আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ: শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলার কারনে। শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা স্কুল/কলেজ চলাকালীন সময়ে স্কুলে না গিয়ে শহরের আব্দুর রাজ্জাক পার্কে গুড়পুকুরের মেলায় বিভিন্ন স্টলে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। স্কুল ইউনিফর্ম পরে স্কুল চলাকালীন সময়ে মেলায় প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও অবাধে চলাচল করছে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা। মেলায় এসে যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন গোলযোগে। দায়িত্বরত আনসার সদস্যরাও নীরব ভূমিকা পালন করছে অনুসন্ধানে জানা যায়।
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেশ কুমার দাস বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছিলাম, তারা গোলোযোগও করেছিল। আমি স্কুলের দুই জন শিক্ষক কে পাঠিয়েছিলাম ওনারা এসে বললেন তারা পরিক্ষার্থী। কোন শিক্ষার্থী স্কুল চলাকালে মেলায় ঘোরা ফেরা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এবিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস,এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের দুই শিফটে ছাত্রীদের ক্লাস চলছে। আমারা ইতিমধ্যে জেনেছি স্কুল চলাকালে স্কুলের ইউনিফর্ম পরিহিত ছাত্রীরা মেলার বিভিন্ন স্থানে ঘোরা ফেরা করছে। আমারা শিক্ষকরা ছাত্রীদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ক্লাসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো, না শুনলে আমরা প্রয়োজন হলে পুলিশের সাহায্য নেব। শিক্ষার্থীদের দাবি থাকে স্কুলের শিক্ষকদের সাথে সবাই মিলে মেলায় যাওয়ার। কিন্তু গুড়পুকুরের মেলায় সেটা সম্ভব হয় না। কারন এ মেলাটি দীর্ঘ দিন ধরে চলে এরং রাত পর্যন্ত চলে এজন্য আমরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যেতে বলি। আমারা সপ্তাহ ব্যাপি মেলায় যেমন, ২১শে বইমেলা বৃক্ষ মেলা বিজয় দিবসের মেলা ইত্যাদি সময়ে শিক্ষকরা ছাত্রীদের নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করি।
নাবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক গাজী বলেন, ছাত্রীরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্কুলে না এসে মেলায় ঘোরা ফেরা করছে সেটা অভিভাবকদের দেখার দায়িত্ব। স্কুলে আসার পর আমাদের দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন বর্তমান সময়ে শিক্ষকরা ছাত্র ছাত্রীদের শাসন করলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও হামলার শিকার হচ্ছে। তাই এধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল ইউনিফর্ম পরে মেলায় ঘোরা ফেরা করলে ঐ স্কুলের সুনাম ক্ষুন্ন হয়।
এবিষয়ে শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, মেলার কারনেই ছেলে মেয়েরা ঠিক মত পড়াশোনার দিকে মনোযোগ দিতে পারছেনা। অনেকে অভিযোগ করেছেন ছেলে স্কুলে না গিয়ে মেলায় ঘোরা ফেরা করছে বন্ধুদের সাথে। আমারা গরীব মানুষ আমাদের দিন আনা দিন খাওয়া। অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে হয়। এসব মেলা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে পড়াশোনার কি হবে।
মুনজিতপুর এলাকার আরেকজন অভিভাবক জানান, দীর্ঘদিন করোনা মহামারীর কারণে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় অনেক ঘাটতি পড়ে আছে। সেগুলো কাভার করার জন্য পড়াশোনা অধিক পরিমাণে করতে হবে। কিন্তু বাড়ির পাশে দীর্ঘদিন মেলা চললে তাতে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। মেলার বিভিন্ন স্থানে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত লাউডস্পিকারে গান বাজনা চললে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না।
এবিষয়ে মেলার ইজারাদার মানিক শিকদার বলেন, আনছার ও সেচ্ছাসেবীরা কাজ করছে। এবিষয়ে মেলার একজন আনছার সদস্য বলেন ছাত্র ছাত্রীদের স্কুল চলাকালে মেলায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। আমারা নিষেধ করলে মানছে না কেউ।
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে গুড়পুকুরের মেলায় শিক্ষার্থীরা, বন্ধের দাবি
পূর্ববর্তী পোস্ট