নিজস্ব প্রতিবেদক: কালিগঞ্জের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের এক অনন্য প্রতীক দত্ত সম্প্রদায়ের পরিত্যক্ত বাড়ি ‘রামজননী ভবন’ বর্তমানে কাষ্টম গোডাউন অফিস। ব্রিটিশ শাসনামলে উপজেলার বসন্তপুরে চন্দ্র ও দত্ত সম্প্রদায়ের বংশধররা জমিদার না হলেও তারা প্রচুর জায়গা জমির মালিক ছিলেন। উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে অন্যতম সীমান্তবর্তী বসন্তপুর কাষ্টম গোডাউন রামজননী ভবনের সামনে পুরাতন কাষ্টম গোডাউনের ম্মৃতি-চিহৃ। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত বাড়িটির চারদিকে লতা পাতায় ঢেকে জরাজীর্ণ বাড়িটির কিছু অংশ কালের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজা প্রতাপাদিত্যে ও বসন্ত রায়ের স্মৃতিবিজড়িত কালিগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর গ্রাম।
ততকালীন রাজা বসন্ত রায় উপজেলার এই গ্রামে এসে ঘাঁটি গাড়েন।
বসন্ত রায়ের নাম অনুসারে গ্রামের নাম বসন্তপুর নামকরণ করা হয়।
বাংলা ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দ তৎকালীন প্রভাবশালী মাঘন চন্দ্র, অসিম চন্দ্র, হিমাংস চন্দ্রসহ বংশধররা নাম না জানা বিশাল ভবন (যেটি পরিত্যক্ত বাড়ি) ও বটু দত্তসহ বংশধররা ‘রামজননী ভবন’ নির্মান করেন। l
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত হলে এখান থেকে তারা অন্যত্র চলে যায়।
তাদের বংশধরদের কিছু লোক এখনো দেশে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন বলে স্থানীয়রা এ প্রতিবেদককে জানায়।
তখনকার সময় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কে বসন্তপুর পোর্ট ছিল অন্যতম।
নদীবন্দর থাকাকালীন এখানে কাস্টমস অফিস স্থাপনের জন্য তৎকালীন প্রভাবশালী জনৈক ব্যক্তিদের ফেলে রাখা চন্দ্রদের পরিত্যক্ত বাড়িটি কাষ্টম গোডাউন হিসাবে ব্যবহার করা হতো।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাতের আধারে একদল দূর্বৃত্তরা বসন্তপুর কাষ্টম গোডাউনে ডাকাতি ও লুটপাট হয়েছিল। পরবর্তীতে দত্তদের রামজননী ভবন’কে বেছে নেয়া হয়। তারপরও বেশ কয়েক বছর পোর্ট চালু ছিল। কিন্তুু অঙ্গাত কারণে কয়েক যুগ যাবৎ বসন্তপুর নদী বন্দরটি বন্ধ আছে। সেই থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এরপর রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে পরিত্যক্ত ভবনে শেওড়া জমে যায়, জম্মেছে ছোট বড় আগাছা। অনেকে দিনের বেলায়ও বাড়ির ভেতরে যেতে ভয় পায়। স্হানীয় প্রবীণ ইতিহাসবিদ আব্দুল হামিদ গাজী, ইয়া মোল্লা, সন্তোষ শর্মা সহ এলাকাবাসী জানান, ততকালীন বসন্তপুরের চন্দ্র ও দত্ত সম্প্রদায়ের পরিত্যক্ত বাড়িটি বসন্তপুর তথা কালিগঞ্জের ঐতিহ্য। এখানকার আশে পাশে তেমন কোথাও দর্শনীয় স্থান না থাকায় প্রাচীন এই বাড়িগুলো এক নজর দেখতে এখনো বিভিন্ন স্থান থেকে সুন্দর্য পিপাসুরা ছুটে আসেন। সরকারি ও বেসরকারি কোনো ধরনের তদারকি না করায় পাশ্ববর্তী বহিরাগত বখাটে, মাদকসেবীদের কারণে আগত দর্শনার্থীরা বিব্রত অবস্থায় পড়েন। তাই স্থানীয়রা মনে করেন, বাড়িটি সরকারি বা বেসরকারি ভাবে তদারকির আওতায় এনে পুনরায় সংস্কার করে একটি সুন্দর পর্যটন এলাকা ও পুনরায় নদীবন্দর চালু করা করা সম্ভব। এই বাড়িটি অযত্নে আর অবহেলায় ধ্বংসের পথে। হয়তো কিছুদিন পর এ চিহ্নটুকুও আর থাকবে না। এলাকাবাসীর দাবি এই ঐতিহ্যকে সরকারিভাবে সংরক্ষণ ও কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছায় এটি বাস্তবায়ন করা হোক। এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিফাত উদ্দিন বলেন, জমিদার বাড়ির বিষয়টি শুনেছি। শনিবার বসন্তপুর কাষ্টম গোডাউনে বনভোজনে যোগ দেবো। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে অবহিত করব। জমিদার বাড়িটির সংস্কারের মধ্য দিয়ে একে পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা যায় কিনা বিষয়টি বিবেচনায় নেব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক রাসেল বলেন, পুরাতন জমিদার বাড়িসহ এলাকার সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।