নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যালয় বন্ধের দিনে বিদ্যালয়ে অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় ঘোনা ইউনিয়ন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হাসানুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন ধার্য থাকায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়ন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হাসানুর রহমান স্কুলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোঃ আল আমিন হোসেন, অফিস সহকারী শারাফাত, নৈশ প্রহরী শ্রী রাখাল চন্দ্র দে, কম্পিউটার ল্যাব সহকারী সৌমেন একযোগে সকাল ১০ টায় স্কুলের প্রধান ফটকের তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। সে সময় দুই জন অপরিচিত ছেলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারীদের দেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে ভিতরে ঢুকে তারা দেখেন উক্ত বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী জনৈক নজরুলের কন্যা তানিয়া ও শহিদুলের কন্যা বহিরাগত সুমি বিদ্যালয়ের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। প্রধান শিক্ষক হাসানুর রহমান তাদরে কে স্কুল বন্ধের দিনে স্কুলের ভিতরে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা প্রধান শিক্ষকের নিকট ক্ষমা চেয়ে কাকুতি মিনতি করেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান মুসাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি উক্ত মেয়েদের স্কুলে রেখে তাদের অভিভাবকদের সংবাদ দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেন। প্রধান শিক্ষক সভাপতির কথামত পরিচ্ছন্নতাকর্মী আল আমিন ও নৈশ প্রহরী রাখাল চন্দ্র দে কে উক্ত মেয়েদের বাড়িতে পাঠান এবং উক্ত দুই জন মেয়েকে অফিস সহকারীর কক্ষে বসতে বলা হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নাজমিরা বেগমের স্বামী বুলবুল এসে প্রধান শিক্ষকের কাছে উক্ত মেয়েদের তার জিম্মায় নিয়ে যায়। এ ঘটনার ১৫-২০ মিনিট পরে ৩০/৪০ জন দুর্বৃত্ত স্কুলে হামলা চালায়। তারা ইটপাটকেল ছুড়ে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রধান শিক্ষক হাসানুর রহমানকে লাঞ্ছিত করে এবং প্রায় দেড় ঘন্টা তাকে অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ফজলুর রহমান মুসা এসে প্রধান শিক্ষক হাসানুর রহমানকে উদ্ধার করে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে ঘোনা ইউনিয়ন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুহুল আমিন ও বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোঃ আলমগীর কবির সাতনদীকে জানান, “প্রধান শিক্ষক হাসানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টিতে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল তার প্রতি ঈশ্বান্বিত হয়ে এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে বিদ্যালয়ে হামলা করে তাকে লাঞ্ছিত করেছেন।”
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোঃ হাসানুর রহমান রহমান সাতনদীকে বলেন, “ছুটির দিনে বিদ্যালয়ে উক্ত সুমি ও তানিয়াকে পেয়ে আমি সভাপতি সাহেবকে অবহিত করি। সভাপতি সাহেবের কথামত আমি উক্ত মেয়েদের স্কুলে বসতে বলে তাদের অবিভাবকদের সংবাদ দেই। একপর্যায়ে মহিলা মেম্বর নাজমিরার স্বামী বুলবুল এসে মেয়ে দুটিকে তার হেফাজতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ১৫-২০ মিনিট পরে বুলবুল ও মনির নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা স্কুলে হামলা করে ও আমাকে লাঞ্ছিত করে। ঐ দুটি মেয়ের মধ্যে সুমি আমার বিদ্যালয়ের ছাত্রী নয়। তার বাবার নাম শহিদুল। শহিদুল ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের বডি গার্ড। আমার বিশ্বাস বিদ্যালয়ে হামলা করা ও আমাকে লাঞ্ছিত করার পিছনে চেয়ারম্যানের (আব্দুল কাদের) হাত রয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান মুসা সাতনদীকে বলেন, “বিদ্যালয়ে হামলা করা ও প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি দুঃখ জনক। ঐ মেয়ে দুটিকে ছুটির দিনে স্কুলে পেয়ে প্রধান শিক্ষক আমাকে জানালে আমি তাদের গার্ডিয়ানদের ডেকে ঘটনা খুলে বলে তাদের জিম্মায় দিতে বলি। পরে দুর্বৃত্তরা সংগঠিত হয়ে স্কুলে হামলা করে। এ বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার (১ আগষ্ট) ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছে। মিটিংয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে”
অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষক হাসানুর রহমান লাঞ্ছিত
পূর্ববর্তী পোস্ট