
জগন্নাথ রায়/ইমান আলী: নিজেকে মনে করেন ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী। তার কথার বাইরে যাওয়ার সাধ্য নেই কারো। তার নির্দেশে চলছে স্কুলের কার্যক্রম। আয়া পদে বাণিজ্য করতে না পেরে ঝুলে আছে আয়া যোগদান প্রক্রিয়া। এবার প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য সম্পন্ন করতে শুরু হয়েছে নানা রকম অনৈতিক কারসাজি।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ১০নং খেশরা ইউনিয়নের কলাগাছি সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কৃষ্ণপদ ব্যানার্জীর অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাপটে এসব হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ।
সভাপতির খাম-খেয়ালীপনায় দেড় বছরে প্রতিষ্ঠানটির মান নিম্ন পর্যায়ে পৌছে গেছে। স্কুলের শিক্ষকরা থাকেন তার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত্র। স্বাধীন দেশে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ।
জানা যায়, রাজাপুর গ্রামের নারায়ন চন্দ্রের স্ত্রী কৃষ্ণারাণী ১৯৯৫ সালে বিনা বেতনে আয়া পদে যোগ দেন। ২০১৮ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তরের এক পরিপত্রে আয়া নিয়োগের তথ্য আসে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আয়া নিয়োগে কৃষ্ণারাণীর তথ্য পাঠায়। এতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে আয়াকে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি-ধামকি দিয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করে আয়া কৃষ্ণারাণীকে যোগদানের চেষ্টা করলেও সেটিও প্রবল আপত্তি ও চাপের মুখে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আয়া নিয়োগ চুড়ান্ত করতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এক লক্ষ টাকা দাবী করে। পরে ৭০ হাজার টাকা দিতে রাজী হলেও সেটা নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে যায়।
এসব ঘটনা নিয়ে কৃষ্ণারাণীর কলেজ পড়–য়া কন্যা নবনিতা রায় (জয়া) লিখিতভাবে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করে। এই আবেদনের তদন্তভার ন্যস্ত হয় তালা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহারের উপর। তিনি দীর্ঘ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তদন্ত করে পুরো ঘটনার সত্যতা তুলে প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদনে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি উঠে আসে। একই সাথে ম্যানেজিং কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখারও মতামত ব্যক্ত করেন।
এই প্রতিবেদনের আলোকে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিলেও সেটা আর আলোর মুখ দেখিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই। যা কিছু করবে শিক্ষা বোর্ড। ইউএনও মহোদয় আমাকে লিখলে কাজ হবে না। সেটা উনি বোর্ড বরাবর লিখুক।
এ ব্যাপারে জানার জন্য তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেনের সররকারী মোবাইল ফোনে একাধিক বার রিং দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কৃষ্ণপদ ব্যানার্জী এবার কোমর বেঁধে নেমেছেন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক বানাতে তৎপর হয়েছে। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হরিদাসী সরকারও আবেদন দিয়েছে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে তিন বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদন পড়েছে ১৩টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ আবেদনকারীকে ম্যানেজ করে আবেদন করানো হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। আবেদনকারীর মধ্যে ইতিমধ্যে দুখীরাম ঢালী নামের একজন অন্য একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন।
রবিবার (৯ ফেব্রæয়ারী) সরেজমিনে গিয়ে ম্যানেজিং কমিটির যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে গিয়েও এর সত্যতা মিলেছে। সাংবাদিক উপস্থিতির খবর পেয়েই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কৃষ্ণপদ ব্যানার্জী অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে স্কুলের অফিস কক্ষ থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে সাংবাদিকদের তোপের মুখে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহ স্কুলের পুরো অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হরিদাসী সরকার জানান, নিয়ম অনুসারে প্রধান শিক্ষক হওয়ার আমি একমাত্র দাবীদার। আমাকে বৈষম্যের চোঁখে দেখা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার কথা আমার। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির কারনে একজন সহকারী শিক্ষককে বানানো হয়েছে। তিনি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, আমার সাথে সকল স্টাফদের সু-সম্পর্ক রয়েছে। সব কিছু নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে এমনটি নয়। আমি অল্প কয়দিন আছি আমার কি বা করার আছে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কৃষ্ণপদ ব্যানার্জী জানান, আয় কৃষ্ণারাণীর স্বামীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়নি বলে আমার বিরুদ্ধে বদনাম ছড়ানো হচ্ছে। অনিয়ম বা দুর্নীতি কোন কিছুই হচ্ছে না। আমরা চাই স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হোক। আপনার পছন্দের কোন লোক আছে কিনা এমন প্রশ্ন করতেই হেঁসে চুপ মেরে যান।