সামনে মাত্র দু তিন দিন ভোট বাকি। যশোহর থেকে মিলিটারী কনভয় জলপাই রঙের ছাউনি সাতক্ষীরার দিকে যাচ্ছে।আমরা খুব চিন্তিত নির্বাচন বানচাল করবো কিন্ত মুরুব্বি নেতাদের সমর্থন বা দিক নির্দেশনা পাইতেছি না।পরের দিন সকাল বেলা আর্মির গাড়ি কলারোয়া ডাক বাংলা তে। তারপর কলারোয়া কলেজ ও উপজেলা তিন যায়গাতে অবস্থান নিয়েছে। সাথে পুলিশ আর বি ডি আর রিজার্ভ ফোর্স। যতদুর মনে আছে সংগ্রাম পরিষদের একটা গোপন মিটিং রাতে হয়েছিল মুরারি কাঠি এডঃ জলিল ভাই দের পুরাতন বাড়ির মধ্যে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোট প্রতিরোধ করবো।
কেন্দ্রের নির্দেশ আছে কিন্ত জেলা ও থানার নেতাদের হ্যা না কিছুই নেই। স্বপন দীপক আশরাফ ও তৌহিদ ভাইদের সাথে আমরা অত্যন্ত কাছের কিছু বন্ধুদের আলোচনা হয়েছে। কলারোয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীপক শেঠ এর নেতৃত্বে উপজেলা চত্ত¦র তৌহিদ ভাই, আশরাফ ভাই নদীর ওপাশে কাজী ওসমান (হালা) রবিউল ( এক্স চেয়ারম্যান) হারুন, বজলু মোয়াজ্জেমরা ঝিকরার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
আর স্বপন ভাইয়েকে সাথে আমি ফারুক আজমল, শেলি রা কলারোয়া কলেজের সেনা ক্যাম্প এ হামলা করবো। পরিকল্পনা ছিলো যেহেতু কলেজ এর টা খুবই স্পর্শকাতর সবদিক খোলা লোকানোর সুযোগ কম।
নির্দেশ ছিল আমরা প্রথম বøাস্ট করবো দু মিনিটের মধ্যেই সবাই সাড়া দিবে। আমাদের জন্য দুটো মটর সাইকেল রেডি ।একটা ফারুকের ছোট মামা আমজাদ কোরিয়ান ডালিম বাইক আর একটা আজমলের ২০০ প প হোল্ডা ।তখনকার দিনে মটর সাইকেল নেই বললেই চলে।অপারেশন শেষে ফারুকের সাথে স্বপন ভাই আমি আজমলের সাথে হারিয়ে যাবো। ধীরে ধীরে সন্ধার গোধূলি আধার গ্রাস করেছে কলারোয়ার জনপদ। মানুষের মাঝে চাপা উত্তেজনা ভিতি এবং কার্ফু র কারনে সবটাই ভূতুড়ে পরিবেশ।
দুটো মটর সাইকেল স্ট্রাট দিয়ে কোল্ড স্টোরের সাথে আধারে দাড়ানো অন্ধকারে মধ্যে ব্যাক লাইট জ্বলছে সময় দেওয়া এক মিনিটের মধ্যেই গাড়ির কাছে পৌছাতে হবে।ক্রুলিং করে মোটামুটি একটা অবস্থানে যেয়ে আমি ও সাথের দুজন ককটেল চার্জ করে দ্রæত মটর সাইকেলে উঠলাম। এক দু মিনিটের মধ্যেই সমস্ত কলারোয়ার মাটি প্রকম্পিত করে মূহূর্মূহুর শব্দে কেঁপে উঠল। মনে আছে ঝিকরার অলোক দের মোড় পার হচ্ছি আজমল একশ আশি নব্বই শো করছে। গাড়ির ইয়ার গাডার বেকে ট্যংকীর ঊপর চলে এসেছে। আমরা যুগীবাড়ির মধ্য দিয়ে পাথর ঘাঠা কবিরুলের বাসার বাগানে। আজমল গাড়ি রাখতে বাসায়।
ফারুকরা ঝাউডাংগা বাজারে ভিতরে একটা রেস্টুরেন্টে অবস্থান নিয়েছে।পিছে আর্মির গাড়ি ধাওয়া করেছে। যেভাবেই হোক ফারুকের গাড়ির সন্ধান পেয়েছে। ওরা ভয়ে রাস্তায় গেল না।সাইলেন্সার এ হাত দিয়ে গরম দেখে
ওকে আর্মির গাড়িতে তুলতে চেষ্টা করলো। স্বপন ভাই হোটেলের পিছন দিয়ে বুক গলা সমানপানি সাতরিয়ে হাজিপুর গ্রামের মধ্যে কোন প্রকার আশ্রয় নিলো। ফারুকের ভাগ্য ভাল আর্মির গাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ ভাই ছিলেন। টেকনিক্যালি সৈয়দভাই বললেন ফারুককে লক্ষ্য করে সে আমাদের ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ছেল ও আমি চিনি খুবই ভালো পরিবারের।
আল্লাহ রহম করলো ।ফারুক আমাদের খোজে পাথর ঘাটা চলে এসেছে।ওর গাড়ি আমার পরিচিত। বাগানের ভিতর থেকে ডাক দিলাম এবং চলে আসলো। তার যখন শুনলাম শরীর বরফ হয়ে গেল।
তারপর মাঝরাতে পাথর ঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হানা দিলাম। পুলিশ আনছার জনালা ভেঙে ব্যলট সহ সব রেখে বিলে আশ্রয় নিলো।
রাতে ম্যাজিস্ট্রেট আর পুলিশের গাড়ির শব্দে ঘুম হারাম।
জীবনে প্রথম আজমল দের বাড়িতে পুলিশ যেয়ে আজমল কে খুজলো।
সবটাই অনেক অতীত তবুও মনে হয় এইতো সেদিন।
নব্বই এর গন আন্দোলনে যদি সরকার পতন নাহতো আমার মনে দেশে সিভিল ওয়ার চলতো।
অতীতের সকল ত্যাগী সহ পাটিদের রক্তিম স্যলুট।
মানুষ যেন কখনও ঐ অবস্থাতে না পড়ে।
গনতান্ত্র চিরজিবি হোক।
ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাড়াবেই।
(সেদিন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সবাই ছিলেন, সময় ও স্থান সংকুলান জন্য সীমিত করলাম, ক্ষমার দৃষ্টিকোণ আশা করছি)
সাবেক কেঁড়াগাছি চেয়ারম্যান ও ছাত্র নেতা আলতাফ হোসেনের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ভোট প্রতিরোধ—-আলতাফ হোসেন
পূর্ববর্তী পোস্ট