
খালি হাতে শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরায় আসে শাহিনুর। সাতক্ষীরায় তিনটি ও খুলনায় একটি বাড়ি আছে। তিনদিন আগেই কিনেছে ২৪লাখ টাকার ব্যক্তিগত গাড়ি। নিজ বাড়ি পদ্মপুকুর এলাকার কয়েকশ যুবক তার খপ্পরে পরে নিঃস্ব।
আহাদুর রহমান জনি: অনলাই জুয়া খেলার এ্যাপ তিন পাত্তি গোল্ডের সাতক্ষীরার সাব-ডিস্ট্রিবিউটর শাহিনুর এখন কোটিপতি। শ্যমনগর থেকে খালি হাতে এসে সাতক্ষীরা ও খুলনা শহরে চারটি বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি ছাড়াও বিপুল পরিমান সম্পদ আছে তার।
শাহিনুরের গ্রামের বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পুটিখাটা গ্রামে। তার বাবা মোঃ সায়ীদ চাষাবাদের পাশাপাশি জুয়া খেলে হারিয়েছে সর্বস্ব। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফড়কা ব্যবসা করে কিছু টাকা বানিয়ে ফেলে শাহিনুর। পরে যোগাযোগ করে তিন পাত্তি গেমসের একজন ডিস্ট্রিবিউটরের সাথে যার বাড়ি কুল্লিায়। কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়ি হওয়ার সুবাদে তার সাথে ঘটে পরিচয়। এরপর সাতক্ষীরায় তিন পাত্তির সাব-ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে শুরু করে চিপসের ব্যবসা। প্রথম প্রথম প্রতি কোটি চিপস ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি করে। কিছুদিন পর সাতক্ষীরা শহরে বেশ কিছু চিপস বিক্রেতা ছিলো যারা বিভিন্ন সময় ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে চিপস বেচা-কেনা করতো তারা ধরা পড়লে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে তিনপাত্তির ব্যবসা ছেড়ে দেয়। শাহিনুর সাব-ডিস্ট্রিবিউটরশীপ ছেড়ে দিলে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সাগর সাব-ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে এ ব্যবসা শুরু করে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও সাব-ডিস্ট্রিবিউটরশীপ নেয় শাহিনুর। তার জুয়া খেলানোর প্লাটফর্ম গোপন করতে পুরাতন মোবাইলের ব্যবসা শুরু করে। নাম দেয় মোবাইল এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট। সাতক্ষীরা শহরের আবুল কাশেম সড়কে এমআর পরিবহনের পাশেই শো-রুমটির অবস্থান। কিন্তু তিন পাত্তিগোল্ড এর কার্যক্রম চলে ঠিক শোরুমটির দোতলায় অবস্থিত দোকানে। সেখানে শুধু মাত্র শাহিনুরের তিনপাত্তি গেমের এজেন্টরা যাওয়া আসা করে। এছাড়াও অনলাই বেটিং সিস্টেম অনএক্সবেট এর মাস্টার এজেন্ট সে। তার এসব কর্মকান্ড নিয়ে কেউ মুখ খুলতে গেলেই প্রশাসনের বিভিন্ন বড় বড় কর্তব্যক্তিদের বন্ধু আখ্যা দিয়ে ভয় দেখায়।
এখানেই থেমে নেই শাহিনুরের অপকর্ম। তার মোবাইল এক্সচেঞ্জ পয়েন্টের মোবাইলের মধ্যে অনেকগুলো ভারতীয় চোরাই মোবাইল। কথিত কিছু বিজিবি’র সোর্সের কাছ থেকে সেগুলো সে সংগ্রহ করে থাকে সে। প্রতিদিন রাত ১০ থেকে ১১টার মধ্যে আলিপুর এলাকার বয়রায় ফেন্সিডিল সেবন করতে যায়। দুটো করে ফেন্সিডিল প্রয়োজন হয় তার এ জন্য সে একটি রেন্টএকার মাসিক ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া করে রেখেছে। দুই স্ত্রী ও এক ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানের জনক শাহিনুরের সাতক্ষীরা পৌরসভার রসুলপুরে ৪কাঠা জমির ওপর দুইতলা দুটি বাড়ি ও বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ৪কাঠা জমির ওপর আরও একটি বাড়ি আছে। খুলনাতেও একটি বাড়ি কিনেছে বলে খবর পাওয়া যায়। গত সোমবার (৩১অক্টোবর) ২৪ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি টয়োটা এক্সিও গাড়ি কিনেছে শাহিনুর।
সাতক্ষীরা মোবাইল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রিপন ও সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল সাতনদীকে নিশ্চিত করেন যে, তাকে আমাদের মোবাইল ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য করা হয়। কিন্তু অনলাইনে জুয়া খেলাসহ সমিতির নিয়ম কানুন না মানার অভিযোগে তার সমিতির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। এসব কারণে তাদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে শাহিনুর।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ লিয়াকত হোসেন খোকন জানান, শাহিনুরের বাবা জুয়া খেলতে গিয়ে সব হারিয়েছে। এলাকায় তাকে মিনি ক্যসিনো নামে ডাকে সবাই। শাহিনুর ভবঘুরে টাইপের ছিলো। মোবাইলের দোকান করার পর অনলাইনে জুয়া খেলে প্রচুর টাকার মালিক বনে যায় সে।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা শফি জানান, আমাদের এই এলাকাটা পুরো ধ্বংস করে দিয়েছে শাহিনুর। যুব সমাজের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। এই এলাকার কয়েকশ যুবক এখন নিঃস্ব। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এসব বিষয়ে শাহিনুরের কাছে জানতে তার প্রতিষ্ঠান মোবাইল এক্সচেঞ্জ পয়েন্টে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও তার ব্যবহৃত নম্বরটিতে ফোনদিলে সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
উল্লেখ্য, অনলাইন জুয়া পরিচালনায় যুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর প্রেস ব্রিফিং করে র্যাব। গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন- জামিলুর রশিদ, সায়মন হোসেন, রিদোয়ান আহমেদ, রাকিবুল আলম, মুনতাকিম আহমেদ ও কায়েস উদ্দিন আহম্মেদ। রোববার রাতে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ রাজধানীর মহাখালী ও উত্তরা এলাকায় এ অভিযান চালায়। এ সময় জব্দ করা হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, সিপিইউ, সার্ভার স্টেশন, হার্ড ডিস্ক, স্ক্যানার, ডিভিডি ড্রাইভ, চেকবই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, নগদ টাকাসহ সরঞ্জাম। এই গ্রুপেরই অন্যতম সদস্য হলো শাহিনুর।