সরকারী সব ধরনের নিয়োগে ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলায় ডোপ টেস্টের জন্য মিনি ল্যাব বসানো হচ্ছে। এরইমধ্যে এসব জেলায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য জেলা মাদক অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত নোটিস পাঠানো হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালাও প্রণয়ন করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ২১টি জেলায় ডোপ টেস্ট চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় এ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ম‚লত কোন মাদকাসক্ত যাতে সরকারী চাকরিতে যোগদান করতে না পারে সেজন্যই এ ব্যবস্থা। উলেখ্য সম্প্রতি পুলিশে শতাধিক সদস্য মাদকাসক্ত বলে চিহ্নিত হওয়ায় বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলে বিব্রতকর অবস্থা দেখা দেয়। যদিও ২০১৮ সালে প্রণীত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হওয়ার পরই সরকারী চাকরিতে নিয়োগের আগে অন্যান্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে ডোপ টেস্ট করার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এ ডোপ টেস্টের বিষয় উলেখ থাকায় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কর্তৃক গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড বা ক্ষেত্র বিশেষ সমপদমর্যাদার কোন মেডিক্যাল অফিসার কর্তৃক স্বাস্থ্যবিষয়ক যে সকল পরীক্ষা করা হয় তার সঙ্গে ডোপ টেস্ট অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পরে ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকারী চাকরিতে যোগ দেয়ার আগে ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা বাধ্যতাম‚লক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু বিধিমালা না থাকায় তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। যতটুকু করা যাচ্ছে তা সম্পন্ন করতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কেন্দ্রগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ওই সিদ্ধান্তের পর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখায় সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরি প্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে ডোপ টেস্টের জন্য। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে এসব টেস্ট করা কর্মকর্তাদের কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ পুলিশের শতাধিক সদস্য মাদকাসক্ত হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে পুলিশ সদর দফতর। যদিও মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কঠোর শাস্তিম‚লক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারপরও ভবিষ্যতে যাতে এ প্রবণতায় লাগাম টানা যায় সেজন্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডোপ সিদ্ধান্ত দ্রæত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিধিমালার কাজ শেষ পর্যায়ে। আমরা প্রাথমিকভাবে দেশের ১৯টি জেলায় এই কার্যক্রম শুরু করতে মাদকদ্রব্য অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে চিঠি দিয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ ডোপ টেস্টের বিষয়ে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চীফ কনসালটেন্ট, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি, প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষক, পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ পাঁচজনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। অবশ্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির প্রধান থাকবেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক। বর্তমানে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল জব্বার। এ কমিটি মানবদেহে মাদকের উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি, কোন উপাদান পরীক্ষা করা হবে, ডোপ টেস্টের ব্যয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক বিশেষায়িত ডোপ টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে। এদিকে এসব কাজের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ১০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। যা খুব শীঘ্রই অনুমোদিত হবে বলে জানিয়েছে মাদক বিভাগ।
কি ধরনের টেস্ট করা হবে জানতে চাইলে একজন মাদক কর্মকর্তা বলেন, দেশে বর্তমানে যে টেস্ট করা হচ্ছে- তাতে ডোপ টেস্টে মুখের লালা পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ সাতদিন, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ দুই মাস, চুল পরীক্ষার মাধ্যমে ১ বছর এবং স্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষার মাধ্যমে গত পাঁচ বছরের মধ্যে মাদক গ্রহণের তথ্য পাওয়া যাবে। যদিও বর্তমানে শুধু ইউরিন পরীক্ষার মাধ্যমে ডোপ টেস্ট করা হয়, যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি ১০ দিনের ভেতর মাদক গ্রহণ করেছেন কি না তা ধরা পড়বে। শুরুর দিকে ডোপ টেস্ট ফ্রি থাকলেও গত বছরের অক্টোবরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এক পরিপত্র জারি করে ফি নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী ডোপ টেস্টের জন্য নন স্পেসিফিক পরীক্ষার জন্য ৬০০ টাকা ও এ্যালকোহল পরীক্ষার জন্য ৩০০ টাকা। শুধু সরকারী চাকরিই নয় বেসরকারী চাকরি প্রত্যাশীদের ক্ষেত্রেও এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
গতকাল ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে উপরোক্ত তথ্য জানাযায়। বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও প্রসংশনীয়। আমরা সরকারের এহেন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। তবে সংশয় যেখানে তা হলো, প্রকল্পের টাকা যেন তছরুপ এবং আইনের যেন কোন রকম অপব্যাবহার না হয়।