
শেখ আব্দুল হাকিম, শ্যামনগর থেকে: সীমানা জটিলতার জেরে শেষ পর্যন্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার তিন ইউনিয়নের ভোট আটকে গেছে। অপর নয়টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহনের দিনক্ষন ঘোষনা হলেও বাদ পড়েছে শ্যামনগর সদরসহ ঈশ^রীপুর ও ভুরুলিয়া। বুধবার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চতুর্থ দফার নির্বাচনে আগামী ২৩ ডিসেম্বর দেশের অপরাপর অংশের সাথে শ্যামনগরে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। শ্যামনগর সদর ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করার প্রক্রিয়াকে ঘিরে মূলত ইউনিয়ন তিনটিতে ভোটের দরজা বন্ধ হলো।
এদিকে শুরু থেকে দারুন উচ্ছ¡াস ও উদ্দীপনা নিয়ে ভোটের অপেক্ষায় থাকা এ তিন ইউনিয়নের মানুষের মাঝে ভোট স্থগিতের খবরে হতাশাভর করেছে। দীর্ঘ সময়েও সীমানা জটিলতার নিরসন করে ইউনিয়ন গুলোতে ভোটের সুযোগ সৃষ্টি না করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি তীব্র অসন্তোষ ও প্রকাশ করেছে তারা। একই ভাবে এসব ইউনিয়নের সাম্ভব্য প্রার্থীরা ভোট স্থগিতের ঘটনাকে চলমান দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধিদের চক্রান্ত – দাবি করে ইউনিয়ন গুলোকে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের আওতাভুক্ত করার আহবান জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ নভেম্বর শ্যামনগরের নয় ইউনিয়নের সাম্ভব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে পারবে। ২৯ নভেম্বর বাছাই এবং ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর আপিল দায়ের ও ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর আপীল নিস্পত্তির সময়সীমা নির্ধারন করা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন৬ ডিসেম্বর ও ৭ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর ২৩ ডিসেম্বর ভোট অনুষ্ঠানের ঘোষনা দেয়া হয়েছে। কমিশন সুত্রে আরও জানা গেছে নয়টির মধ্যে আট ইউনিয়নে পুর্বের ন্যায় ব্যালট/বক্স ও সিল পদ্ধতি বহাল রাখা হলেও ৬ নং রমজাননগর ইউনিয়নে ইভি এম পদ্ধতিতে ভোট হবে।
জানা গেছে শুরুতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও পরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæতি রক্ষার্থে কয়েক বছর আগে শ্যামনগর সদর ইউনিয়নকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষনা দেয়া হয়। এ ঘটনার পর শ্যামনগর পৌরসভার আয়তন ও সীমানা নির্ধারনসহ সার্বিক কার্যক্রম বেশ দ্রæত গতিতে এগিয়ে নেয়া হয়। এসময় পাশর্^বর্তী ভুরুলিয়া ইউনিয়নের ১১ ও ঈশ^রীপুরের ৫টি গ্রামকে শ্যামনগর পৌরসভার আওতাভুক্ত করা হয়। সিংহভাগ গ্রাম ইউনিয়নের বাইরে চলে যাওয়ার দরুন সংশ্লিষ্ট দুই ইউনিয়নে আয়তনসহ সার্বিক কার্যক্রমে নানাবিপত্তি দেখা দেয়ার অভিযোগ তোলেন তারা। এক পর্যায়ে ঐ দুটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের সীমানা নুতন করে নির্ধারনসহ বেশ কিছু শর্ত পুরণের দাবি জানিয়ে প্রস্তাবিত শ্যামনগর পৌরসভা বাস্তবায়ন কার্যক্রম স্থগিতে আদালতের শরানাপন্ন হয়। এসব ঘটনার জেরে কতৃপক্ষের তরফে গেজেট প্রকাশনা হওয়ায় উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে এক যোগে ভোট হওয়ার বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিশেষ উম্মাদনাও তৈরী হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যš চতুর্থ দফার নির্বাচনে আলোচিত তিনটি ইউনিয়ন বাইরে থাকায় এসব ইউনিয়নের ভোটার ও সাম্ভব্য প্রার্থীসহ সাধারন মানুষের মধ্যে তীব্র হতাশা তৈরী হয়েছে।
ভুরুলিয়া ইউনিয়নের শহীদ হোসেন জানান, লম্বা সময় পরে ভোট হওয়া নিয়ে ভীশন খুশি হয়েছিল সবাই। কিন্তু এভাবে ভোট বন্ধের কারনে স্থানীয়রা ভোটা ভুটির আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
ঈশ^রীপুর ইউনিয়নের সোহাগ হোসেন ও নুর হোসেন জানান, গত কয়েক মাস ধরে ভোটের জন্য মানুষর মধ্যে দারুন উৎসাহ দেখা গিয়েছে। কিন্তু এভাবে ভোট বন্ধের ঘোষনায় সকলের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের সাম্ভব্য প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক স,ম আব্দুস সাত্তার জানান, সীমানা নির্ধারনসহ ভোটার অন্তর্ভুক্তির মত যাবতীয় বিষয় নিস্পত্তির পরও এভাবে ভোট আটকে যাওয়া গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। দায়িত্ব দীর্ঘ মেয়াদী করার অপ-কৌশল হিসেবে চলমান দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধিরা এমন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সমস্যা সমাধান করে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে এ তিন ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী ও কার্যকর হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।