লিটন ঘোষ বাপি: দেবহাটা থানা সদরের ১০০ গজ উত্তর দিকে প্রাচীন একটি মন্দির আছে। এটি শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ পাঠবাড়ি নামে পরিচিত। কবে, কখন, কার হাত দিয়ে, কীভাবে এ মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিলো তার কোনো তথ্যাদি পাওয়া যায় না। তবে মন্দিরের মধ্যে গোকুলানন্দের সমাধি স্তম্ভ থাকায় ও মন্দিরের নাম শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ পাটবাড়ি হওয়ায় সিন্ধান্তে আসা যায় যে এটি গোকুলানন্দের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিলো।
মন্দিরের গায়ে সংস্কার বিষয়ক দুটো ফলক আছে। তার একটি থেকে জানা যায় শ্রীমতি হেমকুমারী দাসী, সাং বড়বাজার, কলিকাতা এটি সংস্কার করেন। এর সংস্কার সন উল্লেখ করা হয়েছে ১২৯৭ বঙ্গাব্দ।
১২৯৭ বঙ্গাব্দে এটি সংস্কার হয়ে থাকলে এর নির্মাণকাল যে আরো পূর্বে সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এস.এ. রেকর্ড অনুযায়ী ৭৩১ দাগে বর্তমানে মন্দিরের নামে ১ একর ১৭ শতক জমি রয়েছে।
সেবাইতরা মন্দিরের সম্পত্তি বর্তমান সেবাইতরা দুই পুরুষ ধরে মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। এঁরা হলেন- মাখনলাল গোস্বামী, তপন গোস্বামী,স্বপন গোস্বামী,রতন গোস্বামী,গোবিন্দ গোস্বামী,সঞ্জয় ও গোপাল গোস্বামী।
মন্দিরের অভ্যন্তরে সুদৃশ্য রাধা-গোবিন্দের বিগ্রহ আছে। অত্যন্ত কারুময় এ বিগ্রহ দুটো চমৎকার ভাবে কাঠ কেটে তৈরী করা হয়েছে। বিগ্রহের ডান (দক্ষিণ) পাশে আছে মাটির তৈরী গোকুলানন্দের সমাধি। সমাধি স্তম্ভের সামনে গোকুলানন্দজীর খড়ম জোড়া। রাধা-গোবিন্দ বিগ্রহের বাম(উত্তরে)পাশে আরো কয়েকটি মূর্তি আছে। আরও আছে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর মুর্তি।মন্দির প্রাঙ্গণে বিশাল একটি বকুল গাছ টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।যার বয়স আনুমানিক ৩৫০ বছর।সমাধি মন্দিরের সম্মুখভাগে মাখনলাল গোস্বামীর ভক্তরা বৃহৎ আকৃতির ছাদযুক্ত চাতাল নির্মাণ করে দিয়েছেন।যেখানে মাখন লাল গোস্বামী ও তাহার সহধর্মিনী ননী বালা গোস্বামীর মূর্তি নির্মান সহ সমাধি করা রয়েছে।প্রতিদিন এখানে পাঠকীর্ত্তন ছাড়াও এই নাটমন্দিরে হয় বাৎসরিক নামযজ্ঞানুষ্ঠান, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, রাধাষ্টমী সহ অনেক অনুষ্ঠানাদি।
স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকদের তত্ত্বাবধানে শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ পাঠবাড়ি সংস্কার করে এর শ্রী পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমান সেবাইতদের আবাসস্থল মন্দির সংলগ্ন এলাকায়। প্রাচীন এ মন্দিরটি আজও গৌরবের সাথে বহন করে চলেছে বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য।