*ভোমরা কাস্টমের ৯ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত;
*মোটা টাকা ভাগ নিয়েছে রাজু-মাকছুদ;
আহাদুর রহমান জনি: পাঁচ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হলো সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের ৯ কর্মকর্তা। উচ্চ ডিউটি মূল্যের পণ্যের ট্রাকে ওজন কম দেখিয়ে পাঁচ দিনে সরকারের পাঁচ কোটি টাকার রাজস্ব ভাগাভাগি করার অভিযোগ আছে কাস্টম কর্মকর্তা ও ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে বিষয়টি ধরা পড়লে গত ১৪ মার্চ ৯জন কর্মকতাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আব্দুল হাই, মো জমির সহ তিনজন আরও এবং মিলন ও অপূর্ব সহ ছয়জন এআরও এ রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ঘটনার পর থেকে রহস্যজনক কারণে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের সভাপতি অস্ট্রেলিয়ায় এবং সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসাজনিত কারণে এসোসিয়েশনে আসেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার কাস্টম কর্মকর্তা ও ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সহায়তায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আমদানির চেষ্টা করা হয়। তবে ৯ মার্চ থেকে পরষ্পর যোগসাজসে ঢালাও ভাবে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেয় ভোমরা কাস্টমের কর্মকর্তারা। এ জন্য পাঁচদিনে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। যেসব পন্যে ডিউটি ফি বেশি সেসব পন্যের ওজনে ৫০ভাগ ছাড় দিয়ে পন্যের ডিউটি নির্ধারণ করে এ চক্র। এর মধ্যে গত ৯ মার্চ তারিখে আমদানি করা হয় আনার ৬ ট্রাক(প্রতি ট্রাকে ২২টন), আঙুর ৩ ট্রাক(প্রতি ট্রাকে ২২টন) ও পাথার ১৬২ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ৪৫-৫০টন), ১১ মার্চ তারিখে আনার ৪ ট্রাক, আঙুর ৫ ট্রাক ও পাথার ৭৪ ট্রাক, ১২ মার্চ তারিখে আনার ১ ট্রাক, আঙুর ৩ ট্রাক ও পাথার ১৫৩ ট্রাক, ১৩ মার্চ তারিখে আনার ২ ট্রাক, আঙুর ৪ ট্রাক ও পাথার ১২৪ ট্রাক, ১৪ মার্চ তারিখে আনার ৩ ট্রাক, আঙুর ২ ট্রাক ও পাথার ১২৩ ট্রাক মালামাল ডিউটিতে ৫০ভাগ ছাড় দিয়ে আমদানি করতে দেওয়া হয়। এই ৫০ ভাগ রাজস্বের ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে পরস্পর যোগসাজসে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে কাস্টম কর্মকর্তারা। অন্যদিকে কোটি টাকা ভাগ পেয়েছে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও এএসএম মাকসুদ খান। পুরো ঘটনা একাধীক গোয়েন্দা সংস্থার চোখে পড়লে এ সংক্রান্তে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তারা অভিযোগ করলে ১৪ মার্চ তারিখে তোলপাড় শুরু হয় ভোমরা স্থলবন্দরে। ঘটনা সামাল দিতে কাস্টম তার ৯ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। অন্যদিকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ হারিয়ে পরদিন থেকেই আমদানি কমিয়ে দেয় সুযোগ সন্ধানী আমদানিকারকরা। ফলে নামমাত্র আনার ও পাথর আমদানি করা হয়। মার্চের ৯, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখে মোট আমদানির মধ্যে আনারে দেড় কোটি, আঙুরে দেড় কোটি ও পাথরে দেড় কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়। অন্যদিকে খেজুর, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ সহ অন্যান্য পণ্যে আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়। যোগসাজসের মাধ্যমে সব মিলিয়ে পাঁচ দিনে পাঁচ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে আমদানিকারক, কাস্টম কর্মকর্তারা ও সিএন্ডএফ এজেন্টেস্ এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এ বিষয়ে কাস্টমের ডিসি নেয়ামুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা কেন বরখাস্ত হয়েছে সেটা অথরিটি বলতে পারবে। আমি সচিবের সাথে মিটিংয়ে আছি, কথা বলতে পারবোনা।’
সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও সাধারণ এএসএম মাকসুদ খানের ফোন নম্বরে এ অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে হোয়াটসএপে ভয়েস ম্যাসেজ দিলেও কোন উত্তর দেননি তারা। তবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ এজাজ আহমেদ স্বপনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘আমি এ ঘটনার কথা শুনেছি। ঘটনাগুলো ৯ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত। তখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসোসিয়েশনে ছিলেন। তারাই ভাল জানেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, ‘৯ (মার্চ) তারিখ থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মালামাল আমদানির সুযোগ করে দেয় কাস্টমের কিছু কর্মকর্তা। ১৪(মার্চ) তারিখে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ৯ কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়। তবে যতদূর জানি শুল্ক ফাঁকির এ বিপুল টাকার ভাগাভাগি মনপূত না হওয়ায় ধরা পরে ওই কাস্টমের কর্মকর্তারা। বন্ধ হয় শুল্ক ফাঁকি।’