
খুলনা প্রতিনিধি: ‘পানির মধ্যে বালু আর কাদা। পানিতে দুর্গন্ধ, ব্যবহারের অনুপযোগী। অথচ মাস গেলে খুলনা ওয়াসাকে বিল দিতে হচ্ছে।’ ওয়াসার পানি নিয়ে দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে মহানগরের বানরগাতি এলাকার ৩নং কাসেমাবাদ মসজিদ লেনের সোবহান মঞ্জিলের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মাসুম বিল্লাহ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দুর্গন্ধ, ময়লা, কাদা এবং বালুযুক্ত ঘোলা পানি পায়ই আসে। খুলনা ওয়াসার মেগা পকল্প বাস্তবায়নের পরও আমাদের পানির দুর্ভোগ রয়েই গেলো। পানির সমস্যা নিয়ে ওয়াসার কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেছেন পাইপ লিকেজ। পানি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। শুধু আমাদের বাসাতেই না এলাকার পায় সব বাসাতেই একই সমস্যা।
টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা শেখ আনিসুজ্জামান বলেন, ওয়াসার পানিতেও মাত্রাতিরিক্ত লবণ। ময়লা, বালু ও দুর্গন্ধ থাকায় ব্যবহারই করা যায় না। যে কারণে রাগে ক্ষোভে তিন চার মাস আগ থেকে আমি ওয়াসার পানি ব্যবহার করছি না। কিন্তু নিয়মিত বিল দিয়ে যাচ্ছি। সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কথা কে শুনবে? যেখানে অনিয়মটাই নিয়ম!
সুলতান আহমেদ রোডের বাসিন্দা পোল্ট্রি ফিস ফিড মালিক সমিতির খুলনা বিভাগের মহাসচিব এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, খুলনাবাসীর দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফসল খুলনা ওয়াসা। জনগণের টাকায় ব্যাপক খোঁড়াখুড়ি ও অসহনীয় ভোগান্তির পর বিগ বাজেট পকল্পের সুপেয় পানির পরিবর্তে লবণাক্ত, নোংরা, ময়লা ও আয়রনযুক্ত ব্যবহার অনুপযোগী পানি নগরবাসীকে উপহার দিয়েই পতিমাসে টাকা আদায়ে ব্যস্ত কর্তারা। এই অন্যায়, অবিবেচনাপসূত কাজ মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে থাকে না নগরবাসীর অংশগ্রহণ। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা গা-ছাড়া ভাব। এতে ওয়াসার দায়িত্বশীলদের থাকে না মাথাব্যথা। সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই পারে ওয়াসার অনিয়ম রুখতে। এখন প্রয়োজন যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্বভাবে প্রতিবাদ করা।
ভুক্তভোগী নগরবাসী অনেকেই বলছেন, করোনার এই দুর্যোগ মুহূর্তে পায় বাসা-বাড়িতে খুলনা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির সাথে ময়লা আসছে এবং সেই পানি প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ওয়াসার লাইনের পানি থেকে কাদামাটিযুক্ত পানি বের হচ্ছে। পানি খাওয়া তো দূরের থাক, থালা-বাসন ও ঘর মোছার কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দুর্বিষহ হয়ে উঠছে নিত্যদিনের জীবন। বার বার কর্তৃপক্ষকে বলেও কাজ হচ্ছে না।
খুলনা ওয়াসার কর্মকর্তাদের জন্য ঢাকার মতো ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত তৈরি করে নগরবাসীর প্রতিবাদ করা উচিত বলেও অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরে বসবাস করে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ। তাদের সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও ভূ-গর্ভের ওপর চাপ কমাতে দুই হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনায় পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ওয়াসা। এতে অর্থায়ন করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ও এডিবি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত মধুমতী নদী থেকে পানি এনে পরিশোধন করে নগরীতে সরবরাহ করা হচ্ছিল।
খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ কুমার দাস বলেন, দুই দিন আগে মহানগরের বানরগাতিরি ডলফিনের মোড়ে বিটিসিএলের টেলিফোন লাইন মাটির নিচ থেকে নেওয়ার জন্য রাস্তা খোঁজার কারণে ওয়াসার মেইন পাইপ ফেটে যায়। যে কারণে ওয়াসার পানিতে ময়লা ঢুকে গেছে। তবে পাইপের লিকেজ ঠিক করা হয়েছে। নগরবাসীর অভিযোগ প্রায়ই এই সমস্যা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বিদ্যুৎ, বিটিসিএল বিভিন্ন সময় রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে, এতে ওয়াসার পাইপ ফেটে যায়। যার কারণে সমস্যা তৈরি হয়।
খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক এমডি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা অনেক সময় জানি না বিটিসিএল রাস্তা কেটে তাদের কাজ করার সময় ওয়াসার পাইপ ফাটিয়ে ফেলে। পরে আমরা খবর পেলে তা ঠিক করি।