
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: ১
নিজস্ব প্রতিবেদক:
অধক্ষ্যের একচেটিয়া কর্তৃত্বে গর্ভনিং বডিকে সম্পূর্ন পাশ কাটিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হচ্ছে সাতক্ষীরা দিবানৈশ কলেজে। দীর্ঘদিন ছুটির সুযোগে একক সিদ্ধান্তে চলছে ভাঙ্গা গড়ার খেলে। অত্যন্ত মজবুতভাবে নির্মিত সাতক্ষীরা দিবা-নৈশ কলেজের ছাদ থেকে সাইকেল শেডসহ বাহির পর্যন্ত ভেঙে চুরে টাইলস বসানো হচ্ছে; যা সম্পূর্ন অযৌক্তিক ও অযাচিত। গর্ভনিং বডির কোন অনুমোদন না নিয়ে এই সেচ্ছাচারিতা করার মূল উদ্দেশ্য লক্ষ লক্ষ টাকার লুটপাট ও অপচয়।
কলেজের গর্ভনিং বডি কিছুই জানে না, অথচ প্রতিষ্ঠানের একটি ইটও খসাতে/বসাতে গভর্নি বডির সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। কোন কিছু ভাংতে-গড়তে বা ক্রয় করতে গেলে অর্থ কমিটি ও নির্মান কমিটি গঠন করে, তাদের পরামর্শে সমাধান করতে হয় এবং সে কমিটি গভর্নিং বডির সদস্যদের নিয়েই তৈরী হয়। অথচ এসব কিছুকে পাশ কাটিয়ে অধ্যক্ষ নিজ কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ২৫/৩০ লক্ষ টাকার কাজ করছেন। তবে কি কলেজে কোন গভর্নিং বডি নেই? না-কি থাকলেও উপেক্ষিত? শহরের প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের প্রধানের এরূপ স্বেচ্ছাচারিতার কর্মকান্ড দেখে ও অব্যবস্থাপনা দেখে সাধারন মানুষ হতবাক। এব্যপারে কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরাও কিছু জানে না ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে কলেজের ছাদের উপর হাতুড়ি শাবল দিয়ে খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এখানে টাইলস বসানো হবে বলে কয়েক লক্ষ টাকার টাইলস ক্রয় করে স্তুপাকারে রাখা আছে । ৫তলা ফাউন্ডশনে এ ভবনে ইতিমধ্য একক সিদ্ধান্তে ৬তলা করা হয়েছে। আবার তার উপর টাইলস বসালে নিঃসন্দেহে বাড়তি চাপ পড়বে। যা ভবনটির জন্য ঝুঁকিপূর্ন। কলেজের সিড়ি ও বারান্দায় অত্যন্ত মজবুত ইটের রেলিং ভেঙে স্টিলের রড দেওয়া হচ্ছে। কলেজের কার্নিস ও ড্রফ ওয়াল ভেঙে নতুন করে তৈরী হচ্ছে। যার কোন দরকার আছে বলে মনে করছেনা কলেজের একটি অংশ। নিচের গ্রাউন্ড ফ্লোরে সাইকেল শেড। সেখানে ইতোপূর্বে কয়েক বার ভাংচুর করা হয়েছে। আবার সাইকেল শেডের ফ্লোরে টাইলস লাগানো হচ্ছে। শেডের চারপাশে এমন কি ল’কলেজ সংলগ্ন সীমানা প্রাচীরেও টাইলস বসানো হচ্ছে । ড্রেনের উপর ২/৩ফুট উচু টাইলসের বেঞ্চ তৈরী করা হচ্ছে। যার আদৌ কোন দরকার নেই। সাইকেল সেডে টাইলস বসানো কোন মতেই যৌক্তিক নয়। সিঁডির নিচে যেখানে অপ্রয়োজনীয় জিনিষ রাখা হয় সেখানেও টাইলস। যেন কলেজে টাইলসের মেলা বসেছে। এসব দেখে শিক্ষক-কর্মচারী, ছাএ-ছাএী, অবিভাবক ও সাধারন মানুষ রীতিমত হতভম্ব।
একাধারে অযৌক্তিক ও অকারনে এসব কাজ চলছে। তদুপরি নেই গর্ভনিং বডির কোন সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন। এভাবে কাজ চলতে থাকলে কলেজ ফান্ডশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা সবার।
কলেজের প্রায় অর্ধেক স্টাফ নারী। অথচ শিক্ষক লাউঞ্চে মাত্র ১টি ওয়াশরুম। মহিলাদের দিকে তাকিয়ে ইতিপূর্বে প্রাক্তন অধ্যক্ষ পৃথক ওয়াশরুম তৈরি করেন। বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদান করেই সে ওয়াশরুম বন্ধ করেন। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে তৈরি করেন নিজের শয়নকক্ষ। ফলে নারী ষ্টাফরা হয়ে পড়েন অসহায়। কলেজের টাকায় যেখানে বসানো হয় সুসজ্জিত খাট, লেপ, তোষক, বালিশ। হঠাৎ কয়েকদিন আগে খাটসহ সব সামগ্রী নিজ বাড়িতে নিয়ে যান অধ্যক্ষ।
এতকিছু অনিয়ম-অপচয় করা হচ্ছে, অথচ শিক্ষক-কর্মচারীদের ৪০/৪২ মাসের কলেজ প্রদত্ত সম্মানী দেয়া হচ্ছে না। কলেজের জন্মলগ্ন থেকে শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ যে অর্থ পেয়ে আসছিল, বর্তমান অধ্যক্ষ এসেই তা বন্ধ করে দেন।
কর্মচারী, শিক্ষক সবাই এসব কর্মকান্ডে হতাশ। কেউ বলতে সাহস পায়না। আবার বেশিরভাগ শিক্ষক- কর্মচারীর বক্তব্য হলো এগুলো দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এর জন্য পরিচালনা পর্ষদ আছে।
এ মুহুর্তে শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী, অবিভাবকসহ সুধীজনের একান্ত দাবী করোনার মত মহামারির সময় বড়বাজার মোড়ে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানের অযৌক্তিত ভাঙাগড়ার কাজ বন্ধ হোক। গর্ভনিংবডি বা পরিচালনা পর্ষদের নজরদারী দাবি করেন অনেকে।
এ প্রতিবেদকের তথ্য সংগ্রহকালে এছাড়াও বেরিয়ে আসে আরো নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য। যা আগামীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে।