
নজরুল ইসলাম, তালা থেকে: তালা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার জাকিরের বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাঁধা প্রদান ও নিজের ক্ষমতা ফলাতে বিধবা মহিলার রান্না ঘরের মধ্য দিয়ে পানির ড্রেন করার অভিযোগ উঠেছে। তার দাদাগিরি তান্ডবে দিশেহারা ও লাঞ্চিত হয়েছেন তালা সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। গত রবিবার (৪ জুলাই) উপজেলা সদরের মুড়াকলিয়া গ্রামে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘটনার বিষয় জানাযায়, উপজেলার তালা সদর ইউনিয়নের মুড়াকলিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর বিধবা কন্যা জেসমিন খাতুন পিত্রালয়ে শিশু সন্তান নিয়ে পৃথক ভাবে বসবাস করেন। চলতি বছরে নিজের গহনা বিক্রি ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয় করে বসত ভিটায় মাটি ভরাট করেন ওয়ারেশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পর্তির উপরে।
ঘটনার দিন সকালে মুড়াকলিয়া গ্রামের একাংশে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় তালা ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান সরকারী ও বেসরকারী সার্ভেয়ার নিয়ে মাপ জরিপ করে ড্রেন করার জন্য পরিকল্পনা করেন । মাপ জরিপ শেষে সরকারী রাস্তার পাশে মাত্র ১ থেকে দেড় ফুট জায়গা রয়েছে সেখান থেকে ড্রেন করার মতো পরিবেশ না থাকায় নায়েব আনিসুর রহমান জমির মালিক জেসমিন খাতুনের সাথে কথা বলেন এবং জেসমিন তার নিজ দখলীয় জমি হতে ১ ফুট জমি ড্রেন করার জন্য ছেড়ে দিতে রাজি হয়। সে সময় তালা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জাকির ও তার পেটুয়া সন্ত্রাসী বাহিনীর দ্বারা ভুমি সহকারী কে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বলেন তার হকুমে সব কিছু হবে। রান্না ঘরের ভিতর দিয়ে ড্রেন কাটা হবে। কোন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আমি মানি না। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান পুলিশি সহয়তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এসময় চেয়ারম্যান সরাসরি সরকারী কাজের দায়িত্ব পালনে বাঁধা প্রদান করেছেন বলে সত্যতা পাওয়া যায়।
বিধবা অসহায় মহিলা জেসমিন খাতুন বলেন, নায়েব সাহেবের কথা মতো আমি জমি ছেড়ে দিতে রাজি হই। ঠিক সেই সময় তালা সদরের চেয়ারম্যান সরদার জকির হোসেন তার বাড়িতে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে পৌছান এবং নায়েব সাহেব কে বিভিন্ন অশ্রাব্য ভাষায় গালি গালাজ ও লাঞ্চিত করতে থাকেন। পরবর্তিতে পুলিশের উপস্থিতিতে নায়েব সাহেব চলে যান।
পরক্ষনে সরদার জাকির তার লোকজনদের বলেন, এখান থেকে খাল কেটে দে, সে চেয়ারম্যান, তার হুকুমে সব হবে। তক্ষনে শুরু হয় তান্ডব,রান্না ঘর ভাংচুর হাড়ি পাতিল ছুড়ে ফেলে রান্না ঘরের ভিতর দিয়ে ড্রেন কেটে জেসমিনের লক্ষ টাকার ক্ষতি করে সরদার জাকির। এমনকি জেসমিন উক্ত কাজে বাঁধা প্রদান করতে গেলে সরদার জাকিরের সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে মারপিট করে।
জেসমিন খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি একজন মহিলা আমিও একজন মহিলা, আমি অসহায়, আমার কেউ নেই, তালা সদরের চেয়ারম্যান সরদার জাকির আমার উপর যে অবিচার করেছে আমি আপনার কাছে তার বিচার চাই।
তালা সদর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তিনি এসিল্যান্ডের আদেশ মোতাবেক মাপ জরিপ করতে গিয়েছিলেন। মাফ জরিপ শেষে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার এক পর্যায়ে তালা সদরের চেয়ারম্যান তার উপর আকস্মিক ভাবে আক্রমণ সহ ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। এমন কি তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন । তালা থানার পুলিশের সহায়তায় তিনি নিরাপদে অফিসে আসেন।
তালা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন বিশ্বাসের নিকট এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে জানান, তালার মুড়াকলিয়া গ্রামে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান সরদার জাকির যে বর্বর ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে অমানবিক। পানি নিষ্কাশনের নামে একজন অসহায় মহিলার রান্না ঘরের মধ্য দিয়ে ড্রেন কাঁটা সহ রান্না ঘরের ভাতের হাড়ি সহ আসবাবপত্র ছুড়ে ফেলে দেওয়া। এমনকি সে ইউনিয়নের নায়েব সাহেবকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে চেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, একজন ত্যাগি নেতা হিসেবে বলতে চাই, সরদার জাকির হলেন হাইব্রিড আওয়ামী লীগার। সরদার জাকিরের এমন বেআইনি কর্মকান্ড ও অমানবিক কাজের সঠিক বিচার হোক।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিফ সুলতানের সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তালা সদরের চেয়ারম্যান সরদার জাকিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোনে সাংবাদিকের পরিচয় শুনা মাত্র তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন করে দেন।
তালা থানা অফিসার ইনর্চাজ(ওসি) মেহেদী রাসেল বলেন, তার কাছে জেসমিন খাতুন একটা অভিযোগ করেছিলো। তিনি ও এসিল্যান্ড ঘটনা স্থলে গিয়েছিলেন এবং পরের দিন নায়েব সাহেবের ফোনে আমার অফিসার ঘটনাস্থালে গিয়েছিলো এবং উক্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।