ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় চার শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরেরদিন ৭ অক্টোবর বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ এক আদেশে ওই চার শিশুকে যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। ওইদিন সন্ধ্যায় চার শিশুকে প্রিজনভ্যানে তোলার সময়ে আদালতপাড়ায় হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কথিত ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত চার শিশুর চিৎকার, আতঙ্কগ্রস্ত চেহারা আর বাবা-মাকে ছেড়ে না যাওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদকর্মীরাও কেঁদে ফেলেন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রকাশের পর দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আসে। এর পর ওদিন রাতেই বিচারপতিদ্বয় নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে ভার্চুয়াল আদালত বসান। শুক্রবার সকালে নিজ সন্তানদের ফিরে পেয়ে কান্নাজড়িতকণ্ঠে ওই চার শিশুর পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয়ের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবার দুপুরে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাতেই যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ওই চার শিশুকে বরিশালে এনে সকালে তাদের বাবা ও মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।”
শুক্রবার সকালে রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “ঘটনাটি ধর্ষণ নয়। ধর্ষণের ঘটনা সাজানো হয়েছে। ম‚লত বাদী ও বিবাদীর পরিবার আপন চাচা-ভাতিজা। উভয়পক্ষের মধ্যে ১৫ শতক জমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে অসংখ্যবার আমি নিজেও শালিস বৈঠক করেছি। পুরনো শত্রুতার জেরধরে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি পুরো ঘটনাটি সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনসহ দায়ীদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।”
বরিশালের একাধিক আইনজীবী আক্ষেপ করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “থানা পুলিশ অভিযোগ পেয়েই কোন ধরনের তদন্ত না করে মামলা রুজু করা এবং আসামিদের বয়সের বিবেচনা না করে চার শিশুকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করার পুরো বিষয়টি রহস্যজনক।”
বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “মামলার বাদী এজাহারে উলেখ করেন- তার ছয় বছরের কন্যাশিশুটিকে ওই চার শিশু খেলার কথা বলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমার অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করেছি।” ওসি আরও বলেন, “এজাহারে তিন আসামির বয়স ১০ বছর ও একজনের ১১ বছর দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনজনের বয়স ৯ বছর এবং একজনের বয়স দশ বছর দুইমাস।” আলোচিত এ মামলার বাদীর (জাহিদুর রহমান রুবেল) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
আটক কৃত চার শিশু আসামিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে হাইকোর্টের এক আদেশের পর শুক্রবার সকাল আটটার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে ওই চার শিশুকে তাদের অভিভাবকের হাতে তুলে দিয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে বরিশালের শিশু আদালত চার শিশুকে জামিন দেয়। এর পর রাতেই বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালককে তাদের মুক্তির জন্য ই-মেইলে বার্তা প্রেরণ করেন।
অপরদিকে আগামী ১১ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে চার শিশু ও তাদের অভিভাবকসহ বাকেরগঞ্জ থানার ওসি এবং বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উলাহকে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ধর্ষণের শিকার ছয় বছরের শিশুর মেডিক্যাল প্রতিবেদন ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে পাঠাতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়।
গতকার দৈনিক সাতনদী পত্রিকার খবর সুত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়টি গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আমরাও শিশু গ্রেফতারে পুলিশের ভুমিকার প্রতি নিন্দা জানাই। এহেন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে পুলিশের তৃণমূল থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দৃষ্টি রাখবেন এবং প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে আট বছরের শিশু কারাগারে! অতঃপর মুক্তি
পূর্ববর্তী পোস্ট