
শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর বাজার
আহাদুর রহমান (জনি): আর কিছু দিন পরই ঈদ-উল-আযহা। মুসলমানরা এ দিন মহান আল্লাহ তায়লার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করে। সেই জন্য আযহার কিছু দিন আগে থেকেই জমে উঠে কোরবানি যোগ্য পশুর হাট। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদ পালনের পরদিন বাংলাদেশে ঈদ পালন করতে দেখা যায়। তাই মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য ৩১ জুলাই ঈদ হলে পরদিন ১লা আগস্ট বাংলাদেশে ঈদ হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী প্রস্তুত আছে ৫৯২৪৬টি পশু যা গত বারের চেয়ে ২৯৬৭টি পশু বেশি।
ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে জেলা ব্যাপী ১২,৭৩৩ জন খামারির কাছে মোট ৫৯২৪৬টি বিভিন্ন প্রকার কোরবানি যোগ্য পশু আছে। জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী ৩১,২৯০টি গরু, ৯টি মহিষ, ২৫২২১টি ছাগল ও ২৭২৬টি ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে।
সখের, মৌসুমী ও বাণিজ্যিক খামারিরা এসব গরু পালন করছেন। তবে বিগত বাজার গুলোয় লোকসানের মুখে পড়ায় এখন আর ক্ষতিকর স্টেরয়েড বা অন্য কোন ধরনের মোটাতাজা করণ ওষুধ খাওয়াচ্ছেন না খামারিরা। সাধারণত ক্ষুদ, কুড়া, পালিস, ভুসি, খৈল ইত্যাদির সাথে ঘাস দিয়ে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। তবে এবার ভারত থেকে গরু পাচার
বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতির মুখে আছেন খামারিরা।
সদরের কাশেমপুর গ্রামের গরু খামারি রনি জানান, ‘এবছর আমি ছয়টি গরু পালন করছি। প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত খাদ্য দিয়েই আমি মোটাতাজা করছি। প্রাকৃতিক খাদ্যের খরচও কম ফলও ভাল। বাজার অনেক খারাপ। খরচের টাকাও উঠবেনা। এর মধ্যে কোন রকমে খরচের টাকা তুলে দুইটি বিক্রি করেছি। আরও দুইটি রাস্তায় নিয়ে বিক্রির আশায় বসে আছি।
দেবনগর গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, ‘কোরবানিতে বিক্রি করার জন্য আমার চারটি গরু আছে। ইতোমধ্যে আমি দুইট প্রায় পঞ্চাশ হাজার লসে বিক্রি করে দিয়েছি। বাকি দুটি বিক্রির অপেক্ষায় আছে। বাজার খারাপ।
আরেক খামারি শাহিনুর রহমান বলেন, আমি চারটি গরু পালন করেছি। এখনও একটিও বিক্রি করতে পারিনাই। গো-খাদ্য উচ্চ মূল্য ও বাজার খারাপ হওয়ার কারণে ক্ষতির আশংকা করছি।
বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায় কোরবানি যোগ্য পশুর বেচা-বিক্রি খুব বেশি ভাল না। স্বাভাবিক ভাবেই তাই দামও একটু কম। তবে শেষ সময়ে এসে বেচা-বিক্রি একটু বেড়েছে।
তবে খামারি সহ গরুর ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন অবৈধ ভাবে ভারত থেকে গরু আসার কারণে ক্ষতির মুখে পড়বে তারা। এদিকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনেকেই কোরবানি করছেননা। ফলে পশুর চাহিদাও বাজারে কম। দামও তুলনামূলক কম।
ভারত থেকে অবৈধ ভাবে গরু আসা ঠেকানো প্রসংঙ্গে ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক মোহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘অবৈধভাবে যেন গরু না আসে তাই আমরা টহল জোরদার করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে চেকপয়েন্ট বসিয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। ’
এদিকে পশুর হাটে রুগ্ন ও স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গরু কেনা থেকে ক্রেতাদের বাচাতে জেলা প্রানি সম্পদ দপ্তর থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ব্যবস্থা। এ লক্ষ্যে প্রত্যেকটি হাট বাজারে থাকবে কড়া নজরদারি ও মেডিকেল টিম।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অসুস্থ ও বিভিন্ন স্টেরয়েড ব্যবহার করে মোটাতাজা প্রাণি চিহ্নিত করতে প্রতিটি পশুর হাটে মেডিকেল টিম থাকবে। ক্রেতাদের মনে সন্দেহ হলেই মেডিকেল টিমের মাধ্যমে যাচাই করে প্রাণি ক্রয় পরামর্শ দেন তিনি।’