* সাতক্ষীরা ২ আসনের নির্বাচনকে ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি;
* দু’গ্রুপের কোন্দলের কারণে নির্বাচনে সহিংস ঘটনা ঘটছে;
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দু’গ্রুপের কোন্দলের ফলে নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে নির্বাচনে কোনঠাসা করতে একাধিক শীর্ষ আ’লীগ নেতা জাতীয় পার্টির নির্বাচনী জনসভা থেকে প্রকাশ্যেই বিষোদগার করছেন। ফলে নির্বাচনের মাঠে দু’গ্রুপের মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল বিদ্যমান। ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী করা হয়। এতে করে জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা নির্বাচনের মাঠে এমপি রবির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সে নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রবিকে সরাতে পেছন থেকে কলকাঠি নারতে থাকে ওই গ্রুপটি। পরে ২০১৮ এর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকার মনোনয়ন লাভ করেন মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। ওইবারও নৌকার প্রার্থীতা করার সময় তার প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে গুটি কয়েক মনোনয়ন বঞ্চিত আ’লীগ নেতা। সে সময় নৌকার প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবির বিরুদ্ধে গোপনে গোপনে কুৎসা রটনা সহ নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ড ঘটিয়েছে তারা। তবে শীর্ষ নেতাদের সকল নৌকা বিরোধী কর্মকান্ডের সত্ত্বেও আবারও জয়লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। এরই মাঝে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনছুর আহমেদ। তখন থেকেই এমপি রবি ও তার সমর্থকদের চেপে ধরতে শুরু করে প্রতিপক্ষরা। ধীরে ধীরে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন সভায় সংসদ সদস্যকে অপমানজনক কথাবার্তা বলতে শুরু করে পক্ষটি। এরই মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষিত হলো। সাতক্ষীরা জেলার নৌকার কান্ডারী হওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম তুলে জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্র থেকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান বাবু। অন্যদিকে নির্বাচনে দলীয় কোন বিধি নিষেধ না থাকায় দুই বারের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। প্রতীক বরাদ্দের আগেই সাতক্ষীরা ০২ আসন থেকে সমঝোতার মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী তুলে নেয় আওয়ামী লীগ। মূলত এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। কয়েকজন জেলা আওয়ামী লীগ নেতার সাথে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা যুবলীগ প্রকাশ্যেই এমপি রবির বিরোধীতা করতে থাকে। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী না থাকায় ও প্রার্থীদের সমর্থনের ক্ষেত্রে পূর্ন স্বাধীনতা দেওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বৃহৎ অংশ বেছে নেয় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দুইবারের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে। সংসদ সদস্যের সাথে কোন্দলে লিপ্ত হওয়া অপর গ্রæপটি জাতীয় পার্টিকে মহাজোটের প্রার্থী বলে তাকে সমর্থন দেয়। এখানেই থেমে থাকেনি তারা। সমর্থনের জন্য নেতাকর্মীদের কেন্দ্র থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার পরও তাদের ইউনিয়ন ও অন্যান্য পর্যায়ের ইউনিট কে অনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে সমর্থনের জন্য বাধ্য করছে। জাতীয় পার্টির প্রত্যেকটি নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদকে কটাক্ষ করে একের পর এক বিষোদগার করছে শীর্ষ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। এদিকে সাতক্ষীরা সদরের আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ঈগল প্রতীকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন। এসবের মধ্যে গত ২৪ ডিসেম্বর ঝাউডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির নির্বাচনী সভায় যোগ না দেওয়ায় সভাস্থল থেকেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রমজান ও সাধারন সম্পাদক অমরেন্দ্র নাথ ঘোষকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঢুকতে না দেওয়ার নির্দেশনা দেয় যুবলীগের আহবায়ক মিজানুর রহমান। তার ২৪ ঘন্টাপর ২৫ ডিসেম্বর ৫টার দিকে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢুকে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলা করে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক ও তার ভাই মিলন। রাতেই তাদের আটক করে সদর থানা পুলিশ। পরে নানারকম পীড়াপীড়ি করে ভুক্তভোগীদের মিমাংসা করতে বাধ্য করা হয়।
যেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেছেন খোদ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে বিদ্রোহী প্রার্থী আখ্যা দিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপটি। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও একাধিক নেতা ইতোমধ্যেই প্রেস কনফারেন্স করে জানিয়েছেন যে, জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের কোন জোট বা মহাজোট হয়নি। তাদের সাথে সমঝোতা হয়েছে। তারা এও বলেন যে, জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হবে। ফলে তাদের সাথে জোট-মহাজোট করার প্রশ্নই আসে না।