
রুবেল হোসেন: জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একসময় সাতক্ষীরায় দাপুটে প্রভাব থাকলেও মাঝখানে দীর্ঘ্যদিন স্থবির থাকে দলীয় কার্যক্রম। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে দলটি। এখন চলছে ঘর গোছানোর প্রচেষ্টা। জেলা কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ন হয়েছে বেশ আগেই। কেন্দ্রের নির্বাহী আদেশে চলছিল দলটির কার্যক্রম। জাতীয় নির্বাচন কে ঘিরে দল গোছানোর অংশ হিসাবে আগামী ২৮ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা জাতীয় পার্টির ত্রি বার্ষিক সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের প্রস্তুতিও এখন শেষ পর্যায়ে। আগামী ২৮ নভেম্বর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে পরবর্তী নেতৃত্ব ঘোষনা করবেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
সাতক্ষীরা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু সহ জেলার একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছেন তারা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি,এম কাদের ও পার্টির প্রধান পৃষ্টপোশক ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে টানা পড়েন চললেও সাতক্ষীরায় বর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান জি,এম কাদেরর নেতৃত্বে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। বিগত বছর গুলোতে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রতিদ্বন্বিতা করে। বর্তমানে ২ জন চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলর ও একাধিক ইউপি সদস্য রয়েছে দলটির। এখন চলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। কেন্দ্র থেকে ৩০০ আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে সাতক্ষীরার ৪ টি সংসদীয় আসনে নিজেদের দলীয় প্রার্থীও ঠিক করে রেখেছে জেলা জাতীয় পার্টি।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন সাতনদীকে জানান, “ ৯০ এ ক্ষমতা ছাড়ার পর ৯১ এর জাতীয় নির্বাচনে একক ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমরা ৩৬ টি আসন পাই। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের সাথে জোট করায় আমাদের আসন সংখ্যাও কমতে থাকে। এজন্য দলের তৃনমূল নেতাকর্মীরা চায় আগামীতে জাতীয় পার্টি কারো সাথে জোট না করে এককভাবে নির্বাচন করুক। আমাদের দলের চেয়ারম্যানও এককভাবে নির্বাচন করার কথা বলেছেন। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নি। কেন্দ্র থেকে ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলে সাতক্ষীরার ৪ টি আসনে নির্বাচন করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমরা দলকে সংগঠিত করছি। ”
জাতীয় পার্টিতে বিভক্তির সুর ও এ্যাড মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে জেলার বিভিন্ন ইউনিটে ‘জাতীয় পাটি (রওশন এরশাদ)’ কমিটি প্রসঙ্গে শেখ আজহার হোসেন বলেন, “জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অতীতে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে এখনো হচ্ছে। বিগত জাতীয় নির্বাচন গুলোর আগ মুহুর্তে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও কাজি জাফর আহমেদের নেতৃত্বে দলে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এবারও একটি কুচক্রী মহল বেগম রওশন এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে দল ভাঙার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। বেগম এরশাদ আমাদের দলের প্রধান পৃষ্টপোশক, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনি অসুস্থ থাকার সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা তার নাম ভাঙিয়ে দলে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। বেগম রওশন এরশাদের কাছে আমাদের বিনীত নিবেদন কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে দলের ঐক্য অটুট রাখতে তিনি কাজ করবেন। এ্যাড মিজানুর রহমান আগে আমাদের সাথে রাজনীতি করলেও পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এখন শুনছি তিনি জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ) নামে কমিটি করে বেড়াচ্ছেন। তার এ ধরণের কর্মকান্ডের কোন ভিত্তি নেই। যেখানে কেন্দ্রেই এখনো ঐ নামে কোন কমিটি হয় নি। হয়েছে একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি এভাবে কোন কমিটি করতে পারে না।
সব মিলিয়ে আগামী ২৮ নভেম্বর জেলা জাতীয় পার্টির ত্রি বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে যে নেতৃত্ব আসবে সেটি জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিবেন এটাই সাধারণ নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।