
জাতীয় ডেস্ক:
জিংকের অভাবে দেশের প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশু খাটো হচ্ছে। ক্ষুধামন্দাসহ শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন ৪৫ শতাংশ নারী। অথচ তুলনামূলক মোটা হওয়ায় জিংকসমৃদ্ধ চাল পাতে তোলেন না বেশিরভাগ মানুষ। জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার্ভের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে বায়োফর্টিফাইড জিংক রাইস সম্প্রসারণের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণে সম্ভাব্যতা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়।
দেশে ক্ষুধা নিয়ে আপাতত কোনো দুশ্চিন্তা না থাকলেও মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অদৃশ্য ক্ষুধা বা অপুষ্টি। বিশেষ করে জিংকজনিত ঘাটতি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১১ থেকে ১২ মিলিগ্রাম জিংকের দরকার হলেও বাজারে প্রচলিত চাল থেকে তা পূরণ হচ্ছে না বলে জানান গবেষকরা।
বিষয়টিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জিংকসমৃদ্ধ ধানের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হলেও আশানুরুপ ফল মিলছে না।’
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এক সময় আমরা জাপানিদের খাটো বলতাম। এখন আমরা খাটো হয়ে যাচ্ছি। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। করোনার সময় আমরা বুঝেছি যে, জিংক কতটা প্রয়োজনীয়। তখন জিংকের ঘাটতি সবার নজরে এসেছে। আমরা এতদিন পরিকল্পিভাবে ভিটামিন, আয়রন ও আয়োডিন ঘাটতি নিয়ে কাজ করেছি। এখন জিংকের ঘাটতি নিয়ে কাজ করতে চাই। এজন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সুপরিকল্পিত টার্গেট নিতে হবে।
আলোচনা সভায় জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার্ভের তথ্য তুলে ধরে আরও বলা হয়, ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী ১০০ জন শিশুর মধ্যে ৩৩ জন জিংকের অভাবে ভুগছে। এসব শিশু ঘন ঘন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। স্বাভাবিক বিকাশ না ঘটায় তারা খাটো হচ্ছে। এছাড়া ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৪৫ শতাংশ নারী জিংকজনিত অপুষ্টিতে ভুগছেন।
বক্তারা বলেন, ভাতের মাধ্যমে মানবদেহে জিংকের ঘাটতি প্রায় ৭০ শতাংশই মেটানো সম্ভব। এজন্য ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতটি জিংকসমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে উদ্ভাবনের প্রায় ৯ বছরে রংপুর, গাইবান্ধা বরিশালসহ সাত থেকে আটটি জেলায় চাষ হচ্ছে জিংকসমৃদ্ধ ধান। ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করছেন মাত্র ১২-১৩ শতাংশ কৃষক।
কৃষকদের উৎসাহিত করতে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে অধিকহারে জিংকসমৃদ্ধ ধান-চাল সংগ্রহের পরিকল্পনার কথা জানান সরকারের নীতি নির্ধারকরা।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) বাংলাদেশ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সহযোগিতায় ছিল এম্পিরিক রিসার্চ লিমিটেড।