
সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাতিলের মত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের উদ্যোগে ‘রিকোভার অ্যান্ড রেভিটালাইজ এডুকেশন ফর দ্য কোভিড ১৯ জেনারেশন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল আলোচক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ফরাসউদ্দিন এই মতামত দেন।
তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে পঞ্চম শ্রেণির পিইসি এবং অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, ‘একটি কথা বলতে চাই, আমার এই কথাটি সরকারি মহলের কাছে ভাল লাগবে না জানি। কথাটি হলো পঞ্চম শ্রেণির ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে। আমার মনে হয় যারা দেশ চালাচ্ছেন, নীতি নির্ধারণ করছেন, তাদের সামনে গিয়ে যারা কথা বলেন, তারা সত্যি কথাটি হয়তো বা প্রকাশ করেন না। অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা এভাবে খুব অসহায় বোধ করেন।
তিনি বলেন, যারা প্রাইভেট পড়ায় ও নোট-গাইড প্রকাশের অভিপ্রায় আছে, তারা কিন্তু মহাখুশি। তাই দৃঢ়ভাবে সুপারিশ হবে, এই কোভিড-১৯-এর কারণে এবার এই দুই পরীক্ষা হয়নি। একে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়া যায় কি না, সেই চিন্তা বোধহয় করা দরকার।’
আলোচনায় মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন শিক্ষার বিভিন্ন সংস্কার নিয়েও কথা বলেন। তিনি কম বয়সীদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
তিনি বলেন, দিনে দুটি পালায় ভাগ করে (সকালে একটি পালা এবং বিকেলে একটি পালা) ক্লাস নেয়া যেতে পারে। প্রতি ভাগ সপ্তাহে তিন দিন বিদ্যালয়ে আসবে।
এভাবে শিক্ষকদের অতিরিক্ত খাটুনি হবে। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষকদের মূল বেতনের সমপরিমাণ অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দিয়ে অনুপ্রাণিত করার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।
ফরাসউদ্দিনের আলোচনার সূত্র ধরে সভার প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে নানা মত রয়েছে। বিশেষ করে প্রাথমিকের পরীক্ষাটি অধিকাংশ মানুষই বলছেন তারা এটি চান না। এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা নানা জায়গায় হচ্ছে। এটি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে নেই। তারপরও এগুলো নিয়ে আমরা ভেবে দেখছি।’
এসময় মন্ত্রী বলেন, শিক্ষাকে আনন্দময় করতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে কাজ করছে সরকার। জিপিএ ৫ এর উন্মাদনা আর নয়। আমাদের জিপিএ ৫ পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
ধারাবাহিক মূল্যায়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা নির্ভর সনদসর্বস্ব শিক্ষা থেকে আমরা বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি। আমরা ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার প্রস্তুতিসহ শিক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব হাসিবুল আলম, ইউনেসকোর বাংলাদেশের প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালডুন প্রমুখ।