
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরে জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাস চলছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে। অতিরিক্ত টাকা আদায় নিন্মমানের খাবার ম্যানেজারের স্বেচ্ছাচারিতা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
জানাযায় , জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাসের মালিক এমএ মান্নান একজন আমেরিকান প্রবাসী। ১৯৯ কক্ষ বিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস পরিচালনা করেন তার ভাই আব্দুল জলিল ও তার জামাতা মঞ্জুরুল কবীর। ম্যানেজার মঞ্জুরুল কবির ছাত্রী নিবাসটি দূর্নীতির আখড়া হিসেবে গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উর্মি,মারিয়া,সুচনাসহ কয়েক জন ছাত্রী জানান, জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাসের ম্যানেজার প্রতি মাসে খাবারের জন্য তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। এছাড়া ছাত্রীনিবাসে প্রথম মাসে অগ্রীম ভর্তি ফি বাবদ ৫’শ টাকা এবং খাওয়া ও সিট ভাড়া বাবদ ৪ হাজার ২’শ টাকা দিতে হয়। পরবর্তী ২ মাস ও তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার ২’শ টাকা করে নেয়। তিন মাস পরে থেকে খাবারের জন্য মিল সিস্টেম চালু হয় । কিন্তু ম্যানেজার তার ইচ্ছে মতো মিল বসিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে তাদের কাছ থেকে। হিসাব চাইতে গেলে ছাত্রী নিবাসের ছাত্রীদের সাথে অশোভনীয় আচরণ করেন। এছাড়া জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাস থেকে চলে আসার সময় ওই মাসের টাকা আদায় করে নেয় ম্যানেজার। অগ্রীম দেওয়া ৪ হাজার ২’শ টাকা কাউকে ফেরত দেয়না মঞ্জুরুল কবির।
ছাত্রী নিবাসে ভর্তি হওয়ার আগে অভিভাবকদের জানানো হয় সিট বাতিল করতে চাইলে কৃর্তপক্ষকে এক মাস আগে জানাতে হবে। আগে থেকে জানালে বাড়তি কোন মাসের টাকা দিতে হবে না। কিন্তু সিট বাতিল করার জন্য এক মাস আগে জানালেও অতিরিক্ত এক মাসের টাকা জবরদস্তি করে ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করেন তিনি। এছাড়া ছাত্রী নিবাস ছেড়ে দেওয়ার সময় অগ্রীম মাসের টাকা কাউকে ফেরত দেয়া হয়না। এক মাসের অগ্রিম টাকা ফেরত চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ম্যানেজার। তিনি জোর গলায় বলেন কারো জামানাতের টাকা জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাস থেকে ফেরত দেওয়া হয়না। এছাড়া তিনি হুমকি দিয়ে বলেন এই ছাত্রী নিবাস থেকে চলে যাচ্ছো সাতক্ষীরায় তো থাকবে আমার সাথে ঝামেলা করে থাকতে পারবেতো। এজন্য ভয়ে কোন ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবক অগ্রিম এক মাসের ৪ হাজার ২’শ টাকা ফেরত না নিয়ে চলে আসেন।
আরো একজন ছাত্রী জানান, এখানে প্রত্যেককের সিটভাড়া এবং নির্ধারিত খাবারের মিল এর জন্য প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ২ হাজার ৩৫০ টাকা দিতে হয় বাধ্যতামূলক। এছাড়া প্রতি মাসে প্রতি বর্ডারের জন্য ৪০ টি মিল খাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর বেশি মিল হিসেবে যে টাকা হয় সেটাও দিতে হয়। সকাল ৯টার মধ্যে ভাত দেওয়ার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। রাত ৯টার পর একটি রুম থেকে অপর রুমে না যাওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিয়ম বহির্ভুতভাবে ছাত্রী নিবাসের নীচে গাড়ি পার্কিং করা হয়েছে।
কলেজে যাওয়ার জন্য সকাল ৯টার মধ্যে খাওয়ার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা দেওয়া হয় কমপক্ষে আধা ঘণ্টা পর। এতে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ ছাত্রী না খেয়েই কলেজে যেতে বাধ্য হয়। ফলে উদ্বৃত্ত ভাত অন্যত্র ব্যবহার করা হয় বা সেই ভাত দুপুরের মিলে দিয়ে বাঁচানো চাল বিক্রি করা হয়। প্রতিবাদ করলে রান্নার কাজে নিয়োজিত বুয়ারাই উল্টো হুমকি দেন। যে দিন মাছ , মাংস বা ডিম থাকে সেদিন শেষের দিকে খেতে যাওয়া ছাত্রীদের অনেকেই তা পায় না। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ি খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও তারা পান না।অধিকাংশ দিনই রাতের বেলা নষ্ট ভাত দেওয়া হয়। ছাত্রী নিবাসে থাকা অবস্থায় মিল বন্ধ করা যায় না। সেক্ষেত্রে না খেলেও মিল চার্জ ধরে নেওয়া হয়।
ছাত্রী নিবাসে থাকা অবস্থায় কোনো ছাত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে কতৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেন না। এমতাস্থায় অসুস্থ ছাত্রী কে অন্য ছাত্রীরা হাসপাতালে নিয়ে যায়, কিন্তু কতৃপক্ষের কেউই সাথে যান না। একদিন রাত ১২ টার সময় তাদের একজন রুমমেট ওই ছাত্রী নিবাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় তাদের সহপাঠী একটা মেয়ে ওই অসুস্থ ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাসের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল কবীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি তিনি।