
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক প্রবাসীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছে স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল। এতে করে প্রতিপক্ষের ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকি এবং হামলা, মামলার শিকার হয়ে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন।এলাকাবাসী বলছে এই বিরোধের মূলে রয়েছে জায়গা জমি। তাই বিরোধপূর্ন সেই জমির ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হলো আজ।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলা সদরের জাওয়াখালী গ্রামের সৌদি প্রবাসী আজাদ হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন দুই বছর আগে জাওয়াখালী গ্রামের অরবিন্দ মৃধার কাছ থেকে বাড়ি সহ ৩১শতক জমি ক্রয় করে সেখানে বসবাস করছেন। উক্ত জমি থেকে ৬ শতক জমি নিজে ক্রয় করেছেন বলে দাবী করেন প্রতিবেশী মৃত জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী হাসিনা খাতুন।
এই জমি সম্পর্কে এলাকাবাসীর দেয়া তথ্য এবং ফাতেমার দাবী ও বিজ্ঞ শ্যামনগর সহকারী জজ আদালত, সাতক্ষীরায় দাখিলকৃত একটি আরজির বিবরনে জানা গেছে, শ্যামনগর থানার শ্যামনগর মৌজার এস এ ৪২৬ নং খতিয়ানে ৯২৫ দাগে .২৮ একর, ৯২৬ দাগে .২৪ একর, ৯২৮ দাগে ২.৭০ একর, ৯২৯ দাগে ২.৭০ একর, ৯৩১ দাগে ২.৫৭ একর, ৯৩২ দাগে .৮০ একর, ৯৩৩ দাগে ১.১১ একর, ৯৩৪ দাগে .৫৬ একর, ৯৪০ দাগে ৩.৯৩ একর একুনে ১৪.৮৯ একর ভূমির মধ্যে .৩১ একর ভূুম দাবীকৃত /তফশীল বর্নিত ভূমি হইতেছে।
এস,এ প্রজা বীরেন্দ্র নাথ মৃধা তদ্বীয় অংশের ভূমিতে শরীকি আপোষে ও চিহ্নিত মতে দাবীকৃত জমায় খাষে স্বত্ববান ও দখলীকার থাকাকালে তার তিন পুত্র ভবসিন্দু মৃধা, গুনধর মৃধা ও অরবিন্দু মৃধাকে ওয়ারেশ রেখে পরলোকগমন করেন।
এস,এ প্রজা বীরেন্দ্র নাথ মৃধার এক পুত্র অরবিন্দু মৃধা তার স্বত্বদখলীয় চিহ্নিত স্থানের ভূমি (জমি) বিগত ইং ২১/১০/২০১৮ তারিখে ৪৫৪৮ নং রেজিঃ কোবলা মূলে ২৫ শতক জমি ফাতেমা খাতুনের কাছে বিক্রি করে দখল হস্তান্তর করেন।
অপরদিকে এস,এ প্রজা বীরেন্দ্র নাথ মৃধার অপর দুই পুত্রভবসিন্দু মৃধা ও গুনধর মৃধা বিগত ইং ০৮/০২/১৯৮৫ তারিখে ৫১০ নং রেজিঃ কোবলা মূলে তপন মন্ডল এর নিকট তাদের জমি বিক্রি করেন যাহা তপন মন্ডল দাতার চিহ্নিত দখলীয় ভূমিতে খাষে স্বত্ববান ও দখলকারক থেকে পূনরায় গত ইং ০৩/০২/১৯৯০ তারিখে ৮৯৮ নং রেজিঃ কোবলা মূলে শচীন্দ্র নাথ মৃধা এর নিকট বিক্রি ও দখল হস্তান্তর করেন। শচীন মৃধা পূনরায় ইং- ০৩/০৯/ ২০০৫ তারিখে ৫৩৯০ ও ৫৩৯১ নং রেজিঃ কোবলা মূলে বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল এর নিকট বিক্রি ও দখল হস্তান্তর করেন।বেতাংগী গ্রামের মৃত হলধর মন্ডলের পুত্র বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল উক্ত জমিতে খাষে স্বত্ববান ও দখলকারক থেকে বিগত ইং- ২৫/০৮/২০২০ তারিখে ১৮১৪ নং রেজিঃ কোবলা মূলে ০৬ শতক জমি ফাতেমা খাতুনের নিকট বিক্রি ও দখল হস্তান্তর করেন।
অর্থাৎ প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন অরবিন্দু মন্ডলের নিকট থেকে ২৫ শতক ও বিনয় কুমার মন্ডলের নিকট থেকে ০৬ শতক সর্বমোট ৩১ শতক জমি ক্রয় করে সেখানে বাড়ীঘর তৈরী করে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস ও ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু এর মধ্য থেকে ০৬ শতক জমি প্রতিবেশী মৃত জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী হাসিনা খাতুন ২০১৪ সালে ক্রয় করেছেন বলে দাবী করেন। আর এই দাবী নিয়েই ফাতেমা ও হাসিনার মধ্যে বিরোধ বাঁধে। অথচ দেখা গেছে যে, উক্ত জমি বিনয় কৃষ্ণ ২০০৫ সালে অর্থাৎ হাসিনার ক্রয়ের আগেই শচীন মৃধার কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। আর সেই জমিই তিনি ফাতেমার কাছে বিক্রি ও দখল হস্তান্তর করেছেন। অর্থাৎ ফাতেমার তথা বিনয় কৃষ্ণের ভোগদখলীয় জায়গা জমিকেই হাসিনা নিজের বলে দাবী করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, হাসিনা বর্তমানে যেখানে বসবাস করছেন সেখানে তার ক্রয়কৃত জমির অংশ বজায় রয়েছ। তবুও তিনি ফাতেমার সাথে বিরোধ করে চলেছেন। তারা আরও বলেন,
বিরোধের এক পর্যায়ে হাসিনা খাতুন তার পরিবারের লোকজন ও বহিরাগতদের নিয়ে উক্ত জমি জবরদখল ও ফাতেমাকে সেখান থেকে উচ্ছেদের জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি প্রদান ও ভয় ভীতি দেখাতে থাকে। তারা আরও জানায়, এই বিরোধ মীমাংসার জন্য গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষকে নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে ৩/৪ বার বসাবসি হয়। বসাবসিতে উভয়পক্ষের দাবী ও দাবীর স্বপক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বিরোধপূর্ণ উক্ত জমির প্রকৃত মালিক ফাতেমা খাতুন বলে রায় দেন তারা।এর প্রেক্ষিতে হাসিনা খাতুন শ্যামনগর থানায় দরখাস্ত দেয়। তখন থানা থেকে উভয় পক্ষকে বার বার ডাকাও হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের পরামর্শেফাতেমা খাতুন বিজ্ঞ শ্যামনগর সহকারী জজ আদালত, সাতক্ষীরায় দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৩৯ আদেশের ১/২ বিধি ও ১৫১ ধারার বিধান মতে দরখাস্ত করেন। দরখাস্তের আলোকে যাতে বিবাদী পক্ষ (হাসিনা গং) উক্ত জমি জবরদখল করতে না পারে সেজন্য উক্ত জমিতে বিবাদী পক্ষের বিরদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দানের আবেদন করা হয়। সে মতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত জমিতে অন্যের অনধিকার প্রবেশ ও অবৈধ ভোগদখলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু উক্ত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রতিপক্ষের হয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার ছত্রছায়ায় তার সেকেন্ড ইন্ড কমান্ড এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নের্তৃত্বে ২০-২৫ জন মোটরসাইকেল যোগে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ফাতেমার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা তার বাড়িঘর ও জিনিসপত্র ভাংচুর করে, জমির বেড়া ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি করে এবং বড় বড় গাছপালা কর্তন করে। এতে ফাতেমা থানায় মামলা করতে গেলেও তার মামালা রেকর্ড হয়নি অথচ উল্টো ভুক্তভোগী ফাতেমার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় আদালতের মাধ্যমে জামিন লাভ করলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়িছাড়া হয় প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা।
উল্লেখ্য, ফাতেমাকে হুমকি-ধামকি প্রদান, ভয় ভীতি প্রদর্শন ও হামলা-ভাংচুরের অভিযোগের বিষয়টি হাসিনার পরিবারের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফাতেমা খাতুন বর্নিত উপরোক্ত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “প্রতিপক্ষরা তার জমি অবৈধ ভোগদখল ও অসৎ উদ্দেশ্য চারিতার্থ করার লক্ষ্যে হামলা মামলা করা সহ নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তাই যাতে আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারি সেজন্য ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”