
শেখ আব্দুল হাকিম / জিয়াউর রহমান শ্যামনগর থেকে: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে অতি জোয়ারের চাপে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনীসহ ৯ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে উপকূলীয় রক্ষা বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। সব মিলিয়ে প্রায় চল্লিশটি গ্রামে খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, কালিন্দি, চুনকুড়ি নদীর জোয়ারের পানি বুধবার দুপুর ১২ টার দিক প্রবেশ করে।
এ সময়ে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১৬৫০ হেক্টর মৎস্য খামারে প্রায় ২ হাজার ৫ শতটি চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। আর ৪ হাজার ৫শত কাঁচা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি আংশিক ও ২৬৫ টি কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাছুদুল আলম ও পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. আতাউর রহমান বলেন, ভাঙ্গন কবলিত স্থানে স্থানীয় লোকজন দিয়ে মোরামতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছিনা বা তাদের কোন দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তারা আরও জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের গাফিলতির কারনে পাউবো বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে এবং স্থানীয় জনগন দূর্ভোগের কবলে পড়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি মজুমদার জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় বিভিন্ন নদীর পানি উপকূলীয় ইউনিয়ন গুলোতে প্রবেশ করে প্রায় ১৬৫০ হেক্টর মৎস্য খামার তলিয়ে যায়। এত প্রায় ১০ কোটি টাকার চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ ভেঁসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চাষিরা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহিনুর ইসলাম জানান, ঘুর্ণিঝড়ে ১২টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৫ শত কাঁচা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ২৬৫টি কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধস্ত হয় এবং ৫০ হাজার মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পানিবন্দিসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শ্যামনগরে পাউবো’ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন (এস,ও) জানান, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে মোট ১৯০.০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে এবং প্রায় ১১.০০ কিলোমিটার বাঁধের উপর দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি উপছে লোকালয়ে প্রবেশ করে। তবে ৬ টি ইউনিয়নের নদীর পানি প্রবেশ পথ বন্ধ হলেও গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঁঙ্গে পানি ভিতরে প্রবেশ করায় পাউবো’র পক্ষ থেকে বল্লি, বাশ, জিও ব্যাগ ও বস্তা সরবরাহ করা হয়েছে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ অব্যহত রয়েছে।
সাতক্ষীরা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম এ হাসান বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় ৫টি বন ষ্টেশন অফিস ও ১২টি টহল ফাড়িতে নির্মিত মিষ্টি পানির পুকুর লোনা পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। তবে সুন্দরবনের মধ্যে গাছ গাছালি ও বাঘ, হরিণসহ কোন প্রাণির ক্ষয়-ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায় নি।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজার গিফারী বলেন, ১২টি ইউনিয়নে নগত ৩৩ লক্ষ টাকা এবং জি-আর ৩২ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গাবুরা ইউনিয়নে৭ টন,পদ্মপুকুরে ৯ টন,বুগিগোয়ালিনীতে ৫ টন,কৈখালিতে ৫ টন, মুন্সিগঞ্জে ১ টন, শ্যামনগরে ১ টন, নুরনগরে ১ টন, রমজাননগরে ১ টন, আটুলিয়াতে ১ টন ও কাশিমাড়ী ইউনিয়নে ১ টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১২ টি ইউনিয়নে শিশু খাদ্যকেনার জন্য দেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা। গো খাদ্য কেনার জন্য দেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা। তিনি আরোও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন গুলোতে পর্যায়ক্রমে সরকারী সাহায্য অব্যাহত থাকবে।
সাতক্ষীরা ৪ আসনের সাংসদ এস.এম জগলুল হায়দার ভাঙ্গন কবলিত ইউনিয়ন গুলো পরিদর্শন করেন এবং জনসাধারণকে দূর্যোগের সময় ধৈর্য্য ধারণ সহ দায়িত্বশীলতার মধ্যদিয়ে বেড়িবাঁধ মেরামত করার জন্য আহ্বান জানান। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে সরকারীভাবে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে। এসময় তিনি ভাঙ্গন কবলিত এলাকা মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।