
মাসুদুর রহমান মাসুদ, হাজরাখালি (আশাশুনি) থেকে ফিরে: এতো পানি বৃদ্ধি মানুষ আগে দেখেনি, পানির প্রবল স্রোতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে অসংখ্য মানুষ পানিবন্ধি ও ঘরছাড়া হয়েছে। নদীর করাল গ্রাসে মানুষ নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়ে আজ অবর্ননীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ এসব মানুষের দুর্দশা লাঘবে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। তবে মূল বাঁধ বা ক্লোজারের কাজ এখনই করা সম্ভব হচ্ছে না, নভেম্বর মাসের দিকে এ কাজ শুরু করা হবে। কিন্তু এভাবেতো প্লাবিতদের রেখে দেয়া যায় না। লোনা পানিতে তো মানুষ থাকতে পারে না। তাই এখন আপাততঃ রিং বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এলাকার বৃহত্তর জনগোষ্টিকে রক্ষার কাজ করা হবে। দু’ একের মধ্যে এ কাজ শুরু করা হবে। আর যারা খুবই সমস্যার মধ্যে আছে তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে। মানুষ যেন খাদ্য, পানীয়ের জন্য কষ্ট না পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেবল বাঁধ নির্মাণ নয়, সাথে সাথে কৃষি, মৎস্য’র ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার প্রনোদনার ব্যবস্থা করছে। ঘরবাড়ি নির্মাণে সহায়তার বিষয়টিও সরকার ভাবছে। শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বিকাল সোয়া ৩টায় আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালিতে ভাঙন করলিত ওয়াপদা বেড়িবাঁধ পরিদর্শন শেষে হাজরাখালী ভাঙ্গন কবলতি বাঁধের উপর প্লাবিত মানুষ ও সাংবাদিকদের সাথে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় উপরোক্ত কথা বলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের দুর্গতি লাঘবে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। সুপেয় পানি সংকট নিরসন, চিকিৎসা সেবা প্রদান সহ সকল প্রকার সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং যতক্ষণ প্রয়োজন করা হবে। সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। আপনাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সরকার সেনা বাহিনীকে দিয়ে বাঁধ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশ্ব পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, করোনা বিশ^কে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ^ব্যাপী করোনার প্রভাবে সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। সরকারকে একলক্ষ কোটি টাকার বাজেট করতে হচ্ছে। এটা একটা বালা (বিপদ), এ ‘বালা’ থেকে রক্ষায় সরকার কাজ করছে। সাথে সাথে প্লাবনের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি সাতক্ষীরার জেরা প্রশাসক ছিলাম। তাই আমি জানি এ জেলার মানুষ কতো আন্তরিক। তারা যে কোন দূর্যোগে সরকারী সহায়তার জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরা আত্মরক্ষার কাজ শুরু করে দেয়। তারা সরকারকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে। তাই আমরা স্থানীয় জনগণের এবং দুর্যোগের সাথে সহাবস্থানে থেকে এলাকাকে টিকিয়ে রাখার কাজে অভিজ্ঞ জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ ও শক্তি কাজে লাগাতে চাই। তাই আপনাদের শক্তি ও পরামর্শকে মাথায় রেখে আমরা বাঁধ রক্ষার কাজ এগিয়ে নিতে চাই।
এ সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য সরকার সবরকম সহযোগিতা করছে। মৎস্য’র ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি নিরুপনের কাজ চলছে। অসংখ্য কাঁচা- পাকা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবরকম ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করা হচ্ছে। এখনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য সরকারের কাছে ক্ষতি পূরণ চাওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বিগত ২০মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে এবং পরবর্তীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির চাপে বেড়ীবাঁধ ও রিং বাঁধ ভেঙ্গে আশাশুনির ৪৮ গ্রামের ৮০ সহ¯্রাধিক মানুষ প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদর- এই ৩ ইউনিয়নের অসংখ্য মৎস্য ঘের, শত শত ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ ও প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত মানুষ আশ্রয়ন কেন্দ্রে, রাস্তার উপরে ও বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কষ্টকর জীবন যাপন করছে। এসব মানুষের দুর্দশার চিত্র ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা স্বচক্ষে দেখতে শুক্রবার শ্যামনগর থেকে নদী পথে শ্রীউলায় এসে হাজরাখালী ভাঙ্গন কবলতি বাঁধের উপর প্লাবিত মানুষ ও সাংবাদিকদের সাথে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন এবং আরোচনা শেষে বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণও বিতরণ করেন।
এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার, শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন, আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা, আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবির, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও আবুল হোসেন, পিআইও সোহাগ খান, শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল, আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটন, বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিভাগীয় কমিশনার প্রতাপনগর ইউনিয়নের হরিষখালী, চাকলা ও শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা সহ বিভিন্ন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।