
দেবহাটা ব্যুরো: আসন্ন ১ ডিসেম্বর দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেয়া দুটি পদের ছয় হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে তৃনমুল নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে সম্মেলনের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সাধারন সম্পাদক পদের প্রার্থী ও বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। ২০০৩ সাল ও ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পরপর দুই মেয়াদে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সাধারন সম্পাদক হিসেবে টানা ১৫ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করছেন মনিরুজ্জামান মনি। সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী রাজনৈতিক মহলে একজন সৎ, যোগ্য, দক্ষ, নির্লোভ, সাহসী রাজনীতিবীদ হিসেবেও বেশ সুখ্যাতি রয়েছে তার। ১৯৬৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেবহাটার মাঝ পারুলিয়া গ্রামের এক মধ্যবিত্ত ঘরে জন্মগ্রহন করেন মনিরুজ্জামান মনি। তার ডাক নাম ‘মনি’। পিতার নাম আব্দুল মজিদ সরদার ও মাতা রহিমা খাতুন। ছেলে বেলা থেকেই অত্যন্ত ন¤্র, ভদ্র, বিনয়ী ও খুব সাহসী ছিলেন তিনি। লেখা পড়াতেও ছিলেন বেশ ভালো। সেই সময়ে খুলনা বিভাগের মধ্যে নামকরা স্কুল হিসেবে পীর কেবলা খানবাহাদুর আহছানউল্লাহর পুন্যভুমি নলতা হাইস্কুল থেকে ১৯৮৪ সালে তিনি প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ এবং সাতক্ষীরা সরকারী কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় বিভাবে এইচএসসি পাশ করেন। সাতক্ষীরা কলেজে পড়াকালীন সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িত হন তিনি। অন্তুভূক্ত হন জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে। পরে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের মিলনায়তন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯০ সালে প্রানীবিদ্যায় অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ঢাকা কলেজে পড়াকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে বিশেষ ভুমিকা রাখেন তিনি। সাথে সাথে নিজ উপহেজলা দেবহাটাতে ছাত্রলীগ গঠনে অবদানও রাখেন তিনি। সেসময়েই দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পুর্নাঙ্গ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন সহ উপজেলাতেও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর যেদিন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যুবলীগকর্মী নুর হোসেন গুলিবিদ্ধ হন সেদিনও রাজপথে ছিলেন তিনি। ঢাকা কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষে ১৯৯৫ সালে এলাকায় ফিরে এসে দেবহাটা উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহন করেন। ২০০২ সাল পর্যন্ত টানা ৭ বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি যুবলীগের পাশাপাশি দেবহাটাতে আওয়ামী লীগকেও সুসংগঠিত করেন । ২০০৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর তৎকালীন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে দ্বিগুন ভোটের ব্যবধানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন মনিরুজ্জামান মনি। সেসময় একই পদে প্রতিদ্বন্দীতা করে অর্ধেকেরও কম ভোট পেয়ে পরাজিত হন বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বাবু শরৎ চন্দ্র ঘোষ, সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুর রউফ ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম। সেদিন ৪ জন সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে পরাজিত করে অপেক্ষাকৃত তরুন ছেলেটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতারাও অবাক হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে তৎকালীন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর আন্দোলনে ব্যাপক ভুমিকা পালন করেন তিনি। তাছাড়া ময়নুদ্দীন-ফখরুদ্দীনের সেনা সমর্থিত তথাকথিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং নেত্রীর মুক্তির দাবীতে দলীয় কেন্দ্রীয় ঘোষিত সকল কর্মসুচী সফলভাবে পালন করেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে জামায়ত-বিএনপি কতৃক দুটি মিথ্যা মামলাতে আসামী করা হয় মনিরুজ্জামান মনিকে। যদিও পরে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা থেকে অব্যাহতি পান তিনি। সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর দেবহাটা উপজেলাতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সকল কর্মসূচী সফলভাবে পালনের সাথে সাথে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের তৃনমুল পর্যায় পর্যন্ত দলকে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত করেন তিনি। ২০১২ সালের ১২ মে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাতক্ষীরা জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের মতবিনিময়ে মাত্র ৭-৮ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নজর কাড়েন তিনি। দীর্ঘ ৯ বছর দায়িত্ব পালন শেষে সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব উল আলম হানিফ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দদের উপস্থিতিতে আবারো কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন মনিরুজ্জামান মনি। এই সম্মেলনেও সাধারন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দী হিসেবে প্রার্থীতা ঘোষনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম। পরে কাউন্সিলরদের তেমন কোন সাড়া না পেয়ে শেষ সময়ের দিকে আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। ২০১৩-১৪ সালে জামায়ত-বিএনপির সহিংসতা কালীন সময়েও রাজপথে থেকে নেতাকর্মীদের অনুপ্রেরনা যোগানোর পাশাপাশি জামায়ত-বিএনপিকে প্রতিরোধের সর্বত্মক প্রচেষ্টা করেন তিনি। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার বিপরীতে কিংবা দলের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী কোন কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করেননি তিনি। এমনকি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা ঘোষনা দিয়ে কাউন্সিলরদের ৬৩ ভোট পেয়ে অপর দুই প্রার্থীর থেকে অনেকটা ব্যবধানে এগিয়ে থাকা স্বত্ত্বেও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের স্বার্থে বিদ্রোহী প্রার্থীও হননি মনিরুজ্জামান মনি। সম্মেলন প্রসঙ্গে সাধারন সম্পাদক প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, সব সময় কেন্দ্রীয় ঘোষিত সকল কর্মসূচী সফলভাবে পালন করে এসেছি এবং তৃনমুলের নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন সহ তাদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রেখে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনার চেষ্টা করেছি। আমি চাই এবারো কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হোক। যাতে করে কাউন্সিলররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য নেতৃত্বকে নির্বাচিত করতে পারে। এতে করে প্রত্যেক প্রার্থীরা তাদের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানে নিজেদের জনপ্রিয়তা বুঝতে পারবে এবং দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সুদৃঢ় মজবুত ভিত্তি স্থাপন হবে। কুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল কুদ্দুস বলেন, সাধারন সম্পাদক হিসেবে বিগত পনের বছর মনিরুজ্জামান মনি দায়িত্ব পালনকালে তৃনমুল নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সাং সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। সখিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাধারন সম্পাদক হিসেবে মনির কোন বিকল্প নেই। মনি দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রকৃত কান্ডারী। দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর বলেন, মনিরুজ্জামান মনির নেতৃত্বে ২০১৩ সালে দলীয় নেতাকর্মীরা রাতদিন রাজপথে থেকে বিএনপি জামায়তকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগের পরিক্ষিত সৎ, যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্বের উজ্জল দৃষ্টান্ত মনিরুজ্জামান মনি।