
লিটন ঘোষ বাপি, দেবহাটা থেকে: দেবহাটা সরকারি বিপিন বিহারি মেমোরিয়াল পাবলিক ইনস্টিটিউশানের শতবছরের পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে পড়তে শুরু করেছে কয়েক বছর ধরে। আর তাই পাঠদান বন্ধ রেখে পুরনো ভবন পরিত্যক্ত ঘোষনা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরিত্যক্ত ঘোষনার ৩ বছর পার হলেও অপসারণ না হওয়ায় ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের ইছমতি নদীর তীরে অবস্থিাত দেবহাটা সরকারি বিপিন বিহারি মেমোরিয়াল পাবলিক ইনস্টিটিউশানের হাল চিত্র। ১৯১৯ সালে তৎকালিন জমিদার ফনিভূষন মন্ডল তার বাবার নামে বিপেন বিহারী মেমোরিয়াল পাবলিক ইনস্টিটিউশনের নামকরণ করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিদ্যালয়টি বেশ সুনাম অর্জন করে চলেছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৭১৬ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। এছাড়া ১৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৩ জন খন্ডকালিন শিক্ষক পাঠদান করছেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে যাত্রা শুরু করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে এমপিও ভুক্ত হয়। গত ২০১৮ সালের ৭ মে দেবহাটা বিপিন বিহারি মেমোরিয়াল পাবলিক ইনস্টিটিউশান সরকারিকরণ করেন বর্তমান সরকার। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা পরবর্তী উত্তরপাশের ৩ তলা বিশিষ্ট ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে কর্তৃপক্ষ পুরাতন ভবনে ক্লাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে পরিত্যক্ত ঘোষনা দেন। সেই সাথে ভবনটি অপসরণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কোন সুফল না পাওয়ায় বর্তমানে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেই সাথে ভবনের বিভিন্ন অংশ ধ্বংসে পড়তে শুরু করেছে। এমনকি ভবনের বিভিন্ন দেয়াল হেলে পড়েছে। ছাদের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। যে কোন সময় বড় দূর্ঘটনার আশাংঙ্কা বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ জানান, তাদের বিদ্যালয়ের মাঠে খেলা করার সময় ভয়ে থাকতে হয়। পুরানো ভবন বিভিন্ন সময় ভেঙে পড়ায় তাদের সব সময় আতঙ্কে চলাফেরা করতে হয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতুর ফেরদৌস, চৌতালি রায়, রিয়া দত্ত জানান, যেখানে পুরানো ভবন তার পাশে স্কুলের একটি মন্দির রয়েছে। মন্দিরে প্রার্থনার সময় তাদের ভয়ে থাকতে হয়। তাছাড়া ভবনের নিচ দিয়ে হাটতে গেলেও গা ছম ছম করে। এমনকি বিদ্যালয়ের মাঠে সমাবেশ করার সময় পুরাতন ভবন ভেঙে পড়ার ভয় কাজ করতে থাকে। তাই দ্রুত ভবনটি ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের সহকারী বাংলা শিক্ষক মোঃ আব্দুল্যাহ জানান, পুরাতন ভবনটির আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় ইতোমধ্যে এটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। কিন্তু ভেঙে না ফেলায় আমরা চরম ঝুঁকিতে আছি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পাল জানান, শতবর্ষে পর্দাপন করা বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবনটি ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় ৩ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে ভবন ভেঙে ফেলার অনুমতি চেয়ে চলতি বছরের ১৯ মার্চ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অনুমতি চাওয়া হয়। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ২৭ এপ্রিল পত্রের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেন। তারই প্রেক্ষিতে ১৫ মে জেলা প্রশাসক ভবনটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাা নিতে নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ দেন। ইউএনও মহোদয় ব্যবস্থা নিতে ১৯ জুলাই সহকারী প্রকৌশালী (শিক্ষা) এর নিকট দর নির্ধারনে জন্য পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরেও এখনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা খুবই ঝুঁকিতে আছি। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনার মাধ্যমে ভবনটি ভেঙে ফেলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাা গ্রহনে অনুরোধ জানাচ্ছি।