিপথ কোথায় ঘুরবে তা তো আমরা বলতে পারিনা। কিন্তু বালু তোলার পর থেকে এ বনটি ভেঙে ছোট হয়ে গেছে। এটি প্রায় এক কিলোমিটারের মত বড় ছিলো। কিন্তু এখন দেখতেই পাচ্ছেন কত ছোট হয়েছে।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার রবিউল ইসলামের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।