শেখ এনামুল বাসার টিটো, ডুমুরিয়া(খুলনা) থেকে:
এমপিও ভ‚ক্তিতে পাঠানো খুলনার আঠারোমাইল সৈয়দ ঈসা টেকনিক্যাল এন্ড বি এম কলেজের সাধারণ শাখায় কর্মরত অর্ধেক শিক্ষক ও কর্মচারীদের নাম ব্যানবেইসে নেই (বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো) ভ‚য়া এমপিও ভ‚ক্তির কথা বলে প্রায় দু’কোটি টাকার অর্থ বানিজ্য অধ্যক্ষের। সিংহভাগ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বন্ধ অধ্যক্ষের জালিয়াতিতে। প্রায় দু’যুগ ধরে মানবেতর জীবন-যাপন এসব অসহায় শিক্ষক-কর্মচারীদের। দেখার যেন কেউ নেই। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখন ব্যুরো ( ব্যানবেইসে)’এ প্রতিবছর প্রত্যেক কলেজে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়।
খুলনার ডুমুরিয়া সৈয়দ ঈসা টেকনিক্যাল এন্ড বি এম কলেজের সাধারণ শাখায় কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের নাম ব্যানবেইসে ২০১৩ সাল থেকে তালিকাভ‚ক্তি হচ্ছে। আর যাচাই বাছাই শেষে ২০২২ সালে কলেজটির সাধারণ শাখা এমপিও ভ‚ক্তির তালিকায় আসে। প্রতিষ্ঠানটির এমপিও ভ‚ক্তির সাথে সাথেই তৃতীয় দফা অর্থ বানিজ্যেই নামে অধ্যক্ষ জি এম আব্দুস সাত্তার। ব্যানবেইসে নাম নেই এমন প্রায় ১৫ জনের কাছ থেকে কমপক্ষে ২’কোটি টাকা উৎকোচ নিয়ে এমপিও ভ‚’ক্তির জন্য নামের তালিকা পাঠায় খুলনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক স্বাক্ষরিত দ‚র্নীতিদমন কমিশনে দেওয়া অভিযোগে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো ( ব্যানবেইসে)’এ নাম নেই প্রভাষক সমীর কুমার দেএর নাম। অথচ তাকে হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে জেলা শিক্ষা অফিসে নাম প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে ওই পদে কর্মরত খন্দকার মোস্তাক হোসেন। তার নাম ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যানবেইসে প্রভাষক হিসাব বিজ্ঞান হিসেবে নাম রয়েছে। কম্পিউটারের প্রভাষক হিসেবে খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদকে এমপিও ভুক্তির জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে নাম প্রেরণ করা হয়েছে। অথচ ব্যানবেইসে তার নাম নেই। কম্পিউটার প্রভাষক হিসেবে কর্মরত সুব্রত কুমার নন্দী।
২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যানবেইসে তার নাম রয়েছে। অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভ‚গোলের প্রভাষক হিসেবে গফ্ফার বাওয়ালীর নাম এমপিও ভ‚’ক্তির জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। অথচ ব্যানবেইসে তার নাম নেই। খুলনার বিএল কলেজ থেকে ইতিহাসে এম এ পাস করা গফ্ফার বাওয়ালীকে দ্যা ইনস্টিটিউট অব কুমিলা থেকে পাস দেখানো হয়েছে। প্রাণী বিদ্যায় অনার্স ও মাষ্টার্স এ বি এম আক্তারুজ্জামান। তাকে কৃষি প্রভাষক হিসেবে এমপিও ভ‚ক্তির জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে নাম পাঠানো হয়েছে। অথচ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস না করলে ওই পদে চাকরী করার কোন সুযোগ নেই।
শর্ত সাপেক্ষে নিয়োগ নেওয়া হয় মোঃ হামিদকে। কোন নিয়োগ বোর্ড হয়নি। বিএল কলেজ থেকে পাস করা অথচ দ্যা ইনস্টিটিউট অব কুমিলার সার্টিফিকেট দিয়ে এমপিও ভ‚ক্তির জন্য প্রভাষক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃততে নাম পাঠানো হয়েছে তাকে। ২০১৫ সালের নিয়োগ দেখিয়ে ২০১৯ সালে ব্যানবেইসে নাম সৃজন করে ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে হাবিবুর রহমানের নাম ঢোকানো হয়েছে। অথচ ২০১৩ সাল থেকে ব্যানবেইসে নাম থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে ইতিহাসের প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম মৃত্যুবরণ করেন। বোর্ড থেকে কোন অনুমোদন নেই সংস্কৃত প্রভাষকের। হয়নি কোন নিয়োগ বোর্ড।
অথচ ২০২২ সালে ব্যানবেইসে নাম সৃজন করে এমপিও ভ‚ক্তির জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে নাম পাঠানো হয় মাইকেল রায়কে। বোর্ডে কোন অনুমতি নেই ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ও বীমার প্রভাষক হিসেবে। হয়নি কোন নিয়োগ বোর্ড। ব্যানবেইসে কোন নাম নেই। অথচ মোহাম্মদ আল-আমিনকে ওই পদের প্রভাষক হিসেবে এমপিও ভ‚ক্তির জন্য নাম প্রেরণ করা হয়েছে। কোন নিয়োগ বোর্ড হয়নি। বিএল কলেজ থেকে বাংলায় মার্ষ্টাস পাস। সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে দ্য ইনস্টিটিউট অব কুমিলার।
প্রভাষক সমাজকর্ম হিসেবে এমপিও ভ‚ক্তির জন্য নাম পাঠানো হয়েছে মোহাম্মদ হুমাউন কবীরকে। প্রভাষক পরিসংখ্যান বোর্ডের কোন অনুমতি নেই। কোন নিয়োগ বোর্ড হয়নি। অথচ এমপিও ভ‚ক্তির জন্য নাম পাঠানো হয়েছে সুরাইয়া ইয়াসমিনকে। ব্যানবেইসে তার নাম নেই। প্রদর্শক ভ‚গোলে কোন বোর্ড গঠন হয়নি। অথচ আসাদুজ্জামানকে ওই পদে এমপিও ভ‚ক্তির জন্য নাম পাঠানো হয়েছে। ব্যানবেইসে তার নাম নেই। প্রদর্শক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এমপিও ভ‚ক্তির জন্য নাজনিন নাহারের নাম প্রেরণ করা হয়েছে। তার কোন নিয়োগ বোর্ড হয়নি। ব্যানবেইসে নাম নেই। অথচ ওই পদে প্রকৃত নিয়োগ বিধান চন্দ্র মন্ডলের।
২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তার নাম ব্যানবেইসে রয়েছে। প্রদর্শক রসায়ন পদে কোন বোর্ড গঠন হয়নি। ওই পদে হালিমা খাতুনকে এমপিও ভ‚ক্তির জন্য নাম পাঠানো হয়েছে। ব্যানবেইসে তার নাম নেই। ওই পদে প্রকৃত নিয়োগ ছিলো কাঞ্চনপুরের শওকত মাষ্টারের স্ত্রী মমতাজ বেগমের। আগামী পর্বে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর নামের তালিকা প্রকাশিত হবে।
এদিকে এসব ভ‚য়া এমপিও ভ‚ক্তিতে নাম দিতে এবং একই পদে অন্যজনের নাম দিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে নাম পাঠানোর নামে অধ্যক্ষ জি এম আব্দুস সাত্তার এসব শিক্ষকদের কাছ থেকে কমপক্ষে দু’কোটি টাকা উৎকোচ নিয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগে উলেখ করা হয়েছে। জানা গেছে নয় ছয় করে তালিকা পাঠানোয় মাত্র ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন হয়েছে।
বাকিদের বেতন করানোর কথা বলে ইতিমধ্যে আবারও প্রত্যেকের কাছে ৩ লাখ টাকা করে উৎকোচ দাবি করছেন বলে ভ‚ক্তভোগিরা জানিয়েছেন। এদিকে প্রায় দু’যুগ ধরে বেতন না পাওয়ায় এসকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।