
হাফিজুর রহমান : হাসপাতালের সরকারি ঔষধ বিক্রয়, প্যাথলজির পরীক্ষার ফির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ, সরকারি বাসা বাড়ী ভাড়া দিয়ে উক্ত টাকা আত্মসাৎ, মালি রিপ্রেজেনটিভদের ডাক্তারের কাজে ও জরুরী বিভাগে ব্যবহার, জখমী সনদ দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণ, ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটিভদের নিকট হতে উপঢৌকন ও অর্থ নিয়ে হাসপাতালের ডাক্তারদের ঔষধ লেখাতে বাধ্য করানো, সরকারী গাড়ী নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার সহ নানাবিধ দূর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করে আসছিলো উপজেলাবাসী। আর সেই অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ শৃঙ্খলা অধিশাখা গত ১জুন কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ তৈয়েবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করেছে। বিভাগীয় মামলা নং-৩৭/২০২১। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৭ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিঞা এবং গত ১জুন উপ-সচিব শাহাদাৎ হোসেন কবির স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। সেকারনে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২(খ) ও ৩ (খ) মোতাবেক অসৎ আচারনের দায়ে অভিযুক্ত করা হলো এবং কেন আপনাকে উক্ত বিধিমালার অধীনে যথাপোযুক্ত দন্ডপ্রদান করা হবে না সে বিষয়ে নোটিশ প্রাপ্তির ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে স্বাক্ষরকারীর নিকট কারন দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের পুত্র ডাঃ শেখ তৈয়েবুর রহমান বিসিএস ক্যাডার না হয়ে দশ বছর আগে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন মেডিকেল অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। ঐ সময় হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তপন কুমার মন্ডল অবসরে যাওয়ার পর হতে তিনি আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন হাসপাতালের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড্ঃা আকছেদুর রহমান ২০১৮ সালে অবসরে যাওয়ার পর হতে গত ০১/১১/২০১৮ ইং তারিখ হতে ডাঃ শেখ তৈয়েবুর রহমান (১২১৯৬৭) বিসিএস ক্যাডার না হয়েও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্পনা কর্মকর্তা হিসাবে অদ্যবধি দায়িত্ব পালন করে আসছে। তার দায়িত্ব পালন নিয়ে ডাক্তারের মধ্যে মিশ্র পতিক্রিয়া দেখা দেয়। তিনি দায়িত্ব গ্রহনের পর হতে হাসপাতালটি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচালনা করে আসছে। এমনিতে হাসপাতালের ডাক্তার শূন্যতায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হয়। তার পরও নিজের খুটির জোরে হাসপাতালের সরকারি ঔষধ, স্যালাইন এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন মালামাল না দিয়ে তা বাইরে বাজারের দোকানে বিক্রি করে আসছে বলে অভিযোগ আছে। হাসপাতালের প্যাথলজিতে এবং আল্ট্রাসোনো মেশিনে বিভিন্ন পরীক্ষা নীরীক্ষার জন্য সরকারি নির্ধারিত ফি চেয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পরীক্ষা করালেও নামমাত্র সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। সরকারি কোয়াটারে বসবাস না করে উক্ত কোয়াটার গুলো বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে আদায়কৃত অর্থ নিজে আত্মসাৎ সহ হাসপাতালের নার্স স্বপ্নাকে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে না পেরে তার বেতন বন্ধ সহ নানা রকম নির্যাতন চালানো হয়। ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেনজিনটিভ মিজানুর রহমান এবং মালি হান্নানকে ডাক্তার বানিয়ে অপারেশন থিয়েটার সহ জরুরী বিভাবে ডিউটি ছাড়া তাদের দ্বারা জখমী সনদের বাণিজ্য করা হতো। ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেনজেনটিভদের মোটা অংকের টাকা নিয়ে ডাক্তারদের ঐসমস্ত কোম্পানীর ঔষধ লিখতে বাধ্য করা। হাসপাতালের রোগীদের নিম্ন মানের খাবার দিয়ে ঠিকাদারের যোগসাজসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং তিনি নিজে সরকারি বাস ভবনে না থেকে গ্রামের বাড়ী রতনপুর থেকে প্রতিদিন সরকারি গাড়ী ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার যাতায়াত ছাড়াও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচারণ করা হয় স্বেচ্ছাচারীতা সহ দূর্নীতি করে আসছিলো। উক্ত ঘটনা উপজেলাবাসী অতিষ্ট হয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, দূর্নীতি দমন কমিশন, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ০৬/১০/২০২০ ইং তারিখে স্বা/অধি/শৃঙ্খলা/১২১/২০২০/৭৮৪৬ নং স্মারক মূলে যশোরের জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আবু শাহিন সরজমিনে কালিগঞ্জ হাসপাতালে এসে দিনভর তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান। উক্ত তদন্ত রিপোটে সত্যতা মেলায় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ডাঃ শেখ তৈয়েবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়।