
আকরামুল ইসলাম, প্রধান প্রতিবেদক : ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক আর কমিটি গঠণের নামে চাঁদা আদায় এসব ঘটনা আশাশুনি উপজেলায় সর্বজন স্বকৃত। ছাত্রলীগের ব্যানারে এসব করা হয় প্রকাশ্যে। তবে ক্ষমতাসীন এক নেতার ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজির এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায় খুব সহজেই। আর ইউনিয়ন কমিটি গঠণের নামে চাঁদা উত্তোলন এসব চলে হরহামেশা। আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসমাউল হুসাইনের কমিটি গঠণের নামে চাঁদাবাজির একটি কথপোকথনের কল রেকর্ডও এসেছে সাতনদীর হাতে। আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয় এক মাস আগে। যদিও ভেঙ্গে দেওয়া কমিটি গঠণকালে দশ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আসমাউল হুসাইন। পরে চাহিদামত চাঁদা দিতে না পারায় এক বছর আগে গঠণকৃত কমিটি এক মাস আগে ভেঙে দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গত ২ ডিসেম্বর লাকী বিল্লাহকে সভাপতি ও সজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠণ করা হয়। খাজরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলিউল্লাহ্ ইসলাম জানান, এক মাস আগে আমার কমিটি ভেঙে দিয়ে উপজেলা কমিটি নতুন কমিটি গঠণ করে। কোন অভিযোগ ছাড়াই কমিটি ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়হান সাদ জানিয়েছে, কমিটি ভাঙার বিষয়টি আমি জানি না। সভাপতি নিজ দায়িত্বে কমিটি ভেঙেছে ও নতুন কমিটি গঠণ করেছে। আমার কমিটি গঠণকালেও উপজেলা সভাপতি আসমাউল হুসাইনকে চাঁদা দিতে হয়েছিল।
একই ঘটনা উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগে। তবে এ ইউনিয়নে সভাপতি আসমাউল হুসাইনের তাণ্ডব আরও ভয়াবহ। পূর্বের কমিটি ভেঙে দিয়ে এক মাসেই গঠণ করা হয় দুই কমিটি। প্রতাপনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের মিলন ও মেহেদীর চলমান কমিটি উপজেলা ছাত্রলীগ ভেঙে দেয় ১২ ডিসেম্বর। ওই তারিখেই সাত সদস্য বিশিষ্ট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠণ করা হয়। কমিটিতে মাহমুদুল হাসান মিলনকে সভাপতি ও আক্তারুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই কমিটি গঠণের তিনদিন পর ১৫ ডিসেম্বর গঠণ করা হয় প্রতাপনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নতুন আরেকটি কমিটি। ১৫ ডিসেম্বর গঠণকৃত কমিটিতে আশিকুজ্জামান ঢালীকে সভাপতি ও আজমীর হাসান সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠণ করা হয়। প্রতাপনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠণিক সম্পাদক তাহমিদ হোসেন জানান, এক মাসে প্রতাপনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তিনবার কমিটি ভাঙাগঙা হয়েছে। মনগড়াভাবে চলছে ঐতিহ্যবাহি এ ছাত্র সংগঠণটি। কমিটি ভাঙার পর সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়দান সাদ ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছিল কমিটি ভাঙার ব্যাপারে তিনি জানেন না। তবে পরবর্তীতে সেই ফেসবুক স্টাটাসটিও আবার মুছে দেয়। কিভাবে কি হচ্ছে আমি জানি না। এমন চিত্র শুধু খাজরা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নেই নয় গোটা উপজেলাজুড়ে ছাত্রলীগের কমিটিতে। শুধু ছাত্রলীগের কমিটি গঠণে চাঁদাবাজি শেষ নয় উপজেলা সরকারি দপ্তরগুলোতে পদচারনা ছাত্রলীগ সভাপতি আসমাউল হুসাইনের। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক সেবনের অভিযোগ। তার মাদক হাতে একটি ছবি দেখা যায় বিভিন্নজনের মুঠোফোনে। তবে মাদক হাতে ছবির বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সভাপতি আসমাউল হুসাইন বলেন, আমাকে ব্লাক মেইল করে ছবিটি তুলেছিল জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। আমি মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত নই। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসমাউল হুসাইন বলেন, কেউ বলতে পারবে না আমি কমিটি গঠণের নামে কারো কাছ থেকে একটি টাকা নিয়েছি। রাজনৈতিক লবিং গ্রুপিংয়ের কারণে প্রতিপক্ষরা এমন ষড়যন্ত্র করে। কমিটি গঠণের নামে টাকা চাওয়ার কথোপকথনের রেকর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কমিটি গঠণ ও চাঁদাবাজির যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। অপরদিকে, আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে সমন্বয় নেই জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়হান সাদ বলেন, কমিটি ভাঙাগঙার কোন কাজেই আমি সংশ্লিষ্ট নই। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসমাউল হুসাইন ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টি ছয়টি ইউনিয়ন তার আন্ডারে বাকি পাঁচটি ইউনিয়ন আমি দেখি। সংগঠণ ব্যক্তির দায় দেবে না। কেউ অপরাধ করলে দায় তার। কমিটি গঠণের চাঁদা চাওয়ার রেকর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, রেকর্ডটি আমার নয়। আমার নাম করে কমিটি গঠণের নামে টাকা চাওয়া হয়েছিল।
ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের নামে ৩০-৫০ হাজার টাকা করে উত্তোলন করা হয়। কমিটিতে থাকা সদস্যদের কাছ থেকেও তোলা হয় এক থেকে দুই হাজার টাকা। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাঁদাবাজির ঘটনা ওপেন সিক্রেট।