
স্টাফ রিপোর্টার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেবহাটা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মুজাহিদ বিন ফিরোজকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটির সাতক্ষীরা জেলা কমিটি। গত ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক আরাফাত হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুজাহিদ বিন ফিরোজ সংগঠনের নীতিমালা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। কজন পদধারী নেতার এমন আচরণ সংগঠনের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই প্রেক্ষাপটে জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে আহ্বায়ক পদসহ সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তরুণদের নিয়ে গঠিত একটি প্রগতিশীল সংগঠন, যা ন্যায্যতা, সাম্য এবং সামাজিক সুবিচারের পক্ষে কাজ করে থাকে।
আরও অভিযোগ আছে, গত ১৬ জুলাই গভীর রাতে দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের চিনেডাঙ্গা এলাকায় রাতের আঁধারে হেলমেট ও মাস্ক পরে একটি ছদ্মবেশী মিছিল বের হয়। মুখে ছিল ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সহ নানা উসকানিমূলক স্লোগান। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে এটি আওয়ামী লীগের কর্মসূচি। তবে মিছিলের আড়ালে ছিল ভিন্ন পরিকল্পনার নেতৃত্বে ছিলেন জামায়াত নেতা সোলায়মান হোসেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর দেবহাটা উপজেলা আহ্বায়ক মুজাহিদ বিন ফিরোজ। এসময় তারা মিছিলের ‘জামায়াত-শিবিরের চামড়া, খুলে নেব আমরা’, ‘বিএনপির চামড়া খুলে নেব আমরা’ এমন উত্তেজনাকর স্লোগানও দেয়।
মিছিলের পরিকল্পনায় থাকা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর দেবহাটা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মুজাহিদ বিন ফিরোজ এবং সখিপুর ইউনিয়নের জামায়াত নেতা সোলায়মান হোসেন, সমন্বয়ক ইমরান হোসেন, মীর আরিফ তারা ও তাদের অনুসারীরা হেলমেট ও মাস্ক পরে চেহারা গোপন করে মিছিলে অংশ নেন। নাটকীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েক সেকেন্ডের ওই মিছিলটি ভিডিও ধারণ করে রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন মুজাহিদ। ভিডিওতে আওয়ামী লীগের নামে হুমকিমূলক বার্তা দেন তিনি।
প্রথমে ভিডিওটি অস্পষ্ট হলেও পরে একটি স্পষ্ট ভিডিও ফাঁস হয়, যেখানে জামায়াত নেতা সোলায়মান ও ছাত্রনেতা মুজাহিদকে পোশাক ও চালচলন দেখে শনাক্ত করা যায়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই ঘটনার পর মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার (২৩ জুলাই) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংগঠনের আদর্শ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মুজাহিদকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগে মুজাহিদের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অভিযোগ ছিল। কিছুদিন আগে ফেসবুকে নিজেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার দাবি করেন। তার কয়েকদিন পর সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দেওয়া হয়। গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। এমনকি ইউএনও ও ওসিকেও বিভিন্নভাবে চাপ দেন। সম্প্রতি এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনায় তার তিন সহযোগী সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে মুজাহিদ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিকে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে। এমনকি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় করে সাংবাদিককে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আরাফাত হোসাইন বলেন, ‘দায়িত্বশীল পদে থেকেও তিনি একাধিকবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। আগেও তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো পরিবর্তন না আসায় সংগঠনের স্বার্থে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
দেবহাটা উপজেলা জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, সোলায়মান হোসেন ও মিছিলে অংশ নেওয়া অন্য কর্মীদের নামের তালিকা তৈরি করে সাংগঠনিক সুপারিশসহ জেলা জামায়াতের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত কয়েকদিন ধরে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের নামে ভুয়া নামীয় ফেসবুক থেকে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
দেবহাটা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মো. অলিউল ইসলাম বলেন, ওই মিছিলে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে রোকন সদস্য সোলায়মান সহ বেশ কয়েকজনের অংশ গ্রহনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। দলীয় নিয়মনীতি অনুযায়ী বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি এবং যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেবহাটা থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান জানান, সাম্প্রতিক রাতের আঁধারে হেলমেট ও মাস্ক পরে কয়েক সেকেন্ডের মিছিলটির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বিষয়টি সাজানো। তিনি আরো বলেন, দেবহাটার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থি স্বাভাবিক রয়েছে। যদি কেউ শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করে সে যেই হোক তাকে কোনভাবে ছাড় দেওয়া হবে।