মনিরুল ইসলাম মনি:
চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাব ও কলেজ ক্যাফেটরিয়া উদ্ধোধন করা হয়েছে। এর দেড় মাস আগে হিস্টোপ্যাথলজি ল্যাব উদ্বোধন হয়। এবার ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাব উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেলে আরও একটি মাইলফলক উন্মোচিত হলো। যেখানে খুব কম খরচে মরণ ব্যাধি ক্যান্সারসহ মানবদেহের বিভিন্ন উপাদন পরিক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় করে মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে পারবে। যার কারনে নিশ্চিত চিকিৎসা সেবায় আরও একধাপ অগ্রগতি লাভ করলো সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সোমবার (২০ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে মেডিকেল কলেজের এক্সাম হলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাবের উদ্ধোধন ঘোষনা করেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল কুদ্দুস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা একটি মহান পেশা। মানুষসেবার ব্রত নিয়ে ছেলে-মেয়েরা এই পেশায় আসে। যে কারণে মানুষ চিকিৎস্যকদের খুই শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। কিন্তু সেই সম্মান আপনাদেরকে ধরে রাখতে হবে। মানুষ যেন তার কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে চিকিৎসকদের খেয়াল রাখতে হবে। আপনাদের ভাল ও দক্ষ চিকিৎসা কার্যক্রম মানুষের স্বাস্থ্য সেবার নির্ভরতার প্রতীক হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল হাসপাতাল।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজ থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে যে ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাব চালু হচ্ছে সেটা থেকে মানুষ আরো উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সাতক্ষীরার আপামর সাধারণ মানুষ যাতে এই ল্যাবে সুফল পায় এবং কোন মানুষ চিকিৎসা নিতে এসে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়ালা রাখতে তিনি চিকিৎস্যকদের দৃষ্টি আর্কষন করেন।’
এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি আরও বলেন, ‘করোনার সময় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ যে সেবা দিয়েছে মানুষ সেটি মনে রেখেছে। শুরুর দিকে মেডিকেল কলেজ নির্মান কাজ নিয়ে পরিচালনা কমিটির সমালোচনা করে তিনি বলেন, হাসপাতাল তৈরীর সময় তৎকালিন পরিচালনা কমিটি সঠিক ভাবে দেখভাল করলে এখন যে সব সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটি হতো না। মেডিকেল স্থাপনের সময় ৪ বিঘা জমি কেটে নিতে চেয়েছিল। সেটি বন্ধ করা হয়। পরিচালনা কমিটিতে আমরা থাকার কারনে হাসপাতাল ও কলেজের অগ্রগতি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমপি ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক মহোদয় তার একান্ত ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় তিনি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ও আমি হাসপাতালকে এগিয়ে নিয়েছি। ২৫০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নিত করেছি। মানুষ তার সুফল ভালভাবে পাচ্ছে। আমাদের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসে লিফট যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। যেটি অত্যান্ত দুঃখ জনক ও অনাকাক্ষিত ঘটনা। আর সেই কারনে মামলা হয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ কুদরত ই খোদাসহ অনেক স্টাফ ও ডাক্তারকে হয়রানির স্বীকার হতে হয়েছে। বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। আশাকরি টেকনোলজিষ্ট ও ডাক্তাররা তাদের দক্ষ মেধা শক্তি ও সুচিকিৎসা দিয়ে মানুষকে সঠিক সেবা প্রদান করবে সবার কাছে এই প্রত্যাশা।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএম এ সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি ডাঃ মোঃ আজিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা মেডিকেল কলেজের অনকোসার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মনোয়ার হোসেন, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সবিজুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি(ভারপ্রাপ্ত) হাবিবুর রহমান, মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজী আরিফ আহমেদ, গাইনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ শংকর প্রসাদ বিশ্বাস, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডাঃ অভিজিত গুহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মেডিকেল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সুনীল কৃষ্ণ বল।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাব চালুর মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ এর আর একটি মাইলফলক উন্মোচিত হলো। ২০১২ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ হতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর একে একে এই মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল হয়ে উঠছে এই অঞ্চলের ২৩ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার নির্ভরতার আশ্রয়স্থল। কিন্তু এই নির্ভরতা অর্জন একদিনে হয়নি। কিছুদিন পূর্বে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হিস্টোপ্যাথলজি ল্যাব এর উদ্ভোদন হয়। তার দেড় মাসের মাথায় আমরা আমাদের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাবের উদ্বোধন করতে পেরেছি। আর এরই সাথে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ মেডিকেল সার্ভিসে পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। এজন্য আমার আনন্দিত এবং গর্বিত। এই অঞ্চলের মানুষ ল্যাবের সুফল ভোগ করবেন।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল কুদ্দুস আরও বলেন, মেডিকেলের পিসিআর ল্যাব সার্ভিস ভার ভাবে চলছে। ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাব চালুর কার্যক্রম শুরু হলো। আজ গৌরবের দিন। আমরা তিনটা পেসটিসিয়াস ম্যাশিন পেলাম। ম্যাশিনারিজ সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান ও টেকনোরজিষ্টদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন আনেক সময় দেখাযায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ম্যাশিন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ম্যাশিনগুলো চালু হয়েছে। ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি ল্যাব বলতে আমরা সাধারনত হেমাটোলজিক্যাল, বায়োকেমিক্যাল, মাইক্রোবায়োলজিক্যাল এবং ইমিউনোলজিক্যাল টেস্টকে বুঝি। এই ধরনের টেষ্ট গুলো যন্ত্র নির্ভর সুতরাং ভালো যন্ত্রপাতির সাথে পরিক্ষা-নিরীক্ষা ভাল হলে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ এর ক্লিনিক্যাল প্যাথলজির খুটিনাটি এবং এর বিভিন্ন সফসটিকেটেড ইন্সট্রুমেন্ট সম্পর্কে অবহিত করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ এর বায়ো কেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ল্যাবরেটরি সার্ভিস এর সদস্য সচিব ডাঃ শেখ নাজমুস সাকার।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ফিতা কেট কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে কলেজ ক্যাফেটরিয়ারও উদ্ধোধন ঘোষনা করেন। পরে দোয়া মোনাজাতের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।